শাসক দলের সংগঠনে ইতিউতি গোষ্ঠী-বিরোধের অভাব নেই। কিন্তু সেই দলের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে এবং প্রশাসনিক স্তরেও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব চলছে কি না, বৃহস্পতিবার বিভিন্ন দাবিতে বিদ্যুৎকর্মীদের আন্দোলনকে ঘিরে উঠে গেল সেই প্রশ্ন।
কর্মীদের দাবি দ্রুত না-মানলে বিদ্যুৎ ভবন ঘেরাও করে রাখা হবে বলে এ দিন কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল পরিচালিত বিধাননগর পুরসভার মেয়র, বিধায়ক তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ কর্মী ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী সভাপতি সব্যসাচী দত্ত। তাঁর সেই ঘোষণাকে সমর্থন করে কর্মীদের একজোট হয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানালেন তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ওই ইউনিয়নের সভাপতি মদন মিত্র। শাসক দলের ওই দুই নেতা নিজেদের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশে জানিয়ে দেন, তাঁর দফতর অবিলম্বে কর্মীদের দাবি না-মেটালে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হবেন।
বিদ্যুৎ ভবনের শীর্ষ স্তরে অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন সব্যসাচীবাবু। বলেছেন, এই বিষয়টিও জানানো হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।
বেতন কমিটি গঠন করে বেতন বৃদ্ধি, বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটানো ইত্যাদি দাবিতে এ দিন বিদ্যুৎ ভবনের সামনে সভা ডেকেছিল কর্মী ইউনিয়ন। সেই সভামঞ্চেই বক্তৃতা দিতে গিয়ে সব্যসাচীবাবু হুঁশিয়ারির সুরে জানান, প্রয়োজনে ঘেরাও করে রাখা হবে বিদ্যুৎ ভবনের কর্তাদের। রাস্তা দখল করে লঙ্গরখানা খুলে আন্দোলনরত কর্মীদের খিচুড়ি খওয়ানো হবে। কেউ কিছু করতে পারবে না। অনেকেই মনে করছেন, সব্যসাচীবাবুর হুমকি বিদ্যুৎ ভবনের শীর্ষ কর্তাদের উদ্দেশে তো বটেই, অংশত খোদ বিদ্যুৎমন্ত্রীকেও।
সেটা আরও স্পষ্ট মদনবাবুর বক্তব্যে। কারও নাম না-করেই তিনি সব্যসাচীবাবুর চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘‘মিনিস্টার ইজ আ টেম্পোরারি পোস্ট। আজ যাঁরা মন্ত্রী আছেন, যে-কোনও সময়ে এক ইশারায় কেটে যেতে পারে (চলে যেতে পারে তাঁদের মন্ত্রিত্ব)।’’ তাঁদের নেত্রী মমতা সব সময়েই খেটে খাওয়া মানুষের পাশে থেকেছেন। সেই দলের মন্ত্রী হিসেবে শোভনদেববাবু কর্মীদের দাবিদাওয়া মিটিয়ে দেবেন বলেই আশা প্রকাশ করেন মদনবাবু।
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত ভাবেই সব ধরনের ঘেরাও-রাজনীতির বিরুদ্ধে। শোভনদেববাবু সেই মমতারই বিদ্যুৎমন্ত্রী। আর মদনবাবু তাঁর দলেরই প্রাক্তন বিধায়ক এবং সব্যসাচীবাবু বর্তমান বিধায়ক তথা বিধাননগরের পুরপ্রধান। প্রকাশ্য সভায় নিজেদের বিদ্যুৎমন্ত্রীকে তাঁদের এই হুমকি কেন, তা নিয়ে বিদ্যুৎ ভবনের অন্দরমহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এটা দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রকাশ নয় তো?
সভার পরে মদনবাবু আর সব্যসাচীবাবু দু’জনেই অবশ্য জানান, বিদ্যুৎমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের কোনও বিরোধ নেই। শোভনদেববাবু দীর্ঘদিনের শ্রমিক আন্দোলনের নেতা। তাঁদের আশা, কর্মীদের অভাব-অভিযোগ মেনে নেবেন মন্ত্রী।
বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেববাবু বলেন, ‘‘আমি কর্মীদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সহানুভূতিশীল। তবে মুখ্যমন্ত্রী সব সময়েই বলেন, কাজ করেই আন্দোলন করতে হবে কর্মীদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy