Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভুল বুঝে গোঁ, আপত্তি পোলিওয়

‘দো বুন্দ জিন্দেগি কা’। তাঁর তিন বছরের মেয়েকে জীবনের এই দু’ফোঁটা পালস পোলিও খাওয়াতে রাজি নন চাঁচল ব্লকের ভাকরি পঞ্চায়েতের মানিকনগর গ্রামের বকুল শেখ। একই গোঁ গোরখপুরের বাসিন্দা আনোয়ারুল শেখেরও। সেই আপত্তিতে আজ অবধি পোলিও খাওয়া হয়নি তাঁর দু’বছরের নাতনির।

জয়ন্ত সেন
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৪
Share: Save:

‘দো বুন্দ জিন্দেগি কা’। তাঁর তিন বছরের মেয়েকে জীবনের এই দু’ফোঁটা পালস পোলিও খাওয়াতে রাজি নন চাঁচল ব্লকের ভাকরি পঞ্চায়েতের মানিকনগর গ্রামের বকুল শেখ। একই গোঁ গোরখপুরের বাসিন্দা আনোয়ারুল শেখেরও। সেই আপত্তিতে আজ অবধি পোলিও খাওয়া হয়নি তাঁর দু’বছরের নাতনির।

দু’টি পরিবারকে বোঝাতে স্বাস্থ্য কর্মী, আশা কর্মী থেকে শুরু করে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তো বটেই, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের সদস্যরা অবধি ওদের বাড়ি গিয়েছেন গত ক’দিন ধরে। কিন্তু দুই পরিবারই নিজেদের অবস্থানে অনড় হয়ে। প্রশাসনের এখন আশঙ্কা, এই আপত্তি আবার আশপাশের অন্যদের মধ্যে সংক্রমিত হবে না তো!

পালস পোলিও খাওয়ানোর ব্যাপারে মালদহ অনেক জেলা থেকেই এগিয়ে। অনেক আগে এক বার ভাঙা রাস্তা সারিয়ে দেওয়ার দাবিতে কালিয়াচকের একটি গ্রাম পোলিও বয়কট করেছিল। কিন্তু বাচ্চাদের শরীর খারাপ হবে— এই কথা বলে কেউ পোলিও বয়কট করেনি এই জেলায়। এ কথা জানিয়ে প্রশাসন সূত্রের দাবি, চাঁচল-২ ব্লকের মানিকনগর ও গোরখপুরের এই দুই ঘটনা তাই ব্যতিক্রমই বলা যায়।

ইংরেজবাজার থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে মানিকনগর গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দা, পেশায় গ্যারাজ কর্মী বকুল শেখের বক্তব্য, তাঁর তিন বছরের মেয়ে মেঘনা খাতুনকে নিয়মিত পোলিও খাওয়ানো হত। কিন্তু গত বারে পোলিও খাওয়ানোর পরেই মেয়েটির জ্বর ও পেট খারাপ হয়েছিল। তাই তিনি গত রবিবার পালস পোলিও কেন্দ্রে নিয়ে যাননি মেয়েকে। পরের দিন স্বাস্থ্য কর্মী থেকে শুরু করে তাঁর পড়শি, জেলা পরিষদের বিরোধী নেত্রী রেহেনা পরভিন অবধি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে এসেছেন বকুলকে। বারবার করে বলেছেন, বাচ্চার জ্বর-পেট খারাপ অন্য যে কোনও কারণে হতে পারে। কিন্তু এর সঙ্গে পালস পোলিওর কোনও রকম সম্পর্ক নেই। কিন্তু বকুলের এক কথা, ‘‘আমি আর ওকে পোলিও খাওয়াব না। কিছুতেই না।’’

গোরকপুরের বাসিন্দা ইটভাটার শ্রমিক আনোয়ারুল শেখের ঘটনা অবশ্য অন্য। তাঁর দু’বছরের নাতনিকে পোলিও তো দূরের কথা, জন্মের পর থেকে একটির বেশি টিকাও নিতে দেননি। তাঁর ছেলে রাইজুল ভিন রাজ্যে। বৌমা টুম্পা বিবি জানেন না এর সঠিক কারণ।

এত চেষ্টা করে যেখানে ফল হয়নি, সেখানে এই দুই পরিবারকে কী করে বোঝানো সম্ভব, সেই পথই এখন খুঁজছে জেলা প্রশাসন। রীতিমতো বিব্রত সকলে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসেনজিৎ হালদার বলেন, ‘‘ওই দুই পরিবারের মধ্যে ভুল ধারণা জন্মেছে। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি।
ফের তাঁদের বাড়ি যাব।’’ জেলা পরিষদের বিরোধী নেত্রী রেহেনা পরভিন বলেন, ‘‘হাল আমরা ছাড়তে রাজি নই। আবারও গিয়ে বোঝানো হবে পরিবার দুটিকে।’’

কিন্তু কী ভাবে, এখনও জানে না প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Polio Vaccination পোলিও
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE