চিহ্ন: ছড়িয়ে পদপিষ্ট যাত্রীদের জুতো-জামা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
বছর খানেক আগে মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজে পদপিষ্ট হয়ে দুর্ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিল মঙ্গলবার সন্ধ্যার সাঁতরাগাছি স্টেশন। প্রায় একসঙ্গে ৫টি ট্রেন আসার পর প্রবল ঠেলাঠেলিতে পদপিষ্ট হয়ে এ দিন প্রাণ হারালেন দু’জন। এক জন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা তাশার সর্দার (৬৩), আর একজন পূর্ব মেদিনীপুরের কমলাকান্ত সিংহ (৪২)। আহত ১৩ জন। তাঁদের মধ্যে ৩ জন মহিলা, ৯ জন পুরুষ এবং বছর দশেকের এক শিশু রয়েছে।
সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম ছ’টি। কিন্তু ফুটব্রিজ দু’টি এবং মূল ফুটব্রিজ সংকীর্ণ। এ দিন সেখানেই দুর্ঘটনা ঘটে। রেল সূত্রে খবর, বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে ৫টা ৫২ মিনিটের মধ্যে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পর পর ট্রেন এসে পড়ে। সেই ঘোষণা শুনে তড়িঘড়ি ট্রেন ধরতে গিয়ে ফুট ওভারব্রিজে যাত্রীদের মধ্যে প্রবল হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এক দিকে দূরপাল্লার ট্রেন থেকে নেমে আসা যাত্রীরা যখন স্টেশন থেকে বেরোনোর চেষ্টা করছেন তখনই অন্য প্ল্যাটফর্মে যাত্রীরা লোকাল এবং এক্সপ্রেস ট্রেন ধরতে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নেমে আসার চেষ্টা করেন। মূলত এক থেকে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের সংযোগকারী ফুটব্রিজে মূহূর্তের মধ্যে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মাত্র কয়েক ফুট চওড়া ফুট ওভারব্রিজে শুরু হয় প্রবল ঠেলাঠেলি। ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সিঁড়িতে পড়ে যান জনা কুড়ির মতো যাত্রী। তাঁদের উপরেই আছড়ে পড়ে বাকিদের ভিড়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে রেলের তরফে সমন্বয়ের অভাব থাকার অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাত্র দিন কয়েক আগেই অমৃতসরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় মানুষকে চাপা দিয়ে চলে গিয়েছে ট্রেন। সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে তিনি বলেন “রেলের কাজে উদাসীনতা এবং গাফিলতি দেখা যাচ্ছে। একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে। সমন্বয়ের অভাব ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। অমৃতসরের ঘটনা ধরেই বলছি দুর্ভাগ্যজনক। রাজ্য প্রশাসনিক স্তরে তদন্ত করবে। মৃতদের ৫ লক্ষ এবং গুরুতর আহতদের ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। রেল মন্ত্রী অথবা রেলের আধিকারিকদের দোষ দেব না। তবে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী হিসেবে জানি, কী কী সতর্কতা রেলকে নিতে হয়।” পরে আহতদের দেখতে হাওড়া জেলা হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেল সাহায্য চাইলে তাঁর সরকার তা দেবে বলেও তিনি জানান।
দেখুন সেই ভয়ানক পরিস্থিতির ভিডিয়ো
আহতদের কয়েক জন • গৌরী হেমব্রম • অর্ণা সাউ • আখ্যা সাউ • এস কে আমিন • অমরেন্দ্র নাথ দত্ত • অনীশ সোম • এস কে আক্রামুল হক • গৌরনিতাই সাহা • শিল্পা ওঁরাও • হনুমন্ত সাউ • কিরণ সাউ • আশিস সাঁতরা
সাঁতরাগাছি স্টেশনে ওই ফুট ওভারব্রিজ সংকীর্ণ এবং পুরনো। তা সত্ত্বেও কেন এক সঙ্গে এতগুলি ট্রেন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে চলে এল এবং তা কেন সামলানো গেল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যদিও তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি রেলের আধিকারিকেরা। তাঁদের ব্যাখ্যা, দূর পাল্লার ট্রেনে পুজোর ভিড় ছিল। এছাড়া দক্ষিণের রাজ্যে চিকিৎসা করিয়েও অনেকে ফিরছিলেন। নাগেরকয়েল-শালিমার, হাওড়া-বেলদা-জলেশ্বর(মেমু), শালিমার-ভঞ্জপুর এক্সপ্রেস, হাওড়া-মেদিনীপুর লোকাল অল্প সময়ের ব্যবধানে সাঁতরাগাছি পেরিয়ে যায়। এছাড়াও হাওড়া-আদ্রা প্যাসেঞ্জার, শালিমার-বিশাখাপত্তনম এক্সপ্রেস, শালিমার-চেন্নাই এসি এক্সপ্রেস এবং হাওড়া-আমতা লোকালের সাঁতরাগাছি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।
আরও পড়ুন: স্টেশন থেকে বেঁচে ফিরেছি তো? এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না!
কম-বেশি সবকটি ট্রেনের যাত্রীই ফুটব্রিজে ওঠায় দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু সেই ভিড় সামলানো তো রেলেরই দায়িত্ব। কেন তা পালন করা গেল না, তার জবাব মেলেনি।ঘটনার পরই দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আধিকারিকরা যান ঘটনাস্থলে। আহতদের প্রথমে রেল হাসপাতালে, পরে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গুরুতর আহত এক যাত্রীকে পরে এসএসকেএমে পাঠানো হয়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার অনির্বাণ দত্ত বলেন, “ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” প্রশাসনিক তদন্ত করবে রাজ্যও। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানান, রেলের তরফে মৃতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের ক্ষেত্রে ১ লক্ষ টাকা এবং অল্প আহতদের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy