Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
State News

অপসারিত অধীর, প্রদেশ কংগ্রেসের নয়া সভাপতি সোমেন মিত্র

সোমেন মিত্র এর আগে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত। তিনি সভাপতি থাকাকালীনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তাঁর নতুন দল তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেন।

সরিয়ে দেওয়া হল অধীররঞ্জন চৌধুরীকে। প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতি সোমেন মিত্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সরিয়ে দেওয়া হল অধীররঞ্জন চৌধুরীকে। প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতি সোমেন মিত্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:৪৪
Share: Save:

প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে আচমকা সরিয়ে দেওয়া হল অধীররঞ্জন চৌধুরীকে। নতুন সভাপতি হলেন সোমেন মিত্র। গত বেশ কয়েক বছর রাজনীতির মাঠে-ময়দানে প্রায় দেখাই যায়নি যে নেতাকে, সেই সোমেন মিত্রকে এক ধাক্কায় বাংলার কংগ্রেসের মুখ করে তোলা হবে, এমনটা রাজনৈতিক শিবিরে বেশ অপ্রত্যাশিতই ছিল। তাই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে সোমেনের প্রত্যাবর্তনের খবর বেশ হইচই ফেলেছে রাজনৈতিক শিবিরে।

এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক অশোক গহলৌতের জারি করা এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতি হচ্ছেন সোমেন মিত্র। এত দিন যিনি সভাপতি ছিলেন, সেই অধীর চৌধুরীকে করা হচ্ছে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান। প্রদেশ কংগ্রেসের আর এক প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকেও নিয়ে আসা হয়েছে সামনের সারিতে। কো-অর্নিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে তাঁকে। চার জন কার্যনির্বাহী সভাপতির নামও ঘোষণা করেছে এআইসিসি। তাঁরা হলেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি, দক্ষিণ মালদেহ সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী এবং বাঘমুন্ডির বিধায়ক তথা বিধাসভায় বিরোধী দলের উপনেতা নেপাল মাহাত।

সোমেন মিত্র এর আগে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত। তিনি সভাপতি থাকাকালীনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তৃণমূল তৈরি করেন। ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কংগ্রেস মাত্র ১টি আসন পাওয়ায় পরাজয়ের দায় স্বীকার করে সোমেন মিত্র প্রদেশ সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

২০০৮ সালের জুলাই মাসে সোমেন কংগ্রেস ছেড়ে প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস গড়েন। ২০০৯ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। সেই বছরই ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। সোমেনের ছেড়ে যাওয়া শিয়ালদহ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জেতেন সোমেনেরই স্ত্রী শিখা। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটেও শিখা তৃণমূলের হয়ে জেতেন। তবে কিছু দিনের মধ্যেই প্রকাশ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন তিনি। এই পর্বে সোমেন মূলত নীরব থাকার লাইন নেন।

২০১৪-র জানুয়ারি মাসে সোমেন আবার কংগ্রেসে ফেরেন। তার আগে তৃণমূলের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন এই প্রবীণ নেতা।

আরও পড়ুন: ইসলামপুরে গুলিবিদ্ধ আরও এক ছাত্রের মৃত্যু, বন‌্ধ ঘিরে অশান্তি

আরও পড়ুন: বিসিএস তালিকার শীর্ষে বিতর্কিত প্রার্থীই

কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের চিঠিতে জানানো হল প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন প্রেসি়ডেন্ট হলেন সোমেন মিত্র। —নিজস্ব চিত্র।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে যে অধীর চৌধুরীকে সরানো হবে, এমন কোনও আভাস কিন্তু বিধান ভবনের কাছেও ছিল না। শঙ্কর মালাকার, নেপাল মাহাতদের যে কার্যনির্বাহী সভাপতি করা হতে পারে, সে জল্পনা বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু অধীরকে সরিয়ে সোমেনকে সভাপতি পদে আনা হবে, এমন কোনও পূর্বাভাস একেবারেই ছিল না। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল গাঁধী নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক গৌরব গগৈ সে বিষয়ে কোনও বিশদ প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রদেশ সভাপতি পদে বদল হয়েছে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। এখনই প্রতিক্রিয়া দেব না। এআইসিসি-তে নানা বিষয় নিয়েই কথা চলছে। সময় মতোই প্রতিক্রিয়া জানাব।’’

প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতি এ দিন সন্ধ্যায় বিধান ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনও করেন। তিনি প্রথমেই রাহুল গাঁধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সোমেন মিত্রের কথায়, ‘‘২০ বছর আগে এই পদ ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আজ ২০ বছর বাদে যে ফের আমার উপরে আস্থা রেখে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড আমাকে এই পদে ফিরিয়ে আনলেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’’
প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতির সাংবাদিক সম্মেলনে যে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বা অন্য কোনও জোটের প্রসঙ্গ উঠবেই, সোমেন মিত্রের মতো পোড় খাওয়া কংগ্রেস নেতার তা না জানার কথা নয়। তাই প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু আগে তিনি নিজেই জানান, কংগ্রেস আপাতত কোনও জোট নিয়ে ভাবছে না। আপাতত কংগ্রেসকে শক্তিশালী করে তুলে ‘নিজের পায়ে দাঁড় করানোর’ কথা ভাবছেন তিনি, বলেন সোমেন মিত্র। আর তৃণমূল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেসের কোনও লাভ হয় না। এ রাজ্যে এটা আগেও দেখা গিয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে জোটে গিয়ে ভোটে লড়লে হয়তো সাময়িক লাভ হবে। কিন্তু আসলে তাতে সংগঠনের ক্ষতিই হবে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, যে দল রোজ ভয় বা প্রলোভন দেখিয়ে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের ভাঙিয়ে নিচ্ছে, সেই দলের সঙ্গে জোট করলে আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হবে, তা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। আর বামেদের সঙ্গে জোট নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সোমেন ফের বলেন, ‘‘কংগ্রেস পরগাছা নয়। আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তার পরে বলতে পারব, এর সঙ্গে যাব, নাকি ওর সঙ্গে যাব। কংগ্রেসের এখন যা অবস্থা, তাতে আমরা যদি একতরফা কারও সঙ্গে জোটের কথা বলি, তা হলে যাদের সঙ্গে যাব বলছি, তারাই হয়তো বলতে পারে, তোমার আছেটা কী যে, তোমাদের সঙ্গে জোট করব?’’

দেখুন ভিডিয়ো


একই সঙ্গে সোমেন মিত্র বুঝিয়ে দিয়েছেন, অধীর জমানার মতো কট্টর তৃণমূল বিরোধী অবস্থানে তিনি নেই। যত বার তৃণমূলের সঙ্গে জোটের প্রশ্ন উঠেছে, অধীর চৌধুরী তত বারই স্পষ্ট করে তা নাকচ করেছেন। দিল্লির নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্তই নিক, বাংলার কংগ্রেস অটল থাকবে তৃণমূলের বিরোধিতায়— বার বার বলেছেন অধীর। কিন্তু সোমেন মিত্র প্রথম দিনেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি অধীরের মতো কট্টরবাদী অবস্থানে নেই, দিল্লি যে ভাবে বলবে, কলকাতা সে ভাবেই চলবে। তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিষয়ে যদি আপনার মতামত জানতে চায় হাইকম্যান্ড, তা হলে কী জানাবেন? সোমেন বলেন, ‘‘যখন হাইকম্যান্ড জানতে চাইবে, তখন হাইকম্যান্ডকেই জানাব।’’ এই কথাটুকু বলে থেমে গেলে বলা যেত না যে সোমেন মিত্র তৃণমূলের সঙ্গেও জোটে প্রস্তুত। কিন্তু সোমেন ওইটুকুতে থামেননি। তিনি শুক্রবার নিজের অবস্থান আরও একটু স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস একটা সর্বভারতীয় দল। কার সঙ্গে জোট হবে, কার সঙ্গে হবে না, তা ঠিক করার মালিক আমি নই। ওটা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্বই স্থির করবেন।’’ অর্থাৎ, দিল্লি তৃণমূলকে কাছে টানলেও, বাংলার কংগ্রেস মমতার বিরোধিতায় অনড় থাকবে— অধীর জমানার এই নীতি সভাপতি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবর্জনার স্তূপে ছুড়ে ফেলেছেন সোমেন। কিন্তু কংগ্রেসের বিধায়ক এবং নেতা-কর্মীদের ভাঙিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলকে আক্রমণটাও করেছেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক। অধীর ঘনিষ্ঠরা অবশ্য বলছেন, সোমেনের ওই আক্রমণকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখার দরকার নেই। কারণ তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার পথ মসৃণ করতেই তাঁকে সভাপতি পদে আনা হল, এমন তত্ত্ব সভাপতিত্বের প্রথম দিনেই যাতে প্রতিষ্ঠিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সোমেন মিত্রকে ওই কথাগুলো বলতেই হত।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE