Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal News

অধীরপন্থীদের ‘খেদানো’ শুরু, কংগ্রেস দফতরের সামনে ‘আক্রান্ত’ দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক

দলের মুখপত্র প্রদেশ কংগ্রেস বার্তার সম্পাদক সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরের সামনেই মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সন্ময়বাবু রবিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘দৌড়ে বাসে উঠে পড়তে পেরেছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছি। না হলে শনিবার কী হত, আমি জানি না।’’

অধীর চৌধুরী ও সোমেন মিত্র। —ফাইল ছবি

অধীর চৌধুরী ও সোমেন মিত্র। —ফাইল ছবি

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:৪২
Share: Save:

সভাপতি বদলাতেই প্রদেশ কংগ্রেসে দফতরে চেনা বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ওঠা শুরু হয়ে গেল। বিধান ভবনের সামনে মার খেতে হল দলীয় মুখপত্রের সম্পাদককে। এমনই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে অধীর-শিবির থেকে। বলাই বাহুল্য, অভিযোগের তির সোমেন মিত্রের অনুগামীদের বিরুদ্ধে।

শুক্রবার অধীর চৌধুরীকে সরিয়ে সোমেন মিত্রকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করা হয়েছে। সে দিন সন্ধ্যা থেকেই অপছন্দের লোকজনকে প্রদেশ কংগ্রেস দফতর থেকে ‘খেদিয়ে’ দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন সোমেন-পন্থীরা। অভিযোগ অধীর চৌধুরীর অনুগামীদের।

ঘটনাপ্রবাহের সূত্রপাত নতুন প্রদেশ সভাপতির প্রথম সাংবাদিক বৈঠকের পোডিয়াম থেকেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় সোমেন মিত্র তখন সদ্য সাংবাদিক সম্মেলন কক্ষে ঢুকে মাইক্রোফোনের সামনে বসেছেন। তাঁর দু’পাশের চেয়ারও চলে গিয়েছে অনুগামীদের দখলে। চেয়ারের পিছনে, পাশে, পোডিয়ামের সামনে— উপচে পড়ছে অনুগামীদের ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে ওমপ্রকাশ মিশ্র সৌমেনের কাছাকাছি পৌঁছনোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ভিড়ের মাঝেই কেউ তাঁকে বাধা দিলেন এবং বললেন, সোমেন মিত্র তাঁকে ঢুকতে দিতে বারণ করেছেন। বাধা পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওমপ্রকাশ। গলা সপ্তমে চড়িয়ে সোমেনকে সরাসরি তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনি আমাকে ঢুকতে দিতে বারণ করেছেন?’’ সোমেন বিরক্ত মুখভঙ্গি নিয়ে তাকান, হাত দেখিয়ে সকলকে শান্ত হতে বলেন, কিন্তু ওমপ্রকাশকে ঢুকতে দেওয়ার নির্দেশ তিনি দেননি। ফলে ওমপ্রকাশ সাংবাদিক সম্মেলন কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান।

আরও পডু়ন: হাসপাতালের পথ আটকে গুলিবিদ্ধ রাজেশের ক্ষতস্থানে আঘাত! চাঞ্চল্যকর দাবি বিজেপির

পরের দিন অর্থাৎ শনিবার ফের একই রকমের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। দলের মুখপত্র প্রদেশ কংগ্রেস বার্তার সম্পাদক সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরের সামনেই মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সন্ময়বাবু রবিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘দৌড়ে বাসে উঠে পড়তে পেরেছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছি। না হলে শনিবার কী হত, আমি জানি না।’’

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু প্রদেশ কংগ্রেস বার্তার সম্পাদক নন, তিনি দলের দীর্ঘ দিনের কর্মী। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি পানিহাটি পুরসভার কাউন্সিলর। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে পানিহাটি বিধানসভা কেন্দ্রেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। হেরে যান, কিন্তু পরাজয়ের ব্যবধান বলে দিয়েছিল, সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াই দিয়েছেন। রবিবার তিনি বললেন, ‘‘কালকে যা হয়েছে, ৩৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনও সে রকম ঘটনার মুখোমুখি হইনি। যে ভাবে আক্রান্ত হয়েছি, তাতে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেছিলাম।’’

আরও পড়ুন: অমিতাভকে ভোটে দাঁড় করিও না, রাজীবকে বলেছিলেন ইন্দিরা

কী ঘটেছিল শনিবার। সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, প্রদেশ কংগ্রেস বার্তার কর্মীদের দিয়ে শনিবার তিনি বিধান ভবনে যান। কিন্তু পত্রিকার জন্য নির্দিষ্ট ঘরটিতে তিনি বা তাঁর কর্মীরা ঢুকতে পারেননি। ঘরের দরজায় তালা দেওয়া ছিল এবং সোমেন মিত্রের ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত বাদল ভট্টাচার্য চাবি দেননি— অভিযোগ সন্ময়ের। সন্ময়ের কথায়, ‘‘আমি নীচে নেমে এসে প্রদেশ দফতরের সামনের একটি দোকানে চা খাচ্ছিলাম। উপরে তখন প্রদেশ কংগ্রেস বার্তার কর্মীরা অপেক্ষা করছেন, ঘরে ঢুকতে পারছেন না। আমি তাঁদের ফোন করে জানাই, আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি। এমন সময়, বেশ কয়েক জন যুবক তেড়ে এসে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে দেয়। আমি একটি বাস আসতে দেখে হাত দেখাই বাস থামতে আমি সে দিকে এগিয়েও যাই। তখনই পিছন থেকে এসে দমাদ্দম মার শুরু করে।’’ সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি বাসটির গায়ে পড়ে গিয়েছিলেন, কোনও মতে দরজার হ্যান্ডল ধরে সামলে নেন। বেগতিক বুঝতে পেরে কন্ডাক্টর তাঁকে হাত ধরে ভিতরে টেনে নেন।

শুধু ওমপ্রকাশ আর সন্ময়েই শেষ হচ্ছে না আখ্যান। অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন বিধান ভবনে যাঁদের বেশি দেখা যেত, তাঁদের অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। অধীরের রাজনৈতিক সচিব হিসেবে যাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল কয়েক মাস আগে, সেই নিলয় প্রামাণিক বা সোশ্যাল মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা অনুপম ঘোষ— এঁরাও এখন সোমেন অনুগামীদের নিশানায় বলে কংগ্রেস কর্মীদের একাংশই দাবি করছেন। অনুপম-নিলয়রা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।

আক্রান্ত হওয়ার পরে সন্ময়বাবু মুখ খুলেছেন ঠিকই। তবে তিনি সরাসরি সোমেন মিত্রের দিকে আঙুল তোলেননি। তিনি বলেন, ‘‘রবিবার সকালে সোমেন মিত্রের ছেলে রোহন আমাকে ফোন করেন। তিনি আমার খোঁজখবর নেন। তাঁর ফোন থেকেই সোমেনবাবুও কথা বলেন আমার সঙ্গে। যা ঘটেছে, তা অনভিপ্রেত এবং তিনি এমনটা চাননি, সোমেন মিত্র আমাকে এমনই বলেছেন।’’ আক্রান্ত নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, সোমেন মিত্রের নির্দেশে এ সব হয়নি বলেই তাঁর বিশ্বাস। সোমেন-ঘনিষ্ঠ বাদল ভট্টাচার্য-সহ কয়েক জনই এ সব ঘটাচ্ছেন বলে সন্ময়ের ধারণা।

বাদল ভট্টাচার্য কিন্তু অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি রবিবার বলেন, ‘‘সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় কোথায় ছিলেন শনিবার? তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে আমি অন্তত দেখিনি। মনগড়া গল্প বানানো হচ্ছে। সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও ঘটনাই ঘটেনি।’’ প্রদেশ কংগ্রেস বার্তার যে কর্মীরা দীর্ঘক্ষণ দলীয় দফতরে শনিবার অপেক্ষা করছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কি কেউ কোনও খারাপ ব্যবহার করেছেন? পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন বাদল। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘সন্ময়বাবু কী বলছেন, জানি না। প্রদেশ কংগ্রেস বার্তার যে কর্মীদের আমি শনিবার তিনতলায় বসিয়ে রেখেছিলাম, তাঁদের কাছে জিজ্ঞাসা করুন, কেউ কোনও খারাপ ব্যবহার করেছে কি না। তা হলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Somen Mitra Adhir Choudhury Conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE