মিলনেই মঙ্গল, নাকি বিচ্ছেদে অধিকতর মঙ্গল— সেই বিতর্কে সরগরম নবান্নের অন্দরমহল!
মিলন মানে শিল্প দফতরের সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের মিশে যাওয়া। সেটা এখন অতীত।
বিচ্ছেদ মানে শিল্প দফতরের সঙ্গে গাঁটছড়া খুলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের আবার আলাদা হয়ে যাওয়া। সেটাই আপাতত বর্তমান।
সংস্কারের পথে হেঁটে এ বছরের গোড়ায় বেশ কিছু দফতরকে মিলিয়ে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। প্রশাসনের বহর অনেকটা কমিয়ে উন্নয়নে গতি আনা এবং কোষাগারের উপরে চাপ কমানোই ছিল সরকারের মূল লক্ষ্য। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তিও জারি হয় ফেব্রুয়ারিতে।
তার পরে ছ’মাস কাটতে না-কাটতেই উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করলেন নবান্নের কর্তারা! প্রশাসন সূত্রের খবর, শিল্প দফতরের সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরকে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই দুই দফতরের মধ্যে আবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। বুধবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে।
১৬ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র নবান্নে জানিয়েছিলেন, ৬৩টি দফতরের মধ্যে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ১১টি দফতরকে মিলিয়ে দিয়ে ৫২টি দফতর করা হল। তখনই মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কাজকর্ম দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয় অমিতবাবুকে। এখন দুই দফতর ফের পৃথক হওয়ার পরেও অমিতবাবু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর দেখবেন, নাকি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর আগের মতো মুখ্যমন্ত্রীর হাতে চলে যাবে, প্রশাসনিক স্তরে এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশই শেষ কথা। সেই অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি জারি হবে।’’
তবে বৃহস্পতিবারেই শিল্পের দুই দফতরে সচিব নিয়োগ করে ফেলেছে নবান্ন। শিল্পসচিব রাজীব সিংহকে শুধু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিল্প দফতরের নতুন প্রধান সচিব হয়েছেন এস কিশোর।
দুই দফতরকে আবার পৃথক করার সরকারি সিদ্ধান্তকে ঘিরে প্রশাসনিক মহলে মূলত দু’রকম মত উঠে আসছে। এক পক্ষের মতে, মাথাভারী প্রশাসন এবং তার পিছনে দেদার খরচ— সরকারের এই চেনা ছবিটা বদলাতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গাড়ি-বাড়ি ও এক অফিস থেকে অন্য অফিসে ছোটাছুটিতে রাশ টেনে সেই অর্থে কী ভাবে উন্নয়নের পরিসর বাড়ানো যায়, সেই পথই খুঁজেছিলেন তিনি। তখন অবশ্য একাধিক কর্তা এই বলে সতর্ক করেছিলেন যে, পরিকাঠামোগত খোলনলচে বদলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা জরুরি। নবান্ন সূত্রের খবর, শিল্প দফতরের সঙ্গে মাঝারি শিল্প দফতরের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সেই ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। ফলে খরচ কমার বদলে কী ভাবে তা বেড়ে যাচ্ছিল, তারও সবিস্তার খতিয়ান জমা পড়ে নবান্নে।
অন্য পক্ষের যুক্তি, এই সময়পর্বে ভারী শিল্পের চেহারা খুব একটা বদলায়নি। উৎপাদন শিল্পেও তেমন সাড়া মেলেনি। অথচ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে একের পর এক দরজা খুলেছে। একাধিক উৎসাহ ভাতা ঘোষণা করে সরকার ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসায় নামা উদ্যোগীর পাশে দাঁড়িয়েছে, তেমনই বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত অনুদান দিয়ে মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদেরও লগ্নি করতে উৎসাহ জুগিয়েছে। এবং এই মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রই যে তাদের ‘পাখির চোখ’, প্রতি বছর বাজেট-বরাদ্দ বাড়িয়ে তা স্পষ্ট করে দিয়েছে সরকার। সেই ধারা বজায় রাখতেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরকে একক ভাবে কাজ করতে দেওয়ার দরকার ছিল।
সরকারি উদ্যোগে জানুয়ারিতে বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনের আসর বসছে। তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে শিল্পের দুই দফতরের মধ্যে বিভাজন লগ্নিকারীদের কোন বার্তা দেবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy