সিআইডি’র পেশ করা চার্জশিট আদালত গ্রহণযোগ্যতায় নিয়েছিল আগেই। এ বার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হল সত্তোরের বধূ নির্যাতন কাণ্ডের। সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বুধাবার চার্জশিটে নাম থাকা চার পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে ৩৪১, ৩৪২, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫ ও ৩৫৪ ধারায় চার্জ গঠিত হয়েছে। সিউড়ির মুখ্যবিচার বিভাগীয় ম্যজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে আগামী ১৮ মে সাক্ষ্য গ্রহণপর্ব শুরু হবে। ওই দিন নির্যাতিতাকে সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাত্তোরের এক বধূকে তাঁর বাপেরবাড়ি বুদবুদের কলমডাঙায় গিয়ে মধ্যযুগীয় অত্যাচার করেছিল পুলিশ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলে অভিযোগ ওঠে। জানুয়ারি মাসের সেই ঘটনায় ৯ মার্চ সিউড়ি কোর্টে চার্জশিট জমা করে সিআইডির দল। তারা যে চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছিল, তাতে নাম ছিল স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের ওসি কার্তিকমোহন ঘোষ, এসওজি-র দুই কনস্টেবল দীপক বাউড়ি, কাশীনাথ দাস ও ইলামবাজার থানার এক মহিলা কনস্টেবল আল্পনা লোহার-সহ চার জনের। ওই চারজনই ঘটনায় জড়িত বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছিল সিআইডি। কিন্তু গত ১৭ মার্চ চার্জশিট গ্রহণযোগ্যতায় না নিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বলে প্রশ্ন তোলেন সিজেএম। সিআইডি’র তদন্তকারী অফিসার প্রশান্ত নন্দীকে ফের তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। যে যে বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বলে আদালতের আপত্তি ছিল, তা হল— ঘটনার পর নির্যাতিতার স্বামী পাড়ুই থানায় একটি অভিযোগ করেন সেখানে তাঁর স্ত্রীর উপর নির্যাতনের ঘটনায় কিছু পুলিশকর্মী ও ৬ তৃণমূলকর্মীর বিরুদ্ধে লিখিত আভিযোগ দায়ের হয়। ঘটনার দিন-দুই পর বুদবুদ থানায় পৃথক একটি অভিযোগ করেন বিপ্লব চৌধুরী নামে জনৈক এক ব্যক্তি। তাতে ওই বধূর উপর নির্যাতনের ঘটনায় এসডিপিও (বোলপুর), সিআই (বোলপুর) এবং ওসি এসওজি কার্তিকমোহন ঘোষ ও এক তৃণমূল কর্মী শেখ আসগর-সহ বেশ কয়েকজনের নাম ছিল।
দু’টি পৃথক অভিযোগ ধরে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্ত শেষ করে আদালতে পেশ করা চার্জশিটে অভিযুক্তদের মধ্যে অবশ্য একমাত্র কার্তিকমোহন ঘোষ ছাড়া আর কারও নাম ছিল না। কিন্তু বুদবুদ থানা ও পাড়ুই থানায় দায়ের হওয়া অন্য অভিযুক্তদের ভূমিকা কী ছিল সেই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি চার্জশিটে, প্রশ্ন তোলে আদালত। আরও একটি বিষয়েও বিচারকের আপত্তি ছিল— যে চারজনের নাম চার্জশিটে ছিল তাঁদেরকে ৪১/এ ধারায় ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্তুষ্ট হয়েছেন তদন্তকারীরা। চার্জশিটে এ কথা উল্লখে করলেও কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি বা চার্জশিটে নাম থাকা পুলিশকর্মীদের অবস্থান কী সেটাও স্পষ্ট করা হয়নি।
কিন্তু আদালতের নির্দেশে পুনরায় তদন্তের ভার হাতে নেওয়ার কয়েকদিনের মাথায় শারীরিকভাবে অসুস্থতা দেখিয়ে প্রশান্ত নন্দীকে তদন্তকারী অফিসারের পদ থেকে সরিয়ে সুপ্রকাশ পট্টনায়ক নামে এক ইনস্পেক্টরকে তদন্তভার দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানায় সিআইডি। গত ২৩ মার্চ সুপ্রকাশ পট্টনায়কে দ্রুত তদন্ত শেষ করে ফাইনাল রিপোর্ট জমা করতে বলে আদালত। যেই মর্মেই ৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার চার্জশিট জমা করে সিআইডি। তাতে সিআইডি’র তরফে কোনও নতুন নাম যুক্ত হয়নি। শুধুমাত্র (৩৫৪) একটি জামিন অযোগ্য ধারা যুক্ত হয়। কিন্তু আদালতের কাছে যে ব্যাখ্যা সিআইডির তরফে দেওয়া হয়েছিল, তাতে সন্তুষ্ট হন বিচারক এবং গত ১৭ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার চার্জশিটটি গ্রহণযোগ্যতায় নেয় আদালত। বিচারকের নির্দেশ ছিল, অভিযুক্তদের ২৯ এপ্রিল আদালতে উপস্থিত হতে। অনুপস্থিত থাকলে অভিযুক্তদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে। তবে নির্ধারিত দিনের আগেই অভিযুক্ত চার পুলিশকর্মীই আগাম জামিন নেন।
আদালতের নির্দেশেই এ দিন চার অভিযুক্ত পুলিশকর্মী এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন। মামলাটি ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায় ওই দিন কীভাবে ওই বধূর উপর নির্যাতন হয়েছিল তার বিবরণ দেন এবং কী কী ধারায় অভিযোগ হয়েছে তা বলেন। উপস্থিত চার অভিযুক্তই দাবি করেন, তাঁরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। এর পরই মামলার চার্জ গঠন হয়। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবীও চার্জগঠনের বিরোধিতা করেননি। অন্য দিকে, সাত্তোরের সেই নির্যাতিতা বধূ ও তাঁর স্বামীর দাবি, ‘‘যে তদন্ত হয়েছে তাতে প্রথম থেকেই আমরা খুশি নই। যে অভিযোগ হয়েছিল তা মেনে তদন্ত করেনি সিআইডি। তাতে আমাদের বিশ্বাস নেই। আমরা উচ্চ আদালতে গিয়েছি সিবিআই তদন্ত চেয়ে। তাই ওই চার্জশিটের উপর চার্জ গঠন বা বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া নিয়ে কিছু বলার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy