Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
উত্তর ২৪ পরগনা জুড়ে অবাধে বিকোচ্ছে অ্যাসিড

বোতল কিনে জমা করলাম পুলিশের কাছে

এখানে এমন অ্যাসিড বিক্রি হয়? যুবকের উত্তর, ‘‘সচরাচর কেউ তো অ্যাসিড কিনতে আসে না। তা ছাড়া বোতল ধরে বিক্রি হয় না। কেউ অল্পস্বল্প চাইলে হয়তো ম্যানেজ করা যায়।

দোকান থেকে কেনা অ্যাসিডের বোতল।—নিজস্ব চিত্র

দোকান থেকে কেনা অ্যাসিডের বোতল।—নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৫
Share: Save:

রবিবারের সকাল। বনগাঁর ট’ বাজার জমজমাট। বড় মুদিখানা দোকানের চেনা ভিড়ে আটকে থাকতে হল বেশ কিছুক্ষণ। কাউন্টারের সামনে আসতেই দোকানির প্রশ্ন, ‘‘কী চাই?’’ বাথরুম পরিষ্কার করার অ্যাসিড আছে?

ক’ বোতল চাই? ছোট না বড়?

বড় হলেই ভাল হয়।

এক কিশোরকে ডেকে অ্যাসিড দিতে বলে ফের নিজের কাজে মন দিলেন মাঝবয়সি দোকানি। মিনিটখানেকের মধ্যে আমার হাতে একটি বড় বোতল ধরিয়ে দিয়ে ২৫ টাকা নিয়ে ভিতরে চলে গেল কিশোরটি। কেউ আমার নাম-ঠিকানা ফোন নম্বর জানতে চাইলেন না। কোথাও সই করতেও বললেন না। অথচ নিয়ম অনুযায়ী দোকানির তা করার কথা।

কিছুক্ষণের মধ্যে ফের সেই দোকানে যাওয়া গেল। এ বার দোকান কিছুটা ফাঁকা। দোকানিকে জানালাম নিয়মের কথা। নিয়ম না মেনে যে কোনও ধরনের অ্যাসিড বিক্রি যে বেআইনি, তাও জানালাম তাঁকে। এমন কথা শুনে কার্যত থ’ হয়ে গেলেন দোকানদার। তিনি বললেন, ‘‘এখন তো বটেই. কস্মিনকালেও এমন নিয়ম শুনিনি।’’ এর পরেই অবাক করে দিয়ে বললেন, ‘‘অ্যাসিড বেচে আর কাজ নেই। বোতলটা ফেরত দিয়ে আপনার টাকা বুঝে নিন।’’

এই আলাপচারিতা শুনছিলেন এক মহিলা। দোকান থেকে বেরতেই পিছুপিছু এসে থামালেন তিনি। দোকানদারের মতোই তাঁর মুখেও অপার বিস্ময়। জানতে চাইলেন, ‘‘আপনি যা বললেন তা কি সত্যি? দিন কয়েক আগে আমিও তো ২০ টাকা দিয়ে এক বোতল অ্যাসিড কিনেছি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘দোকানদার যদি আমার নাম-ঠিকানা না রাখে, তা হলে পুলিশ কি আমাকেও ধরবে?’’

সেখান থেকে বেরিয়ে এ বারে গেলাম সোনার দোকানে। দোকানের বাইরে বসে কাজ করছিলেন এক যুবক। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে চুপিচুপি জানতে চাইলাম, এক বোতল সালফিউরিক অ্যাসি়ড পাওয়া যাবে? তাঁর উত্তর, ‘‘আমি তো কর্মচারী। বাবুকে জিজ্ঞাসা করুন। তিনি দিলে পাবেন।’’ বলেই সোজা বাবুকে হাঁক দিলেন। বেরিয়ে এলেন এক প্রৌঢ়। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘কী চাই?’’ ওই যুবক বললেন, ‘‘এরা এক বোতল অ্যাসিড চাইছে।’’

খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে দোকানদার বললেন, ‘‘অ্যাসিড কী হবে?’’ বললাম ‘‘কাজ আছে।’’ কী যেন ভাবলেন তিনি। তারপরে তাঁর জবাব, ‘‘না ভাই, আমরা অ্যাসিড বিক্রি করি না। অন্য কোথাও খোঁজ করুন। পেতে পারেন।’’ দোকান থেকে যখন চলে আসছি। ওই যুবক বললেন, ‘‘আমার কাছে নেই। না হলে আপনাকে দিতে পারতাম।’’ তা হলে কি এখানে এমন অ্যাসিড বিক্রি হয়? যুবকের উত্তর, ‘‘সচরাচর কেউ তো অ্যাসিড কিনতে আসে না। তা ছাড়া বোতল ধরে বিক্রি হয় না। কেউ অল্পস্বল্প চাইলে হয়তো ম্যানেজ করা যায়।

কথা আর বাড়ালাম না। ভিতর থেকে ডাক এল যুবকের। দোকান পিছনে রেখে রাস্তায় নামলাম। থলের মধ্যে এক বোতল মিউরিয়াটিক অ্যাসিড। ফেরার পথে তা থানায় জমা করলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Acid Attack Illegal Business
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE