বিদ্যুৎগতিতে পালাচ্ছে বাঘটি। ছবি তুলেছেন আনমোল ছেত্রী।
উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে যে বাঘ আছে তা ফের প্রমাণ করে দিয়েছেন পাহাড়ি গ্রামের গাড়ির চালক আনমোল। তাতে রাজ্যের বন দফতরের সম্মান বেড়েছে বলে মনে করেন বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন। শুক্রবার বিনয়বাবু বলেন, ‘‘আমরা বারবার নেওড়া ভ্যালিতে বাঘ রয়েছে বলে জানাচ্ছিলাম। কিন্তু আমাদের কথা কেউ বিশ্বাস করছিল না। গাড়িচালক ওই যুবক আমাদের কথার সত্যতায় শিলমোহর দিয়েছেন।’’
গত শুক্রবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিট নাগাদ লাভা থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি পথে বাঘ দেখতে পান গাড়ির চালক হরকাবাহাদুর ওরফে আনমোল। দ্রুত তাঁর ক্যামেরা মোবাইল ফোনে সেটির ছবিও তুলে নেন তিনি। বনকর্মীরা এসে সেই এলাকা জুড়ে পরীক্ষা চালিয়ে বাঘের পায়ের ছাপ এবং গরুর মৃত শরীরের অংশ খুঁজে পান। বাঘ থাকার খবরের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় বীরের সম্মান পেতে শুরু করেন আনমোল। শুক্রবার গরুমারা এবং নেওড়াভ্যালির বন্যপ্রাণী বিভাগের ডিএফও নিশা গোস্বামী লাভাতে চলে আসেন। তিনি খাদা পরিয়ে সম্মানও জানান আনমোলকে।
বাঘের অস্তিত্বের প্রমাণ মিললেও বেশ কিছু প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু যেমন বললেন, ‘‘নেওড়া ভ্যালির কোর এলাকার বাইরে লাভার এত কাছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার গরু মেরে খাচ্ছে এটা কিন্তু ভীষণ চিন্তার বিষয়। নেওড়া ভ্যালির জঙ্গলে মেলিঙ্গো প্রজাতির বাঁশ এত দ্রুত বংশ বাড়িয়েছে যে তৃণভোজী প্রাণীকে ছুটে ধরতেই পারবে না বাঘ এবং চিতাবাঘ। তার ওপর নেওড়া ভ্যালির মত বিরাট বনাঞ্চলে ১০ জনের বেশি স্থায়ী বনকর্মী নেই। এই খবর আনন্দ যেমন নিয়ে এসেছে তাই সেই সঙ্গে বাঘের নিরাপত্তার দুশ্চিন্তাও বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।’’ বাঘ থাকায় এখন থেকে লাভা এলাকাতে শীতকাল জুড়ে প্রকৃতি বীক্ষণ শিবির, পিকনিক, ট্রেকিং এ সবের ওপরেও এখন দ্রুত বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে বলেও দাবি তুলেছেন ওদলাবাড়ির পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাসের সম্পাদক নাফসার আলি।
নেওড়া ভ্যালির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন বনকর্মীরা। (ডান দিকে) গাড়ি চালক আনমোল ছেত্রীকে খাদা পরিয়ে সম্মান জানাচ্ছেন ডিএফও নিশা গোস্বামী। নিজস্ব চিত্র
বনকর্তাদের অবশ্য দাবি, নেওড়া ভ্যালিতে একাধিক বাঘ রয়েছে। যে বাঘটির ছবি সামনে এসেছে সেটি পুরুষ না স্ত্রী সেটি পরিষ্কার না হলেও বাঘটির বয়স পাঁচ বছরের আশেপাশে বলেই জানিয়েছেন বন্যপ্রাণ বিভাগের উত্তর মণ্ডলের বনপাল সুমিতা ঘটক। তিনি বলেন ‘‘এটি সদ্য পূর্ণবয়স্ক একটি বাঘ। নেওড়ার গভীর বনে যে একাধিক বাঘ রয়েছে সেই তথ্য আমরা নানা ভাবে বহুবার পেয়েছি। তবে লাভার কাছাকাছি বাঘটিকে দেখা যাওয়ায় গোটা নেওড়া ভ্যালি জুড়েই কঠোর নজরদারি শুরু করতে বলা হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে বাঘের খবরে চোরাশিকারিরাও যাতে লাভাতে ঢুকে পড়তে না পারে, সে জন্যে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও রেঞ্জ দফতরের তরফে সতর্ক করা হয়েছে বলেও জানান সুমিতাদেবী।
২০১৫ সালের জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কমিটির রিপোর্টে উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে দুটি বাঘ রয়েছে বলে রিপোর্টে প্রকাশিত হয়। তাতে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের আলাদা করে নাম নেই। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের এফডি উজ্জল ঘোষ জানান, জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কমিটির রিপোর্টে উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে দুটি বাঘের কথা বলা হয়েছে।” এ দিনই বনমন্ত্রী জানিয়েছেন, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প ও জলদাপাড়ায় ছাড়ার জন্য অসম থেকে চারটি স্ত্রী ও দুটি পুরুষ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আনবে রাজ্য বন দফতর। জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কমিটি, রাজ্য বন দফতর ও অসমের বন দফতরের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জঙ্গলের কোর এলাকাতে ২৫ হেক্টর জঙ্গলে তৈরি হবে এনক্লোজার। ফ্রেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউশন ও গ্লোবাল টাইগার ফোরামের বিশেষজ্ঞরা এসে এনক্লোজার তৈরির জায়গা দেখবেন। ‘ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট’ তৈরি করে শুরু হবে এনক্লোজারের কাজ। তার পরেই অসম থেকে আনা হবে অতিথিদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy