Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অনেকের এমফিল নেই, আশঙ্কায় মনোবিদরা

মনোবিদদের পেশাতেও সরকার নির্দেশিত বৈধতার একটি মাপকাঠি রয়েছে। কিন্তু সেই মাপকাঠির শর্ত পূরণ না-করেও সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক ওই পেশায় প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪৭
Share: Save:

গত কয়েক মাস ধরেই রাজ্য তোলপাড় হচ্ছে ভুয়ো ডাক্তার ধরা পড়ার একাধিক ঘটনায়। যার জেরে চিকিৎসা জগৎ ও চিকিৎসা-পদ্ধতির সঙ্গে জড়িত অন্য একটি পেশার মানুষের ভিতরেও আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তার ঝ়ড় উঠেছে। তাঁরা হলেন মনোবিদ।

মনোবিদদের পেশাতেও সরকার নির্দেশিত বৈধতার একটি মাপকাঠি রয়েছে। কিন্তু সেই মাপকাঠির শর্ত পূরণ না-করেও সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক ওই পেশায় প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন। তা হলে কি তাঁদেরও এ বার ‘ভুয়ো’ বলে ধরা হবে? ধরা পড়লে যেতে হবে জেলে? পশ্চিমবঙ্গের মনোবিদদের একটা বড় অংশ এখন এই সব প্রশ্নের উত্তর হাতড়াচ্ছেন।

তাঁরা ভয় পাচ্ছেন কারণ, দীর্ঘদিন ধরে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিস করলেও তাঁদের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এমফিল ডিগ্রি নেই। তাঁরা মনোবিদ্যায় (সাইকোলজি), ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি অথবা অ্যাপ্ল্যায়েড সাইকোলজির মতো বিষয়ে এমএ বা এমএসসি করেছেন। তার পরই ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করছেন। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের ‘রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ বা ‘আরসিআই’-এর নিয়মানুযায়ী— ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এমফিল করা না থাকলে কেউ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিস করতে পারবেন না।

নয়ের দশকে আরসিআই এই নিয়ম করলেও এতদিন এই মনোবিদরা তা গ্রাহ্য করেননি। ২০০৭ সাল পর্যন্ত রাজ্যে এমন কোনও সংস্থাও ছিল না যেখানে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এমফিল করা যায়। ফলে ওই মনোবিদদের পক্ষে একটা জোরালো যুক্তি ছিল। ২০০৭-এ রাজ্যের দু’টি জায়গায় (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগ) ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি-তে আরসিআই-স্বীকৃত এমফিল পাঠ্যক্রম চালু হয়।

তার পরেও কিন্তু বিনা এমফিলে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করা মনোবিদরা অনেকেই ভয় পাননি। এখন পাচ্ছেন! কারণ এখন তাঁদের আশঙ্কা হচ্ছে, চিকিৎসকদের ডিগ্রি নিয়ে যখন কড়াকড়ি শুরু হয়েছে, তখন তাঁরাও বাদ যাবেন না। আরসিআই সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে যত মনোবিদ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদের ৮৫ শতাংশরই সাইকোলজি বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এমএ বা এমএসসি করা। এমফিল নেই। রোগীরা অতশত না জেনেই তাঁদের দ্বারস্থ হচ্ছেন।

আরসিআই-এর মেম্বার সেক্রেটারি এসকে শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘‘যাঁরা সাইকোলজি বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির মতো বিষয়ে শুধু এমএ বা এমএসসি করেছেন, তাঁরা রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সেলার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিস করতে হলে এমফিল লাগবে। পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য অনেক রাজ্যে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। এ বার বিষয়টি নিয়ে কড়া হবো।’’

মনোচিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘‘বিষয়টি এখন অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তবে আমাকে অনেকে উন্নাসিক ভাবলেও আমি শুধু ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এমফিল ডিগ্রিধারীদের কাছেই কেস রেফার করি।’’ আবার অনেকে দাবি করছেন, বাস্তব অবস্থা বিচার না করেই কড়া হতে চাইছে আরসিআই। তাঁদের ব্যাখ্যায়, গোটা ভারতে হাতে গোনা জায়গায় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এমফিল হয়। সেখানেও আসন খুব কম। অথচ, কোটি-কোটি ভারতীয় মানসিক অবসাদ ও অন্যান্য মনোরোগে ভুগছেন। খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এতে উদ্বিগ্ন। আরসিআইয়ের নিয়ম মানতে গেলে তো রোগীদের জন্য ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মিলবে না।

মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের মতে, ‘‘যাঁরা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এমফিল করেন, তাঁদের বেশির ভাগ প্র্যাকটিসে আসছেন না। উল্টো দিকে, যাঁদের শুধু এমএসসি করা, তাঁদের অনেকেই দীর্ঘদিন প্র্যাকটিসের অভিজ্ঞতায় কাজে অত্যন্ত দক্ষ ও সফল। বহু রোগী তাঁদের উপর নির্ভরশীল। আরসিআই-কে বুঝতে হবে, এই পেশাটা অনেকটাই ব্যক্তিগত স্কিল-নির্ভর।’’ এমফিল থাকলেও অবশ্য প্রেসক্রাইব করা যায় না। কিন্তু অনেকেই তা করেন। প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। অনেকে আবার ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো ‘অনলাইন কাউন্সেলিং’-এর উপর আরসিআই কতটা নিয়ন্ত্রণ রেখেছে— সেই সব প্রসঙ্গও টেনেছেন। কিন্তু তাতে সমাধান সূত্র হাতে আসেনি।

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE