প্রতীকী ছবি।
নোনা জলের সমস্যা তো আছেই। তার উপরে নির্বিচারে তোলা হচ্ছে ভূগর্ভের জল। অবিলম্বে এ ভাবে জল তোলা বন্ধ না-হলে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে সুন্দরবনের জনজীবনে। বৃহস্পতিবার দমদমের মতিঝিল রবীন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে এক আলোচনাচক্রে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হল বার বার।
ওই অনুষ্ঠানের অন্যতম বক্তা কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজ়নেস ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক এবং ভূতত্ত্ববিদ প্রদীপ সিকদার জানান, প্রতি বছর গ্রীষ্মে এবং শীতে জলের স্তর অনেক নীচে নেমে যাচ্ছে। এই বিপদ এড়াতে হলে ভূগর্ভস্থ জল হিসেব করে ব্যবহারের পাশাপাশি বৃষ্টির জলও সংরক্ষণ করতে হবে। সেই সঙ্গেই তিনি জানান, হুগলি ও বসিরহাটে যে-জল ভূগর্ভে ঢোকে, ভূস্তরের ঢাল বেয়ে তা সুন্দরবনে পৌঁছয়। ফলে নগরায়ণের ক্ষেত্রেও পরিকল্পনা প্রয়োজন। এ দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সুন্দরবনের কিছু বাসিন্দা জানান, ভূগর্ভে জলস্তরের অবস্থা এখনই এমন দাঁড়িয়েছে যে, সাতজেলিয়া, রাঙাবেলিয়ার মতো জনপদে ৯০০ থেকে ১০০০ ফুট পাইপ না-পুঁতলে জল উঠছে না।
শুধু সুন্দরবন নয়, ভূগর্ভস্থ জলের এই সঙ্কট রয়েছে গাঙ্গেয় বঙ্গের অন্যান্য জেলাতেও। তার ফলে পাল্লা দিয়ে আর্সেনিকের মতো বিষাক্ত রাসায়নিকের দূষণও বেড়ে চলেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজ়ের বিজ্ঞানীদের একাধিক গবেষণায় সেটা প্রতিফলিত হয়েছে। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন নদিয়া জেলা নিয়ে একটি গবেষণা। যাদবপুরের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ জলের যে-ছবি আমরা পাচ্ছি, তাতে উত্তরোত্তর আশঙ্কা বাড়ছে। আর দেরি না-করে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিত।’’
পরিবেশবিদদের অনেকেই জানান, রাজ্যের নদীগুলির অবস্থাও তথৈবচ। ফলে ভূগর্ভস্থ জলের উপরে মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। নির্বিচারে নলকূপ বসিয়ে জল তোলার ফলে মাটির তলায় থাকা দূষিত রাসায়নিক আর্সেনিক উপরে উঠে আসছে। শুধু তা-ই নয়, নির্বিচারে সেচ-পাম্প বসিয়ে চাষের কাজে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করায় আর্সেনিক-দূষিত জল ঢুকে পড়ছে খাদ্য-শৃঙ্খলেও। তার ফলে আর্সেনিক-প্রবণ এলাকার বাইরের বাসিন্দাদের শরীরেও ওই বিষাক্ত
রাসায়নিক ঢুকতে পারে। এ দিন দমদমের কলেজের অনুষ্ঠানেও নদীর প্রসঙ্গ তোলেন অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক তুহিন ভদ্র। প্লাস্টিক দূষণ-সহ সুন্দরবনের পরিবেশগত নানান বিষয়ও আলোচনায় উঠে এসেছে। উদ্যোক্তারা জানান, জলদূষণের পাশাপাশি প্লাস্টিক-দূষণও সুন্দরবনে বড় বিপদ ডেকে আনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy