Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সংসদে এসে মুকুলকে প্রণাম স্বপনের

tবিধানসভার বিদ্রোহ এ বার উঠে এল সংসদ চত্বরেও। আগামী রবিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি আসছেন। তার আগে আজ বিজেপি নেতা তথা নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু এবং প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে দেখা করে মমতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সিউড়ির বিদ্রোহী বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। আর সেই বৈঠক থেকে বেরিয়েই সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি প্রণাম করলেন অদূরে গাড়ি থেকে নামা মুকুল রায়কে।

বুধবার সংসদ ভবনে মুকুল রায় ও স্বপনকান্তি ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

বুধবার সংসদ ভবনে মুকুল রায় ও স্বপনকান্তি ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

বিধানসভার বিদ্রোহ এ বার উঠে এল সংসদ চত্বরেও।

আগামী রবিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি আসছেন। তার আগে আজ বিজেপি নেতা তথা নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু এবং প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে দেখা করে মমতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সিউড়ির বিদ্রোহী বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। আর সেই বৈঠক থেকে বেরিয়েই সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি প্রণাম করলেন অদূরে গাড়ি থেকে নামা মুকুল রায়কে।

সাত দিন আগে সিউড়ি পুরসভায় জল-প্রকল্পে আর্থিক তছরুপের তদন্ত এবং বস্তি উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নয়ছয়ের অভিযোগে রাজ্য বিধানসভায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে ধর্নায় বসেছিলেন স্বপনকান্তিবাবু। পরে দল থেকে সাসপেন্ড হন তিনি। তৃণমূলের ভিতরে স্বপনকান্তি আদতে দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কট্টর বিরোধী বলেই পরিচিত। অনুব্রতের মাথায় আবার হাত রয়েছে স্বয়ং দলনেত্রীর। স্বপন সে অর্থে সরাসরি মুকুলের লোক না হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুকুলবাবুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। স্বপনকান্তি আজ জানালেন, “মুকুল রায়ই আমাকে তৃণমূলে নিয়ে এসেছেন।” আর আজ মুকুলেরও লক্ষ্য ছিল তৃণমূলের মধ্যে বিক্ষুব্ধ স্বরকে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

স্বপনকান্তিবাবু সংসদে ঢোকার আগে মুকুলবাবু সেখানে পৌঁছে যান। নিজে গিয়ে দেখা করে আসেন বেঙ্কাইয়ার সঙ্গে। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কেও বলেন, স্বপনকান্তি আসছেন, তিনিও যেন এক বার দেখা করে নেন। বাবুল মুকুলকে জানান, বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন। আর বেঙ্কাইয়ার সঙ্গে বৈঠক হওয়ার পরে মুকুলবাবুর সঙ্গে দেখা হলে তাঁকে সটান প্রণাম করেন স্বপনকান্তি। এই দেখা কি পূর্বপরিকল্পিত নয়? হাসতে হাসতে মুকুল বলেন, “ঘটনাচক্রে দেখা হয়ে গেল!”

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, রাজ্যে মমতার বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ তৈরি হচ্ছে, সেটা কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপির কাছে তুলে ধরাটা আপাতত উদ্দেশ্য মুকুলবাবুর। সেই কারণেই বেঙ্কাইয়া নায়ডুর মতো হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে স্বপনকান্তিবাবুর দেখা করানোর ব্যবস্থা করেছেন তিনি। বৈঠকের পরে সিউড়ির বিধায়কের মন্তব্য, “দলের কাছে যে মর্যাদা পাইনি, বেঙ্কাইয়া এবং বাবুলের কাছ থেকে আজ তা পেয়ে আমি তৃপ্ত। জল এবং বস্তি উন্নয়নে কেন্দ্রীয় যোজনার টাকা যে ভাবে নয়ছয় করেছে স্থানীয় পুরসভা কর্তৃপক্ষ, তা নিয়ে অবিলম্বে তদন্ত হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বেঙ্কাইয়া নায়ডু।” এই দুই ক্ষেত্রেই আর্থিক বরাদ্দ এসেছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে।

বৈঠকের পরে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীই দাবি করেছেন, এই বৈঠকে রাজনীতি খোঁজা ঠিক নয়। বাবুল সুপ্রিয়র ব্যাখ্যা, “স্বপনকান্তিবাবু রাজনীতির কথা বলতে আসেননি, সিউড়ি তথা পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের কথা নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন। ভাল লাগল যে উনি রাজ্যের শাসক দলে থেকেও শিরদাঁড়া সোজা করে সেই সরকারেরই দুর্নীতির কথা বলছেন।” বাবুল সুপ্রিয় জানিয়েছেন, সিউড়ির বিধায়কের অভিযোগ বেঙ্কাইয়া নায়ডু ও তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। বেঙ্কাইয়াও পরে দাবি করেছেন, এই বৈঠকের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। উন্নয়নের কথা বলতেই সিউড়ির বিধায়ক তাঁদের কাছে এসেছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের দাবি যা-ই হোক, এই বৈঠক ও তার পিছনে মুকুল রায়ের তৎপরতা নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির ভিতরে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। এ দিন স্বপনকান্তির ক্ষোভ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বারবার কথা বলেও দুর্নীতির কোনও সুরাহা হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় সরকার তা করতে পারবে বলেই আশা করছেন সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল নেতা।

আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে সিউড়িতে তৃণমূলকে যে বেগ দিতে চলেছেন, বিদ্রোহী বিধায়ক তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। পুরসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থীও দিতে পারেন, জানিয়েছেন তিনি। দলের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে তাঁর মন্তব্য, “তৃণমূলের কোনও নেতা আমার নেতা নয়। কিছু দিন পরেই রাজ্যের মানুষ জবাব দেবেন দুর্নীতিতে কারা ডুবে আছেন।”

তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, মুকুল রায় তো এখনও তৃণমূলে রয়েছেন। তা হলে তিনিও কি আপনার নেতা নন? কিছুটা নাটকীয় ভাবে স্বপনকান্তি বলেন, “মুকুল রায় এখন নীলকণ্ঠ। সমুদ্রমন্থনের পর সবাই যখন অমৃতের জন্য লোলুপ, উনি বিষপান করেছেন। সিউড়ির দুর্নীতির বিষয়েও মুকুলবাবু কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন। দল ওঁর কথা শোনেনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mukul roy swapan ghosh parliament
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE