খোদ মুখ্যমন্ত্রীর গর্বের প্রকল্প। কিন্তু সেই ‘কন্যাশ্রী’রও যে হাঁড়ির হাল, সেটা বেরিয়ে পড়ছে মাঝেমধ্যেই। বিভিন্ন কলেজের সঙ্গে রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের সমন্বয়ের অভাবে কন্যাশ্রীতে নাম লেখাতে গিয়ে ছাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি যেমনটা ঘটেছে হাজরার শ্যামাপ্রসাদ কলেজে। যেটা কার্যত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়া। ওই কলেজে মাসের পর মাস হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেও ছাত্রীরা কন্যাশ্রী প্রকল্পে নাম লেখাতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের তির মূলত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তন্ময় বিশ্বাসের দিকে। পড়ুয়া আর কলেজের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘স্যার’ যেন ডুমুরের ফুল! কলেজে তাঁর দেখা মেলে কালেভদ্রে। আর অভিযোগ অস্বীকার করে তন্ময়বাবু বলছেন, ‘‘হাঁটুর সমস্যার জন্য কয়েক দিন ছুটি নিয়েছি। তার পরেই কাজে যোগ দেব। আমি অনেক দিন ধরে কলেজে যাইনি, এ কথা ঠিক নয়।’’
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না-আসায় কলেজে গিয়েও ছাত্রীরা কন্যাশ্রীতে নাম লেখানোর আবেদনপত্রে তাঁর সই জোগাড় করতে পারছেন না। রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব রোশনী সেনের বক্তব্য, কন্যাশ্রীতে নাম লেখাতে হলে অধ্যক্ষ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সই লাগবেই। অধ্যক্ষ না-থাকলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তো থাকবেনই। ফর্মে তাঁর সই থাকা চাই। তবে শ্যামাপ্রসাদের ক্ষেত্রে কলেজ-কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট ছাত্রীদের তরফে তাঁদের কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি বলেই জানাচ্ছেন সমাজকল্যাণ সচিব।
শুধু শ্যামাপ্রসাদ নয়! রাজ্যের ৯০ শতাংশ কলেজেই কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুফল এবং তাতে নাম লেখানোর প্রক্রিয়া ছাত্রীদের বোঝাতে কর্তৃপক্ষের তরফে সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে সরকারি কর্তাদের অভিমত। সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘ডায়মন্ড হারবার তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনার অনেক কলেজের মেয়েরা সম্প্রতি দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদেরও অভিযোগ, কন্যাশ্রীর বিষয়ে জানতে কলেজ-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছিটেফোঁটা সাহায্যও পাচ্ছেন না তাঁরা।’’
অথচ কন্যাশ্রী নিয়ে বিভিন্ন কলেজের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে বলে সমাজকল্যাণ দফতরের কর্তাদের দাবি। কলেজের ওয়েবসাইটেও ওই প্রকল্পের খুঁটিনাটি জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ কলেজই বিষয়টি নিয়ে নির্বিকার। ছাত্রীরা অসহায়।
মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে বছর দুয়েক আগেই কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছিল মমতার সরকার। তাতে বছরে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা আয়-সীমার মধ্যে থাকা পরিবারের স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে (১৩-১৮ বছর বয়সি) বছরে ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। আর ১৮ বছর পূর্ণ হলে সেই ছাত্রীরা এককালীন ২৫ হাজার টাকা পাবেন, যা তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে লাগবে। সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, কমবেশি ২৭ লক্ষ ছাত্রীকে কন্যাশ্রীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৪ লক্ষ ছাত্রী এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু কলেজে কন্যাশ্রীতে নাম লেখানোর টালবাহানায় অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্রীরা সমস্যায় পড়ছেন।
এক সরকারি কর্তার কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে, ১৯ বছর পূর্ণ হওয়ার মধ্যেই কন্যাশ্রীর ‘ফর্ম’ জমা দিতে হবে। নইলে প্রকল্পের শেষ পর্বের এককালীন সাহায্য মিলবে না।’’
শ্যামাপ্রসাদ কলেজের বেশ কিছু ছাত্রী তাই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যোগ দিয়েছেন তিন মাস হল। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে হয়রান হয়েছেন বেশ কিছু ছাত্রী। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘বারবার গিয়েও স্যারের দেখা পাইনি। কী যে হবে, কেউই বলতে পারছেন না। প্রকল্পের টাকাটা আদৌ হাতে আসবে কি না, সন্দেহ হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy