ধর্নার হুঁশিয়ারি অশোক ভট্টাচার্যের। ফাইল চিত্র।
আবার ধর্না শুরু হতে পারে মেট্রো চ্যানেলে। আবারও সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভাঙার অভিযোগে। তবে এ বার ডাক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফ থেকে নয়, বরং হুঁশিয়ারিটা তাঁরই বিরুদ্ধে। শিলিগুড়ি পৌর নিগমকে রাজ্য সরকার চরম বঞ্চনার মুখে ফেলেছে বলে অভিযোগ তুলে মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সে শহরের মেয়র তথা বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। শিলিগুড়ির সঙ্গে এই ‘বঞ্চনা’ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে খুব বড় আঘাত— মন্তব্য শিলিগুড়ির মেয়রের।
রাজ্যের একমাত্র পুরসভা শিলিগুড়ি, যেখানকার বোর্ড এখনও তৃণমূল বা তার কোনও সহযোগীর হাতের বাইরে। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সেখানে বোর্ড চালাচ্ছে সিপিএম, মেয়র পদে রয়েছেন শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। বোর্ড ফেলার চেষ্টা একাধিক বার হয়েছে। অশোক ভট্টাচার্য আর শঙ্কর মালাকারের (মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি) জুটি সে সব চেষ্টা প্রতিহতও করেছে। কিন্তু অর্থাভাবে এখন কার্যত রক্তশূন্য দশা শিলিগুড়ি পৌর নিগমের। মেয়রের অভিযোগ অন্তত সে রকমই।
বিরোধী দলের হাতে থাকায় শিলিগুড়ি পৌর নিগমের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হচ্ছে— এই অভিযোগ গোড়া থেকেই করে আসছেন অশোক ভট্টাচার্য। বিষয়টি নিয়ে মিটিঙে-মিছিলে-সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বহু বার সরব হয়েছেন। কিন্তু কোনও কিছুতেই লাভ হয়নি বলে অশোকের দাবি। তাই অশোক ভট্টাচার্য বুধবার জানিয়েছেন যে, তিনি মেট্রো চ্যানেলে ধর্না শুরু করার কথা ভাবছেন।
আরও পড়ুন: শনিবার শিলং পৌঁছচ্ছেন সিবিআই তদন্তকারীরা, রাজীবকে কি জেরা রবিবারই?
বুধবার আনন্দবাজারকে অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানার অভিযোগ তুলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসেছিলেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোটা তো শুধু কেন্দ্র আর রাজ্যের সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। রাজ্যের সঙ্গে স্থানীয় সরকারগুলির অর্থাৎ পুরসভা বা পঞ্চায়েতগুলির সম্পর্কটাও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে পড়ে। অতএব শিলিগুড়ি পৌর নিগমকে রাজ্য সরকার দিনের পর দিন যে ভাবে বঞ্চিত করছে, সেটাও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত। তার প্রতিবাদে আমিও মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসব ভাবছি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো সে পথ দেখালেন।’’
কী ধরনের বঞ্চনা করা হচ্ছে শিলিগুড়ি পৌর নিগমের সঙ্গে? অশোক ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘মূল বঞ্চনাটা অর্থনৈতিক। রাজ্য সরকার আমাদের প্রায় কোনও টাকাই দিচ্ছে না। আমরা পেয়েছি শুধু চতুর্দশ অর্থ কমিশনের টাকাটা। ওটা রাজ্যের টাকা নয়, কেন্দ্রের টাকা। আর রাজ্য সরকারের কাছ থেকে এত দিনে পেয়েছি ৪ কোটি টাকার মতো।’’ অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, মাত্র ১০-২০ হাজার জনসংখ্যা যে সব পুর এলাকায়, সেই সব পুরসভাকেও শিলিগুড়ির চেয়ে অনেক বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: তোলাবাজি, দুর্নীতি মামলায় রোজভ্যালি-কাণ্ডের তদন্তকারীর বিরুদ্ধে চার্জশিট কলকাতা পুলিশের
কিন্তু ধর্না দিয়ে কি টাকা আদায় করা সম্ভব হবে? রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বললে ভাল হত না? অশোব ভট্টাচার্যের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করিনি ভাবছেন?’’ শিলিগুড়ির মেয়র তথা সিপিএম বিধায়ক বললেন, ‘‘পুর মন্ত্রীর কাছে একাধিক বার দরবার করেছি। ফোন করলে কখনও ধরেন, কখনও ধরেন না। সহজে দেখাও পাওয়া যায় না। কখনও সময়ই দেন না, কখনও দেখা করতে গিয়ে আড়াই-তিন ঘণ্টা করে বসে থাকতে হয়। অফিসারদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করায়।’’ অশোক ভট্টাচার্যের সখেদ প্রশ্ন, ‘‘আমি তো ২০ বছর রাজ্যের মন্ত্রী ছিলাম, এই দফতরটাই তো চালিয়েছি, আজ দেখা করতে গেলে মন্ত্রী বা অফিসাররা সহজে দেখাই করবেন না? এটা কি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে আঘাত নয়?’’
কবে বসছেন ধর্নায়? শিলিগুড়ির মেয়র বললেন, ‘‘আমার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছি। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’’
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy