Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
তথ্য দিচ্ছেন প্রভাবশালীরাই, দাবি সিবিআইয়ের

রোজ ভ্যালি ও সারদার মোহনায় নতুন নাম, সন্দেহের তিরে এক সাংসদ

সময় যত এগোচ্ছে, সারদা ও রোজ ভ্যালি, দু’টি তদন্তের ধারা দু’টি নদীর মতো মিলে যাচ্ছে মোহনায়।সিবিআই সূত্রের খবর, কলকাতা ও ভুবনেশ্বরে বসে তদন্তকারীরা যত বেশি নথি ঘেঁটে দেখছেন, যত জনকে ডেকে জেরা করছেন, ততই দেখা যাচ্ছে প্রভাবশালীদের বড় অংশই দু’টি সংস্থার সঙ্গেই জড়িত ছিলেন।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৮
Share: Save:

সময় যত এগোচ্ছে, সারদা ও রোজ ভ্যালি, দু’টি তদন্তের ধারা দু’টি নদীর মতো মিলে যাচ্ছে মোহনায়।

সিবিআই সূত্রের খবর, কলকাতা ও ভুবনেশ্বরে বসে তদন্তকারীরা যত বেশি নথি ঘেঁটে দেখছেন, যত জনকে ডেকে জেরা করছেন, ততই দেখা যাচ্ছে প্রভাবশালীদের বড় অংশই দু’টি সংস্থার সঙ্গেই জড়িত ছিলেন। এমনকী এ ক্ষেত্রে এমপিএস, আইকোর, প্রয়াগ-সহ অন্য বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার নামও উল্লেখ করছেন তদন্তকারীরা। অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীরা ওই সব অর্থলগ্নি সংস্থার কাছ থেকেও অনেক টাকা নিয়েছেন। উঠে আসছে নতুন নতুন প্রভাবশালীর নামও।

ভুবনেশ্বরে গত কয়েক দিন ধরে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেরা করে দলের আর এক সাংসদের নামও পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। সুদীপ এখনও সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাঁকে আবার আদালতে তোলার কথা। তদন্তকারীরা জেনেছেন, সারদার টাকায় কী ভাবে নতুন খবরের কাগজ করা যায় তার জন্য ২০১১ সালে কলকাতার এক সংবাদপত্রের অফিসে সুদীপ এবং ওই সাংসদের সঙ্গে সারদা কর্তার বৈঠক হয়েছিল।

সিবিআই সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ওই সাংসদ সারদার কাছ থেকে কী ধরনের সুবিধা নিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, সারদার উপহার দেওয়া একটি গাড়ি ওই সাংসদ ব্যবহার করতেন। পরে ওই গাড়ির মালিকানা সাংসদের এক আত্মীয়ের নামে পরিবর্তন করা হয়। সিবিআইয়ের দাবি, ২০১১ সালে সংবাদপত্রের অফিসে ওই বৈঠকের পর থেকেই সুদীপ্তর সঙ্গে সুদীপ এবং ওই সাংসদের নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়। ওই সাংসদ সেই সময়ে রোজ ভ্যালির কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে সিবিআই।

সিবিআই অফিসারদের দাবি, ২০১৩ সালে মামলার আগে সারদার থেকেই বেশি সুবিধা নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। সেই সময়ে রোজ ভ্যালি থেকে সুবিধা নেওয়ার পরিমাণ ছিল তুলনায় কম। সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার পরে প্রভাবশালীদের একাংশের নজর গিয়ে পড়ে রোজ ভ্যালি ও অন্য সংস্থাগুলির উপরে। অভিযোগ উঠেছে, ওই সব সংস্থায় যখন-তখন লোক পাঠিয়ে টাকা চেয়ে পাঠানো, পরিচিত কারও অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন করার নির্দেশ, হোটেলের বিল মেটাতে বলা, বিদেশে ভ্রমণের খরচ দিতে বলা, গাড়ি কিনে দিতে বলা— এ সব ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

তদন্তকারীরা জেনেছেন, একটা সময়ে প্রভাবশালী কেউ ফোন করলে বা তাঁদের পাঠানো লোক দেখা করতে এলে দৃশ্যতই বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যেত অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তা-ব্যক্তিদেরও। এই প্রভাবশালীদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের খরচ ও নানা আবদার মেটাতে গিয়ে এই সব সংস্থার কর্তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন বলে তাঁদের জেরা করে সিবিআই জেনেছে। যে কারণে, গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ওই কর্তারা গড়গড় করে বলে দিয়েছেন কবে, কে বা কারা, তাঁদের কাছ থেকে কী ধরনের সুবিধা নিয়েছেন। এমনকী এখন যে প্রভাবশালীরা ধরা পড়ে যাচ্ছেন, কয়েক দিন হেফাজতে থাকার পরে তাঁরাও মুখ খুলতে শুরু করছেন। অফিসারদের কথায়, ‘‘তাঁরা জেলে থাকবেন আর অন্য অভিযুক্তরা খোলা আকাশের নীচে আরামের জীবন কাটাবেন, এটা মেনে নিতে চাইছেন না বন্দি প্রভাবশালীরা।’’

রোজ ভ্যালি ও সারদার তদন্তের জন্য এমনিতে পৃথক দল গড়েছে সিবিআই। কিন্তু একই প্রভাবশালী দু’টিতেই জড়িত, এ রকম একের পর এক উদাহরণ আসতে থাকার পরে সিবিআইয়ের দু’টি দলই মাঝেমধ্যে একসঙ্গে বসছেন। সারদা কাণ্ডের নথিও নতুন করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের শুরুতে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের বিষয়ে সারদার একাধিক চালক ও নিরাপত্তারক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছিল বলে সিবিআই জানিয়েছে। ওই বয়ান ফের খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। অফিসারেরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ওই কর্মচারীদের আবার ডাকা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

MP Saradha scam Rose Valley chit fund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE