সেন্ট জেভিয়ার্সের সমাবর্তনে শশী তারুর। শনিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
মধ্যমেধার সাগরে ভাসমান গুটিকয়েক উৎকর্ষের দ্বীপ! শনিবার সন্ধ্যায় নিউ টাউনে সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অনেকটা এ ভাবেই দেশের শিক্ষাজগতের ছবিটা বিশ্লেষণ করলেন সাংসদ শশী তারুর।
মোদী সরকারের শিক্ষানীতিকে কথায় কথায় বিঁধেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বেঙ্গালুরুতে দেশের সেরা আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সপ্তাহেই ছাত্রপিছু খরচ বেড়েছে ৫০ হাজার টাকা। হায়দরাবাদের টিস-এর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হঠাৎ মেস-হস্টেলের খরচ বেড়েছে। এই পটভূমিতে শশীর আক্ষেপ, ‘‘এই সরকার পাহাড়প্রমাণ মূর্তির পিছনে টাকা খরচ করবে, সেরা ছাত্রদের বৃত্তিতে ভর্তুকি দেবে না! বৃত্তি ও ঋণের উপরে নির্ভরশীল অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল শ্রেণি বা এসসি, এসটি, ওবিসিভুক্তদের জন্য উচ্চ শিক্ষা ক্রমশ কঠিনলভ্য হয়ে উঠছে।’’
সেন্ট জেভিয়ার্সের সদ্য স্নাতকোত্তর ১৩৫ জনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী শশী। তবে তিনি মনে করেন, সবারই দেশের শিক্ষিত স্নাতকদের সার্বিক হালটা জানা
উচিত। মধ্যপ্রদেশে ১৪ হাজার কনস্টেবলের পদে ন’লক্ষ পদপ্রার্থীর হামলে পড়ার একটি নমুনাও শশী তুলে ধরেন। তার পরে বলেন, ‘‘এ দেশের পেশাগত বাস্তুতন্ত্রে তাবড় ডিগ্রিধারীরাও জানেন না কী করবেন! যোগ্যতা বা মেধার তুলনায় সুযোগ সামান্য।’’ তুলে আনেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর পুরনো বক্তৃতা প্রসঙ্গও। ‘‘পকোড়া ভাজার পরামর্শের বিকল্প হিসেবে কিছু ইঞ্জিনিয়ার-পিএইচডিধারীও এখন নিরুপায় হয়ে কনস্টেবল হতে চান।’’ কার্যত সতর্ক করার ভঙ্গিতে শশীর হুঁশিয়ারি: যুব সমাজের হতাশা বাড়লে মাওবাদী-নকশালরাই দলে ভারী হবেন!
জওহরলাল নেহরু বলতেন, আইআইটিগুলিই দেশের ভবিষ্যৎ! ভারতীয়দের তথ্যপ্রযুক্তি গুরু বা কম্পিউটার বিশারদ হিসেবে জগৎজোড়াখ্যাতি সেই নীতির ফসল বলেই শশীর অভিমত। কিন্তু উৎকর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ায় দেশ এখনও ঢের পিছিয়ে। শশীর সমালোচনা: সম্প্রতি আইআইএমগুলির বরাদ্দ কমেছে, শিক্ষক তালিমের তহবিলও ৮৭১ কোটি থেকে ১২৫ কোটিতে নেমেছে। তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নির্ভর করে আবিষ্কার ও উদ্ভাবনী দক্ষতায়। গবেষণা ও উন্নয়নখাতে (আর অ্যান্ড ডি) আমাদের খরচের হার জিডিপি-র মাত্র ০.৬%। মেধাস্বত্ত্ব অর্জনও নিম্নমুখী।’’ সেই সঙ্গে ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনে গবেষণাখাতে বরাদ্দ বাড়ালেও কাজের ক্ষেত্র বাছাইয়ের বৌদ্ধিক স্বাধীনতা নিয়েও নানা
মহলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে
মনে করেন শশী। এর পাশাপাশি, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এ দেশে ঢুকতে দিতেও আপত্তি
কেন্দ্রীয় সরকারের। শশীর মতে, ‘‘নিয়ম মেনে তাদের জন্য জায়গা খুললে একটা খোলা হাওয়ার পরিসর তৈরি হত।’’
ঘৃণা-বিদ্বেষের রাজনীতির ক্ষুদ্রতা থেকে মুক্তির পথেও শিক্ষাই ওষুধ বলে মনে করেন কলকতার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের প্রাক্তনী। ‘‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসন ঢিলেঢালা, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ১৬ আনা। ভাবনার স্বাধীনতাটুকু ছেড়ে দিলেই আখেরে ভাল হত।’’— বলে গেলেন শশী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy