Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুর্ঘটনায় প্রশ্নের মুখে সড়ক সংস্কার

প্রথম দফায় নন্দকুমারের কাছে হলদিয়া–মেচেদা ৪১ জাতীয় সড়কের সংযোগস্থল থেকে বাজকুল পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এবং নাচিন্দা থেকে রামনগরের পিছাবনি পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হয়েছে।

জাতীয় সড়কের দু’পাশে এই খোঁড়ার ফলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। নন্দকুমারের কাছে। —নিজস্ব চিত্র।

জাতীয় সড়কের দু’পাশে এই খোঁড়ার ফলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। নন্দকুমারের কাছে। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দ মণ্ডল
নন্দকুমার শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮ ০১:৪৩
Share: Save:

পর্যটকদের সুবিধার জন্য কলকাতা থেকে দিঘাগামী রাজ্য সড়কের নন্দকুমার থেকে ওড়িশার জলেশ্বর পর্যন্ত অংশ জাতীয় সড়কে উন্নীত করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে। ১১৬ বি নামে ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ ও সংস্কারের পরিকল্পনাও নেয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। প্রথম দফায় নন্দকুমারের কাছে হলদিয়া–মেচেদা ৪১ জাতীয় সড়কের সংযোগস্থল থেকে বাজকুল পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এবং নাচিন্দা থেকে রামনগরের পিছাবনি পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হয়েছে।

কিন্তু ঢিমেতালে কাজ হচ্ছে বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে। এমনকী এর জন্য দুর্ঘটনাও অভিযোগ তুলেছেন এলাকার মানুষ। বুধবার ভোরে মারিশদায় বাস-গাড়ির সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যুতে ফের সড়ক সম্প্রসারণে কাজের পদ্ধতি আর ঢিলেমিকেই দায়ী করলেন এলাকার মানুষ।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়কের এই অংশ ১৭ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৩৩ ফুট চওড়া করা হচ্ছে। এর জন্য ২৪৩ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। কাজের সময়সীমা ধরা হয়েছে দু’বছর। নন্দকুমার থেকে নরঘাট এবং কাঁথির মারিশদা এলাকায় সম্প্রসারণ কাজ চলছে। কিন্তু কাজের গতি বেশ শ্লথ বলে গাড়ি চালক থেকে বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন।

কাজ ঢিমেতালে চলায় বর্ষায় বিভিন্ন অংশে জল জমে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে গিয়েছে বলে পুলিশের অভিযোগ। নন্দকুমার থানার পুলিশ জানিয়েছে, নন্দকুমার হাইরোড মোড় থেকে নরঘাট পর্যন্ত সড়কের দু’পাশ খোঁড়া হয়েছিল গত বছর দুর্গাপুজোর পরেই। ওই অংশে গাড়ি যাতায়াতের মূল রাস্তার পাশে গভীর খাদ থাকায় গাড়ি চলাচলে নজরদারি চালাতে হচ্ছে। যে অংশে কাজ এখনও শুরু হয়নি সেখানে ফাঁকা রাস্তা পেয়েই গাড়িগুলি গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে বলে পুলিশের অনুমান।

কাজ ঢিমেতালে চলা নিয়ে ক্ষুদ্ধ রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও। কাঁথির বাড়ি থেকে প্রায়ই এই সড়ক ধরে যাতায়াত করতে হয় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘‘ওই সড়কে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত। সড়ক সম্প্রসারণের কাজের গতি ধীর। এ বিষয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

শুধু কাজে ঢিলেমিই নয়, যে ঠিকাদার কাজের দায়িত্বে তাঁর কাজ করার দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, জাতীয় সড়ক সংস্কার বা সম্প্রসারণের কাজে যে ধরনের পরিকাঠামো ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন তা ঠিকাদার সংস্কার না থাকাতেই এই ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে।

রাজ্য পূর্ত দফতরের (জাতীয় সড়ক) সুপারিন্টেন্ডেন্ট সুস্মিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ ধীর গতিতে হচ্ছে এটা ঠিক। তবে এতে ঠিকাদার সংস্থার গাফিলতি নেই। রাস্তার দু’পাশে পানীয় জলের পাইপ সরানোর কাজে দেরির কারণে এটা হচ্ছে। আর বর্ষা নেমে যাওয়াতেও কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।’’

ঠিকাদার সংস্থার কর্তা রামচন্দ্র পাল বলেন, ‘‘নন্দকুমার মোড় থেকে নরঘাট পর্যন্ত প্রথম তিন কিলোমিটার সম্প্রসারণ ছাড়াও দু’পাশে সার্ভিস রোড ও নিকাশি তৈরি হবে। এর জন্য ওই এলাকায় দু’পাশে মাটি খোঁড়া হয়েছে। দ্রুত কাজ করা হচ্ছিল। কিন্তু পানীয় জলের পাইপ লাইন সরানোয় দেরি হওয়ায় কাজের গতি কমেছে। তবে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে নরঘাট পর্যন্ত কাজ শেষ হয়ে যাবে।’’

মৃতেরা মুশির্দাবাদের বাসিন্দা হওয়ায় শোকপ্রকাশ করেন জেলার কংগ্রেস নেতা ও প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘দিঘা বেড়াতে যাওয়ার পথে মুর্শিদাবাদের ৬ জনের মৃত্যু আমাকে মর্মাহত করেছে। ওঁরা সকলে আমার পরিচিত। একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। স্বজনহারা পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road condition Digha দিঘা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE