Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গালিগালাজ-ধাক্কা, বাড়ি যেতে বলায় ক্ষিপ্ত রূপা

রীতিমতো ফুঁসছেন তিনি। বলে কি না, বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে! শনিবার ভোট দিতে গিয়ে ও পরে দলের প্রার্থীকে নিয়ে ভোটকেন্দ্র দেখতে গিয়ে দফায় দফায় হেনস্থা হতে হল রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে। কোথাও জুটল শাসক দলের কর্মী-বাহিনীর বিদ্রুপ। কোথাও সরাসরি গালিগালাজ, এমনকী ধাক্কাও। এরই উপরে ওই পরামর্শ। তাতেই সব চেয়ে বেশি চটেছেন বিজেপির এই অভিনেত্রী-নেত্রী।

ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন রূপা। শনিবার সোনারপুরে। ছবি: দেবাশিস রায়।

ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন রূপা। শনিবার সোনারপুরে। ছবি: দেবাশিস রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সোনারপুর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২১
Share: Save:

রীতিমতো ফুঁসছেন তিনি। বলে কি না, বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে!
শনিবার ভোট দিতে গিয়ে ও পরে দলের প্রার্থীকে নিয়ে ভোটকেন্দ্র দেখতে গিয়ে দফায় দফায় হেনস্থা হতে হল রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে। কোথাও জুটল শাসক দলের কর্মী-বাহিনীর বিদ্রুপ। কোথাও সরাসরি গালিগালাজ, এমনকী ধাক্কাও। এরই উপরে ওই পরামর্শ। তাতেই সব চেয়ে বেশি চটেছেন বিজেপির এই অভিনেত্রী-নেত্রী। জানিয়েছেন, ‘অত সহজে’ তিনি দমবেন না। রূপাকে হেনস্থার ঘটনায় বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, ‘‘দ্রৌপদীর গায়ে হাত দেওয়ায় কৌরবদের কী হয়েছিল, তা মমতার মনে রাখা উচিত। নির্বাচন গণতন্ত্রের উৎসব। মমতার অধীনে তা সন্ত্রাসের উৎসবে পরিণত হয়েছে।’’
রূপােক দল কলকাতায় মেয়র পদে প্রার্থ়ী করার কথা ভেবেছিল। হয়নি মহানগরীর ভোটার লিস্টে নাম না থাকায়। সেখানে পুরভোটে প্রচারে গিয়ে শাসক দলের হাতে হেনস্থা হতে হয় তাঁকে। শনিবার রূপা ভোট দিলেন রাজপুর-সোনারপুর এলাকার একটি স্কুলে। সেখানে জুটল শাসক দলের কর্মীদের বিদ্রুপ। তাদের উল্লাস আর টিপ্পনিতে ছড়াল উত্তেজনা। পরে দলের এক প্রার্থীকে নিয়ে অন্য এক ভোটকেন্দ্রে রওনা দিতেই ঘিরে ধরে বাইকবাহিনী। রূপার অভিযোগ, অশ্রাব্য গালিগালাজই শুধু করা হয়নি, তাঁকে ধাক্কাও দিয়েছে তৃণমূলের লোকজন। বিজেপি নেত্রী তখনও জানেন না, এ দিনই আর এক দফা হেনস্থা অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য।
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার জগদ্দল কলোনি জুনিয়র হাইস্কুলে গিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়ান রূপা। তাঁকে দেখেই জান্তব উল্লাস শুরু করে দেয় তৃণমূল-বাহিনী। ভোটকেন্দ্রের মধ্যেই স্লোগানও ওঠে। উত্তেজনা ছড়াচ্ছে দেখে পুলিশ তাঁকে সোজা ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। রূপা তাতে রাজি না হওয়ায় ভেসে আসে টিপ্পনি, ‘‘ভোট দিতে এসে বাজার গরম করছে।’’ তাঁকে দেখে যারা বাজার গরম করছিল, সেই শাসক দলের রক্তচোখ উপেক্ষা করে স্কুলের ১০১ নম্বর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘কলকাতা পুরভোটের চেয়েও জেলায় বেশি সন্ত্রাস চলছে। বেশির ভাগ জায়গায় মানুষ তাঁর অধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। কয়েক দিন আগে থেকে শাসক দল সব এলাকাতেই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। বিরোধীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আপনারা নিজেরাই তা দেখছেন।’’
মিনিট দশেক লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার পর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থী শম্পা দেবনাথকে নিয়ে জগদ্দল এলাকারই কনক বসু স্কুলের ভোটকেন্দ্রের দিকে রওনা হন রূপা। এ বার আর দূর থেকে মন্তব্য ছুড়ে দেওয়া নয়, সরাসরি তাঁকে ঘিরে ধরে বাইকবাহিনী। ৭-৮টি মোটরবাইকের প্রতিটিতেই প্রায় তিন জন করে। শুরু হয় অশ্রাব্য গালিগালাজ। রূপার অভিযোগ, ‘‘আমাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে তৃণমূলের কর্মীরা। এমন ভাবে যাতে পড়ে যাই। ওরা বিজেপি কর্মীদেরও ধাক্কা মারতে শুরু করে।’’
রূপার কথায়, ‘‘আমি পুলিশকে জিজ্ঞেস করেই এগোচ্ছিলাম। ওরা পুলিশের সামনেই চিৎকার করে বলতে থাকে, এখানে এসেছেন কেন, বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।’’ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে বুঝে ওই ওয়ার্ডেরই কে এম রায়চৌধুরী রোডে নিজের বাড়িতে ফিরে যান তিনি। ক্ষোভে তখন রীতিমতো উত্তেজিত। বারবার বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাকে বলছে, বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে!... অত সহজে আমি দমে যাব না। যদি বেআইনি দেখি, একশো বার যাব। আমি অন্যায় করব না। অন্যায় সহ্যও করব না।’’ কিছু সময় বাড়িতে কাটিয়ে ফের নিজের ভোটকেন্দ্রে গেলে একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে।
ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সোনালী রায় রূপার কোনও অভিযোগ মানতে চাননি। বরং তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘কলকাতায় ভোটে দাঁড়াতে পারেননি। এখন এখানে এসে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছেন।’’ রূপা সেখানে গিয়েছেন কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। রূপার দাবি, ‘‘ওঁরাই বা এখানে এলেন কী করে। ওঁরা যদি আসতে পারেন, আমি কেন পারব না!’’
ঘণ্টা চারেকের মধ্যে তিন দফায় শাসক দলের চোখ রাঙানির মুখে পড়ে ও নানা ভাবে হেনস্থা হওয়ার পরে ভোটপর্ব মেটার মুখে রূপা গাড়িতে করে চলে যান বারুইপুরের দিকে। যাঁর সাক্ষী থাকলেন কয়েক হাজার ভোটার। আর ‘নিধিরাম সর্দার’ পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE