Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ছোট ছেলেকে আর সেনায় পাঠাতে সাহস করিনি

জঙ্গি-হানায় আগেও প্রাণ গিয়েছে এ রাজ্যের জওয়ানদের। কেমন আছে তাঁদের পরিবার?পুলওয়ামার জঙ্গি হানার খবর যাতে বাবা-মা জানতে না-পারেন, তার কম চেষ্টা করেননি সঞ্জয়।

কার্গিল যুদ্ধে নিহত দেবব্রতের ছবি নিয়ে তাঁর বাবা-মা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

কার্গিল যুদ্ধে নিহত দেবব্রতের ছবি নিয়ে তাঁর বাবা-মা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

পেরিয়ে গিয়েছে ১৯ বছর। বড় ছেলে দেবব্রতর স্মৃতি এখনও টাটকা হাবড়ার শ্রীনগরের পালপাড়ার বৃদ্ধ দম্পতি নিতাই দাস ও অবলারানির। এখনও দেবব্রতর জামাকাপড়, ট্রফি-সহ সব কিছু তাঁদের চোখের আড়ালে রেখে দেন ছোট ছেলে সঞ্জয়। দেখলেই বৃদ্ধ দম্পতির চোখে জল আসে। মনে পড়ে যায় হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের কথা। ২০০০ সালের ১৪ জানুয়ারি কার্গিলে জঙ্গিদের গুলিতে বছর পঁচিশের দেবব্রত নিহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে স্বপ্নগুলোও হারিয়ে গিয়েছিল!

পুলওয়ামার জঙ্গি হানার খবর যাতে বাবা-মা জানতে না-পারেন, তার কম চেষ্টা করেননি সঞ্জয়। কিন্তু সংবাদমাধ্যম থেকে সেই খবর জেনে গিয়েছেন নিতাইবাবুরা। তাই ক’দিন ধরে ফিরে আসছে দেবব্রতর স্মৃতি। ছেলের মৃত্যুতে প্রাপ্তিযোগ নিয়ে ক্ষোভ নেই দাস পরিবারের। বারবার জঙ্গি-হানার কড়া প্রত্যুত্তর দেওয়া হচ্ছে না বলেই তাঁদের ক্ষোভ। অবলারানি বলেন, ‘‘পুলওয়ামার খবরটা শোনার পর থেকেই মাথা ঘুরছে। আর কোনও বাবা-মায়ের কোল খালি হতে দেখতে চাই না।’’ নিতাইবাবু বলেন, ‘‘আমাদের ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে দেবব্রত সেনায় যোগ দিল। বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। সব শেষ হয়ে গেল। জঙ্গিদের কড়া শাস্তি চাই।’’

দেবব্রত নিহত হওয়ার দিন তিনেক পরে সে কথা হাবড়া থানার পুলিশের থেকে জানতে পারেন নিতাইবাবুরা। জাতীয় পতাকায় মোড়া কফিনবন্দি ছেলের দেহ নিয়ে এসেছিলেন জওয়ানেরা। সেনা থেকে দিল্লিতে ফ্ল্যাট এবং সঞ্জয়কে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। নিতে চাননি নিতাইবাবুরা। এত বছরে পাল্টে গিয়েছে অনেক কিছু। টালি-ইটের একতলা বাড়িটি দোতলা হয়েছে। এলাকার ক্লাবের তরফে দেবব্রতর আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়েছে। নিতাইবাবু এখন আর চাষের কাজ করতে পারেন না। সঞ্জয় লোহার রডের ছোটখাটো ব্যবসা করেন। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘ছোট ছেলেকে আর সেনাবাহিনীতে পাঠাতে সাহস করিনি। সেনাবাহিনী ছেলের পেনশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এককালীন কিছু টাকাও দিয়েছিল। আমাদের চলে যায়।’’

দেশে জঙ্গি হানার কথা শুনলেই দেবব্রতর স্মৃতি ফিরে আসে পরিবারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Terrorism Habra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE