Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সব কামড় এক নয়, লালফিতের ফাঁসেই বিষ

ফল যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। উত্তর, উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে বিষধর সাপের ডিএনএ এবং বিষের গঠন পরীক্ষার কাজ শেষ হতে চললেও থমকে রয়েছে পূর্বাঞ্চল।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৭
Share: Save:

সাপের কামড়ে মৃত্যু আটকাতে যে সমীক্ষায় হিমাচলপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, মিজোরামের মতো রাজ্য অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে, সেখানে বেঁকে বসেছে পশ্চিমবঙ্গ!

ফল যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। উত্তর, উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে বিষধর সাপের ডিএনএ এবং বিষের গঠন পরীক্ষার কাজ শেষ হতে চললেও থমকে রয়েছে পূর্বাঞ্চল। বন দফতরের প্রধান সচিব গত বছরের অগস্টে এই সমীক্ষা চালানোর প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় সমস্ত সাহায্য দিতে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহকে নোটও পাঠিয়েছিলেন (মেমো ১৭৪৬)। তার পরেও বন দফতরের কিছু সিদ্ধান্তে এ রাজ্যে আটকে গিয়েছে সমীক্ষা।

বিশ্বের মধ্যে ভারত এবং ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ দীর্ঘ সময় ধরেই সাপের কামড় ও সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে শীর্ষে। বেশ কিছু দিন ধরেই চিকিৎসক ও সর্প-বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ অভিযোগ করছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে সাপে-কাটা রোগীদের অনেকের দেহে প্রচলিত প্রতিষেধক কাজ করছে না। চন্দ্রবোড়া, গোখরো, কালাচ বা কেউটে কামড়ানোর পরে রোগীকে সময়মতো ও পরিমাণ মাফিক প্রতিষেধক দিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না। তাই এ রাজ্যে বিষধর সাপের জিনগত গঠন ও তাদের বিষের রাসায়নিক গঠন নিয়ে বড় ধরনের সমীক্ষার দাবি তুলেছিলেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ডিএনএ ও বিষের রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী প্রতিষেধক না-দিলে মৃত্যু আরও বাড়বে।

এক ছোবলে

• বিশ্বে প্রতি বছর মৃত্যু এক থেকে দেড় লাখ

• এর মধ্যে ভারতেই ৪৬-৫০ হাজার

• ভারতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু পশ্চিমবঙ্গে

• ২০১৭-য় রাজ্যে সাপের কামড় খেয়েছেন প্রায় ২৩ হাজার

• সাপের বিষের কোনও প্রতিষেধক পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হয় না

• প্রতিষেধক আসে দক্ষিণ ভারত থেকে

গুরুত্বপূর্ণ এই সমীক্ষা চালানোর জন্য গত বছরেই অর্থ অনুমোদন করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সমীক্ষা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ব্রিটেনের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস-কে। ঠিক হয়, ভারতকে পাঁচটি জোন বা অঞ্চলে ভাগ করে এই সমীক্ষা চালানো হবে। পূর্বাঞ্চলের কেন্দ্র করা হয় পশ্চিমবঙ্গকে। মুখ্য সমীক্ষক নিযুক্ত হন ‘ন্যাশনাল স্নেকবাইট ম্যানেজমেন্ট (২০১৫-১৬) টাস্ক ফোর্স’-এর সদস্য তথা পশ্চিমবঙ্গে সাপের কামড় সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির রিসোর্স পার্সন, চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার। সাপ ধরার দায়িত্ব পান হার্পেটোলজিস্ট বিশাল সাঁতরা। ঠিক হয়, তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স’-এ সাপের ডিএনএ এবং বিষের পরীক্ষা হবে। কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এথিক্যাল কমিটির অনুমতিও মেলে।

কিন্তু রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ গত বছর ডিসেম্বরে চিঠি দিয়ে জানান, সমীক্ষা চালানোর অনুমতি একমাত্র দয়ালবন্ধুবাবুকে দেওয়া হবে। তবে সাপের ডিএনএ সংগ্রহ করা যাবে না এবং প্রস্তাবিত ১১টি জেলার বদলে শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি ও বাঁকুড়ায় সমীক্ষা চালানো যাবে। এর পরে সমীক্ষা আর এগোনো যায়নি। দয়ালবন্ধুবাবু বলেন, ‘‘সাপ ধরার লোক বা ল্যাবরেটরিগুলিকে অনুমোদন না-দিলে আমি একা কখনও এই সমীক্ষা চালাতে পারি? বন দফতর অনুমোদন দেবে না বলেই এমন অদ্ভুত একটা নির্দেশ দিয়েছে। অথচ অন্য রাজ্যগুলো কাজ প্রায় শেষ করে ফেলল।’’ সূত্রের দাবি, হিমাচল ও মিজোরামে এই সমীক্ষা চালিয়ে ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে, ওই দুই অঞ্চলের সাপের বিষের গঠন দক্ষিণ ভারতের সাপের চেয়ে আলাদা। কাজেই এলাকা-বিশেষে প্রতিষেধকও যে আলাদা হওয়া দরকার, সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। দয়ালবন্ধুবাবু জানান, এই সমীক্ষায় রাজ্যের প্রচুর অর্থ সাশ্রয়ও হতো। কারণ, সাপের কামড়ে মৃতদের রাজ্য ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়। ২০১৫-১৬-য় ৮২১ জনকে এই টাকা দিতে হয়েছে। তার উপরে প্রতিষেধক অনেকের দেহে কাজ না করায় অনেক বেশি মাত্রায় তা দিতে হয়। এতেও রোগী-পিছু অনেক বেশি খরচ হয়।

কেন অনুমতি দিচ্ছে না বন দফতর? রবিকান্ত সিংহের উত্তর, ‘‘সাপের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া যাবে না। আইনে বাধা আছে।’’ তা হলে অন্য রাজ্যগুলো দিল কী করে? তিনি বলেন, ‘‘জানি না কী ভাবে দিয়েছে।’’ আর দফতরের
প্রধান সচিব চন্দন সিংহের বক্তব্য, ‘‘অন্য রাজ্য অনুমতি দিয়ে থাকলে আবার আমাদের বিষয়টা খতিয়ে দেখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE