সদানন্দ গগৈ
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়। সারদা গোষ্ঠীর তছরুপের জাল ছড়িয়ে ছিল আরও কয়েকটি রাজ্যে। যেমন অসম। সিবিআই বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে জানায়, ওই অর্থ লগ্নি সংস্থা শুধু অসম থেকেই ৫০০ কোটি টাকা লুঠ করেছে।
সিবিআইয়ের অভিযোগ, অসমে ব্যবসা বাড়াতে যে-তিন মূর্তি সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে সাহায্য করেন, তাঁরা হলেন জনপ্রিয় গায়ক সদানন্দ গগৈ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহ এবং ওই রাজ্যের প্রাক্তন পর্যটনমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। সারদার ব্যবসা বাড়াতে সদানন্দ তাঁর জনপ্রিয় মুখকে ব্যবহার করেছেন বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ। সিবিআই এ দিন সদানন্দের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে। হাইকোর্ট জামিনের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে।
সারদা কাণ্ডে ধৃত সদানন্দের জামিনের জন্য এ দিন বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় ও অনিন্দ্য মিত্র। অভিযুক্তের আইনজীবীরা জানান, তাঁদের মক্কেল ১৮৮ দিন ধরে জেল-হাজতে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ করেছে সিবিআই। তার পরে সদানন্দের বিরুদ্ধে নতুন কোনও তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি তারা। জেলে গিয়েও অভিযুক্তকে জেরা করেননি তদন্তকারীরা। আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত জামিন পেতেই পারেন বলে সওয়ার করেন দুই কৌঁসুলি।
জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে সিবিআইয়ের আইনজীবী কে রাঘবচারুলু জানান, সারদা-প্রধান সুদীপ্ত অসমে ব্যবসা করতে ঢোকেন সদানন্দের হাত ধরে। সদানন্দই সুদীপ্তের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ এবং অসমের প্রাক্তন পর্যটনমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে।
সিবিআইয়ের আরও অভিযোগ, অসমের রাজনৈতিক নেতা, আমলা ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে সুদীপ্তের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন সদানন্দ। অসমের ‘আইকন’ সদানন্দ সারদা গোষ্ঠীর ব্যবসার কাজে পুলিশি ঝক্কি-ঝামেলা সামলানোর জন্যই পুলিশকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন সুদীপ্তের। সিবিআইয়ের দাবি, তারা সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নামার পরেই অসম পুলিশের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল আত্মহত্যা করেন। এটা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে সুদীপ্তের যোগাযোগের বড় প্রমাণ।
ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি এ দিন সিবিআইয়ের আইনজীবীর কাছে বারবার জানতে চান, তদন্তকারীরা এখনও অভিযুক্তকে জেল-হাজতে রাখতে চাইছেন কেন? অভিযুক্তকে জামিন দিলে কী অসুবিধা হবে, তা-ও জানতে চায় ডিভিশন বেঞ্চ।
সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, সদানন্দকে জেরা করে সারদা কাণ্ডে মাতঙ্গ ও হিমন্তের জড়িত থাকার অভিযোগ মেলে। সেই সূত্রে মাতঙ্গকে গ্রেফতার করা হয় জানুয়ারিতে। মাতঙ্গ এখন জেল-হাজতে আছেন। তদন্তকারীরা জেরা শুরু করেছেন হিমন্তকেও।
অসমে সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত এখনও প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে অসমের আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধেও। সদানন্দকে জামিন দেওয়া হলে তিনি জেল থেকে বেরিয়ে সেই সব প্রভাবশালী ব্যক্তিকে সতর্ক করে দিতে পারেন। নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তদন্তেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারেন তিনি।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীর দাবি, সারদা কাণ্ডের তদন্তে রাজেশ বজাজ, অঞ্জন দত্ত, সঞ্জয় জৈন, আব্দুল করিমের মতো অসমের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাতে বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। সেই তথ্য তদন্তকারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সদানন্দ জামিন পেয়ে গেলে আরও তথ্য উদ্ধারে অসুবিধা হতে পারে বলে জানান সিবিআইয়ের কৌঁসুলি।
দু’পক্ষের সওয়াল শুনে সদানন্দের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy