Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ খুনে সাত জনের যাবজ্জীবন

এই রায়ে তাঁরা খুশি নন বলে জানিয়েছেন অসীমবাবুর পরিবার। তাঁরা ফাঁসির দাবি করেছিলেন। রায় নিয়ে খুশি নন সাজাপ্রাপ্তদের আত্মীয়েরাও। তাঁরা এজলাসের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:৫০
Share: Save:

কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল অসীম দাম খুনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল সাত জনের।

বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তাপসকুমার মিত্র বিমানবন্দর থানা এলাকার বাসিন্দা অভিজিৎ ঘোষ, বিশ্বজিৎ ঘোষ, পঙ্কা দত্ত, দেবু মুখোপাধ্যায়, বাটু মজুমদার, কুন্তল চক্রবর্তী এবং তপন চন্দ্র নামে ওই সাত দোষীকে ওই সাজা শোনান। বুধবার তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

এই রায়ে তাঁরা খুশি নন বলে জানিয়েছেন অসীমবাবুর পরিবার। তাঁরা ফাঁসির দাবি করেছিলেন। রায় নিয়ে খুশি নন সাজাপ্রাপ্তদের আত্মীয়েরাও। তাঁরা এজলাসের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।

অসীম দাম হত্যাকাণ্ড ঘটে ২০১২ সালের ৮ মার্চ। সে দিন দোল ছিল। বিমানবন্দর থানার বিশরপাড়ায় অসীমবাবুর বাড়িতে নাম-সঙ্কীর্তনের আসর বসেছিল। সেই সময় মত্ত অবস্থায় তাঁদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে এক দল যুবক। তারা অসীমবাবুর এক আত্মীয়ার সম্ভ্রমহানি করে। প্রতিবাদ করে প্রহৃত হন ১৮ মহিলা। অসীমবাবু এবং তাঁর কয়েক জন আত্মীয় তাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অসীমবাবুকে টেনে বাইরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে আধমরা অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। হাসপাতালে তিন দিন পরে মারা যান তিনি। সিআইডি মামলাটি হাতে নিয়ে চার্জশিট দেয়।

এ দিন রায় দানের শুরুতেই বিচারক পরিষ্কার করে দেন, আসামিদের বক্তব্য তিনি শুনবেন। কিন্তু আসামিরা কেউ যেন নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি না-করেন। বিচারক বলেন, ‘‘আমি ঠিক হতে পারি, বেঠিক হতে পারি। আমার দেখা-শোনা বা বোঝার ভুল থাকতে পারে। কিন্তু আমি আপনাদের দোষী সাব্যস্ত করেছি। চাইলে আপনারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন।’’

দোষীরা প্রত্যেকেই বিচারককে নিজেদের অসহায়তার কথা জানায়। কারও মেয়ে বিবাহযোগ্যা, কারও ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, কারও বাবা বা মা অসুস্থ। প্রত্যেকেই কম সাজার আর্জি জানায়। মামলার সরকারি আইনজীবী অসীমকুমার দত্ত আসামিদের ফাঁসি দাবি করেন। সকলের বক্তব্য শুনে কিছু ক্ষণের বিরতির পর সাজা ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারক হেতাল পারেখ ধর্ষণ মামলা, নির্ভয়া মামলা-সহ বেশ কয়েকটি মামলার উল্লেখ করেন। এই মামলাগুলিতে ফাঁসি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের কথা ব্যাখ্যা করেন। বিচারক জানান, জনতা আসামিদের ফাঁসি চায় বলেই আদালত ফাঁসি দিতে পারে না। আবার এমন রায় হওয়া উচিত নয়, যাতে আদালতের উপর থেকে জনতার ভরসা উঠে যায়। এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরল নয়। তাই ফাঁসির সাজা নয়।

আসামিরা অসীমবাবু ও তাঁর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজকর্ম ও তোলাবাজির অভিযোগ তুলেছিলেন। কিন্তু তারা বা তাদের আইনজীবীরা তা প্রমাণ করা দূরে থাক, প্রমাণের চেষ্টাও করেননি। আদালত এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সাজা ঘোষণার পরে দু’-এক জনের শরীরী ভাষায় হতাশা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যদিও বাকিদের হেলদোল দেখা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jail Murder Constable Lynching
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE