ফাঁসিদেওয়া (বামদিকে) এবং মাঝেরহাট। এভাবেই ভেঙে পড়েছে সেতু দুটো।
দায়সারা ভাবে সেতু বিপর্যয়ের ভয়াবহতার দায় আবারও অন্যের ঘাড়ে চাপাল রাজ্য সরকার। মাঝেরহাটে সেতু বিপর্যয় মেট্রো প্রকল্পেরই ফল, এ রাজ্যেরই এক মন্ত্রীর মুখে শোনা গিয়েছিল এ কথা। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সাংবাদিক বৈঠক করে মেট্রোর কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।এ বারশিলিগুড়িরফাঁসিদেওয়ায় সেতু বিপর্যয়ের দায় চাপানো হল সিপিএমের ঘাড়ে।
মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার দায় কার? মেট্রো নাকি রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতর যারাই সেতু দেখভালের দায়িত্বে আছে। এই বিতর্কের মধ্যেইশুক্রবার সকালে ‘ভি’ আকারে ভেঙে পড়েছে শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়ার একটি সেতু।আর তার পরসেই সেতু নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এ দিন সকালে দুর্ঘটনাস্থলে আসেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। সেতু মেরামতি কেন করা হয়নি তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে গৌতমবাবু বলেন, ‘‘সেতুটি শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত।রাজ্য সরকারের এখানে কিছুই করার নেই।’’ তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট তিনি সেতু ভাঙার দায় সরাসরি বামেদের উপরে চাপাতে চাইছেন। কারণ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের দখল নিয়েছে বামেরা।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষও একই সুরে দায় চাপিয়েছেন সিপিএমের উপরে। তিনি আবার বলেন, ‘‘বাম আমলে তৈরি হওয়া ওই সেতুর কোনও কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। সমস্ত কাগজপত্র নতুন করে তৈরি করতে হবে।’’ কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে ৭ বছর। তার মধ্যে কেন উত্তরবঙ্গের ভগ্ন সেতুগুলো চিহ্নিত হল না বা মেরামতি হল না? সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গৌতম দেব বা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ— সেতু ভেঙে পড়ার পিছনে যে যুক্তি খাড়া করেছেন, তা একেবারেই মানতে নারাজসিপিএম নেতারা। উল্টে তাঁদের দাবি, মহকুমা পরিষদ সিপিএমের দখলে বলেই সেতু নিয়ে গা ছাড়া ভাব দেখিয়েছে রাজ্য সরকার। সিপিএম নেতা জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘অনেক দিন আগেই ফাঁসিদেওয়ার এই সেতুটি দুর্বল হয়ে পড়ে। মহকুমা পরিষদ দুর্বল সেতু হিসেবে চিহ্নিত করে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছিল। সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ বাম সরকার পরিচালিত তাই মেরামতির জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে দেরি করছে।’’আর শিলিগুড়ির মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের অনেক সেতুই এই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সবগুলির রক্ষণাবেক্ষণের বদলে সরকার নীল সাদা রং করে বেড়াচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: শিয়ালদহ মেন শাখায় বাতিল ১৫৮ ট্রেন, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা
এই চাপানউতোরেই বছরের পর বছর মেরামতি ছাড়াইপড়ে রয়েছে সেতুটি।প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে যতদূর জানা গিয়েছে, শেষ ২০০২ সালে মেরামতি করা হয়েছিল। তারপর যত বছর ঘুরেছে, সেতুর অবস্থাও আরও জীর্ণ হয়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘সেতুর তলাটা একেবারেই ক্ষয়ে গিয়েছিল।আশেপাশের অনেকগুলো গ্রামের যোগাযোগ নির্ভর করে ছিল এই সেতুর উপরেই। যাতায়াতের খুব সমস্যা হবে এ বার।’’
আরও পড়ুন: ফের ভাঙল সেতু, এ বার শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়ায়
শুধু ফাঁসিদেওয়া বা মাঝেরহাট নয়, পোস্তা, উল্টোডাঙার ক্ষেত্রেও অনেকটা একই ভঙ্গি দেখা গিয়েছিল রাজ্য সরকারের। কিন্তুদায় চাপিয়ে এবং ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেই কি সমস্ত কাজ শেষ হয়ে যায় সরকারের? উল্টোডাঙা-পোস্তার পর বিনা দেখভালে যে ভাবে পর পর দুটো সেতু ভেঙে পড়ল, তা থেকে এমনই মনে হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়ায় একটি সেতু ভেঙে পড়ে। তার উপর দিয়ে একটি খালি ট্রাক যাচ্ছিল। এই ঘটনায় ট্রাকটিও সেতু থেকে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলতে থাকে। চালক কোনওভাবে গাড়ি থেকে নামেন। আহত হন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy