রাজ্য বিজেপির দ্রুত শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)।
মুখে ভোটের কথা নয়। বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আস্থা অর্জন করে ভোট ব্যাঙ্ক বাড়াতে চাইছে বিজেপি। স্থানীয় ইস্যুতে অন্য বিরোধী দলগুলোর থেকে আগে ঝাঁপিয়ে এলাকাবাসীকে কাছে টানার চেষ্টা করছে পদ্ম-শিবির। রাজ্য বিজেপির এই শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)।
রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় বিজেপির ভিত মজবুত না হলেও, সেখানে কিন্তু আরএসএস-এর যথেষ্ট প্রভাব দেখা যাচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলে তার প্রমাণ মিলেছে। যদিও সেখানে বজরঙ্গ দলের প্রভাবও ছিল। তবে সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। একই কৌশলে লোকসভা ভোটেও বিজেপি ভাল ফল করতে চায়।
দক্ষিণবঙ্গের মতোই উত্তরে আরএসএস-এর শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে। শুধুমাত্র উত্তর দিনাজপুরেই সঙ্ঘের ১৫০টি শাখা সক্রিয় ভাবে কাজ করছে বলে তাদের দাবি। ইসলামপুরের দাড়িভিট আগে থেকেই চষে রেখেছিল সঙ্ঘ। ফলে দাড়িভিট স্কুল-কাণ্ডে গুলিচালনার ঘটনার পর, মানুষের ক্ষোভের ফসল ঘরে তুলেছে বিজেপি। ইসলামপুর ছাড়াও গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, করণদিঘি, হেমতাবাদ— একাধিক এলাকা এখন সঙ্ঘের শক্ত ঘাঁটি।
আরও পড়ুন: ‘ভুঁইফোড় গুন্ডাসর্দারদের’ হাতে দেশ চলবে, প্রশ্ন মমতার
সঙ্ঘ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রচারের সুবিধার জন্যে রাজ্যকে দক্ষিণ এবং উত্তরে ভাগ করে সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। দক্ষিণবঙ্গে ৩৩টি সাংগঠনিক জেলায় তাদের প্রায় দু’হাজার শাখা রয়েছে। গত বছর এই সংখ্যাটা হাজারখানের মতো ছিল। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গকে ১৫টি সাংগঠনিক জেলায় ভেঙে মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় আরএসএস। উত্তরবঙ্গে সঙ্ঘের শাখা সংখ্যা ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০তে দাঁড়িয়েছে বলে তাদের দাবি। গত বছর এটাই ছিল প্রায় ৬০০। আরএসএস নেতা তথা উত্তরবঙ্গের প্রান্ত প্রচারপ্রমুখ সাধন পাল বলেন, ‘‘উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর এবং রায়গঞ্জকে আলাদা সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করা হয়েছে। এই দুই জেলায় ইতিমধ্যে ব্যাপক সাফল্য এসেছে এবং শাখার সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে।’’ একই রকম ভাবে কোচবিহারকে গুরুত্ব দিয়ে দু’ভাগে ভাগ করা হচ্ছে— কোচবিহার এবং পশ্চিম কোচবিহার। দার্জিলিংকে ভেঙেও দার্জিলিং এবং শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা করা হয়েছে বলে সঙ্ঘের দাবি।
কী ভাবে কাজ করছে সঙ্ঘ?
সঙ্ঘ নেতৃত্বের দাবি, স্থানীয় মানুষদের ছোটখাটো সমস্যায় ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে শুরু করে গ্রামবাসীদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পড়াশোনা, বিয়ে, এমনকি যাঁদের নিয়মিত খাবার জোটে না তাঁদের মুখে খাবারও তুলে দিচ্ছে আরএসএস। আর তাতেই স্থানীয় মানুষের সমর্থন আদায় করতে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে সঙ্ঘ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলে ভাল ফল করার পর, এখন উত্তরবঙ্গের আদিবাসী, উদ্বাস্তু, জনজাতি, চা-বাগানের শ্রমিক ছাড়াও বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখছে আরএসএস।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যে আরএসএস-এর শাখার সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। সাধন পাল বলেন, “আমাদের আদর্শের সঙ্গে অনেকে একমত। উত্তরবঙ্গের যুবক-যুবতীদের মধ্যে সঙ্ঘের সদস্য হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ রয়েছেন। যেখানেই মানুষের সমস্যা হচ্ছে, আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ছি। তাদের দৈনন্দিন সব রকম সমস্যার পাশে রয়েছি। আর্থিক ভাবে দুর্বল পরিবারগুলোর পাশেও আছি আমরা।” তাঁর কথায়: “কেউ বলেন, আমরা বিহারী, আমরা বাঙালি, আমরা মাড়োয়ারি। কেউ আবার বলেন, আমি হিন্দু, আমি মুসলমান। কিন্তু, কত জন বলেন আমরা ভারতীয়? আমরা এই সোজা বিষয়টি উত্তরবঙ্গের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।”
আরও পড়ুন: সব রাজ্যে প্রচার করুন বাংলার পরিস্থিতির কথা: দিল্লিতে বার্তা অমিত শাহের
আরএসএস-এর সংগঠন মজবুত হওয়ায় কি বিজেপির সুবিধা হচ্ছে? সরাসরি জবাব না দিয়ে সাধন পাল বলেন, “ভাল কাজের জন্য কোনও দলের সুবিধা হলে, হবে! বিজেপির সুবিধা হলে ক্ষতি তো কিছু নেই।”
সিপিএম, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের অভিযোগ, আরএসএস-বিজেপি হিন্দুত্বের জিগির তুলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। যদিও বিজেপির শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এলাকার নেতা অভিজিৎ রায়চৌধুরি বলেন, “সিপিএমের সময়েও এতটা দুর্নীতি হত না। মানুষের হাল এত খারাপ হয়নি। তৃণমূলের উপর সমাজের সব স্তরের মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। সিপিএম নেই, তাই বিজেপির উত্থান হচ্ছে। আমাদের উপর ভরসা রাখছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ।”
ইসলামপুরের ঘটনার পর নতুন করে আন্দোলনের রসদ খুজে পেয়েছেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। উত্তর দিনাজপুরের মাটি শক্ত করতে দাড়িভিট ইস্যুকে কোনও ভাবেই হাতছাড়া করতে চাইছেন না তাঁরা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফেও সে রকম নির্দেশ রয়েছে। ইসলামপুরে গিয়ে সভা করার কথা রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং অন্য নেতৃবৃন্দের। প্রয়োজনে সেখানে যেতে পারেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy