প্রবল দহনে ২০ থেকে ৩০ জুন সরকারি ও সরকারি সাহায্যপুষ্ট সব স্কুল বন্ধ থাকবে। —ফাইল চিত্র।
একই দিনে পরপর দু’টি সরকারি চিঠি। প্রথম চিঠির বিষয়-শিরোনামে লেখা, প্রবল দহনে ২০ থেকে ৩০ জুন সরকারি ও সরকারি সাহায্যপুষ্ট সব স্কুল বন্ধ থাকবে। কিছু পরেই সংশোধনী-সহ দ্বিতীয় চিঠিতে জানানো হল, ওই সময়ে স্কুলগুলিতে বন্ধ থাকবে শুধু ক্লাস। সম্পূর্ণ স্কুল বন্ধের উল্লেখ নেই দ্বিতীয় চিঠিতে।
একে তো দহনজ্বালা। তার মধ্যে মঙ্গলবারের রাজ্য সরকারের জোড়া চিঠির বক্তব্য ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে শিক্ষককুলে। স্কুলে পুরোপুরি ছুটি না-দেওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। এ দিন সিবিএসই, আইসিএসই বোর্ডকেও এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছে রাজ্য। সরকারের অনুরোধে নিজেদের সব স্কুলে ছুটির নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন আইসিএসই বোর্ডের সচিব জেরি অ্যারাথুন।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সোমবার জানিয়েছিলেন, গরম দুঃসহ হয়ে ওঠায় রাজ্যের সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল ২০ থেকে ৩০ জুন বন্ধ থাকবে। তবে এই বাড়তি ছুটির ফলে যে-সব ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না, সেগুলো পরে যাতে পুষিয়ে দেওয়া যায়, সে-দিকে নজর রাখতে হবে। বেসরকারি স্কুলগুলিকেও এই বাড়তি ছুটি দিতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: নয়া বছরে রাজ্যে ডিএ ১৮%
কিন্তু মঙ্গলবার স্কুলশিক্ষা সচিব মণীশ জৈন স্বাক্ষরিত যে-নির্দেশ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ক্লাস বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও সম্পূর্ণ স্কুল বন্ধের উল্লেখ নেই। এতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে। তবে শিক্ষামন্ত্রীর যুক্তি, স্কুলে ক্লাস ছাড়াও শিক্ষকদের অন্য কাজ থাকে। স্কুলে এখন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। পার্থবাবু জানান, গত কয়েক বছর যে-ভাবে প্রচণ্ড গরমের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছিল, সেই নিয়মেই পড়ুয়াদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ক্লাস হবে না। কিন্তু স্কুল বন্ধ নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেউ যদি লাইব্রেরিতে আসতে চায়, সে কি আসবে না? মাস্টারমশাইদের কাজ থাকলে তাঁরা কি কাজ করবেন না? পড়ুয়াদের স্কুলে নিয়ে যান তো অভিভাবকেরা। মাস্টারমশাইদের কি অভিভাবকেরা নিয়ে যান?’’
বঙ্গীয় শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, ক্লাস বন্ধ থাকাকালীন সরকার শিক্ষকদের স্কুলে আসতে বলতে পারে না। এ বিষয়ে আদালতের রায় আছে। রাজ্য সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু জানান, অনেক শিক্ষককেই প্রতিদিন দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয়। ক্লাস না-থাকলে প্রায় কোনও কাজ ছাড়া প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া অর্থহীন। স্কুল-প্রধানেরা এই সময়ে যদি বুঝেশুনে শিক্ষকদের কাজ দেন, তা হলে রোজ স্কুলে গিয়ে কর্মহীন অবস্থায় বসে থাকতে হবে না। পশ্চিমবঙ্গ স্কুলশিক্ষক সমিতির নেতা নবকুমার কর্মকারের মতে, সরকারের এমন নির্দেশ বিভ্রান্তিকর। এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী সোমবার যা বলেছিলেন আর মঙ্গলবার যে-নির্দেশ বেরোল, দু’টির মধ্যে কোনও সামঞ্জস্য নেই। এটা খুবই অদ্ভুত!’’
অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে অধিকাংশ বেসরকারি স্কুল। লা মার্টিনিয়ার্স বয়েজ এবং গার্লস দুই স্কুলেই ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটি। সাউথ পয়েন্ট স্কুল বুধ থেকে শুক্রবার নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বন্ধ রাখছে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি বন্ধ থাকবে বুধ ও বৃহস্পতিবার। ভারতীয় বিদ্যাভবনে ২৬ জুন পর্যন্ত সব ক্লাস বন্ধ। গার্ডেন হাইস্কুল চলতি সপ্তাহে নার্সারি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছুটি দিয়ে দিয়েছে। রামমোহন মিশন স্কুলে আজ, বুধবার হাফছুটি এবং বৃহস্পতি-শুক্রবার পুরো ছুটি। হেরিটেজ স্কুল প্রি-নার্সারি থেকে প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত চলতি সপ্তাহে ছুটি দিয়েছে। চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের বেলা ১টায় ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy