রাজ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার এবং আইনের শাসন ফেরাতে সাধারণ মানুষের কাছে দলবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদে এগিয়ে আসার আর্জি জানালেন অশোক মিত্র, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো বামপন্থী বিশিষ্ট জনেরা। অস্ত্রের মুখে পাল্টা হিংসার পথে না গিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে মানুষের একজোট হওয়ার পক্ষেই আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু রাজ্যের ৯১টি পুরসভার ভোটের জন্য প্রচারের সময়সীমা ফুরিয়ে যাওয়ার পরে বিশিষ্ট জনেরা কী ভাবে কলকাতায় সভা করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল। পাঁচ বছর আগের পুরভোটের মুখে প্রচারের মেয়াদ ফুরোনোর পরেও কলকাতা প্রেস ক্লাবে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন পরিবর্তনপন্থী বিশিষ্টেরা। সে বার প্রশ্ন তুলেছিলেন বামেরা, এ বার অভিযোগকারী তৃণমূল।
অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে বৃহস্পতিবার ‘অধিকার আক্রান্ত, ফিরে এসো গণতন্ত্র’ শীর্ষক একটি প্রতিবাদ-সভায় ছিলেন নানা জগতের বিশিষ্টেরা। অসুস্থতার জন্য আসতে না পারলেও রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র লিখিত বার্তায় বলেন, ‘এ রাজ্য এই মুহূর্তে বর্বরতমদের পদলাঞ্ছিত। মুখ্যমন্ত্রী সমাজবিরোধীদের সর্বময়ী নেত্রী। গণতন্ত্র ভূলু্ণ্ঠিত’। গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে এবং আইনের শাসন ফেরাতে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন অশোকবাবু। তাঁর বার্তা সভায় পড়ে দেন ভারতী মুৎসুদ্দি। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথবাবু প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এ কোন রাজ্যে বাস করছি? কেন ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে না? কেন আমার কথা বলার, মতপ্রকাশের অধিকার থাকবে না? স্বাধীনতার ৬৭ বছর পরেও কেন এমন অবস্থা? আবার কি স্বাধীনতার দ্বিতীয় যুদ্ধ লড়তে হবে?’’
একই সঙ্গে সোমনাথবাবুর মত, ‘‘প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। কিন্তু হিংসা চাই না। রক্ত ঝরানো চাই না। মানুষের জমায়েত করে রুখতে হবে এই অত্যাচার। অত্যাচারী শাসক মানুষকে ভয় পায়। মানুষকেই প্রতিবাদ করতে হবে।’’ প্রাক্তন স্পিকারের যুক্তি, ‘‘কোনও একটা নির্দিষ্ট দল বা নির্দিষ্ট নেতার কাজ নয় এটা। মানুষকে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে রুখে দাঁড়িয়ে নিজের অধিকার ফিরে পেতে হবে।’’ রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ও সোমনাথবাবুর সুরে বলেন, কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল নয়। সাধারণ মানুষকেই আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিবাদ-সভায় বক্তা ছিলেন কৌশিক সেন, মীরাতুন নাহার প্রমুখ।
সোমনাথবাবুরা তৃণমূলের নাম করে আক্রমণ না করলেও তাঁদের বক্তব্য ৯১টি পুরসভার ভোটারদের প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যেই, এমনই মনে করছে শাসক দল। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ,‘‘এঁরা বুদ্ধিধারী না নির্দিষ্ট দলের পতাকাধারী, বোঝা গেল! সোমনাথবাবু, অশোকবাবুর মতো আইনজীবীরা থেকেও কী ভাবে এমন আইনবিরুদ্ধ কাজ করলেন? কলকাতায় এখন ভোট নেই ঠিকই। কিন্তু রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঁদের বক্তব্য বাকি পুরসভার ভোটারদের প্রভাবিত করেছে।’’ কমিশনকে চিঠি দিয়ে পার্থবাবুরা জানতে চেয়েছেন, বিশিষ্টেরা সভার অনুমতি পেলেন কী করে? ওই সভা কি নির্বাচনী বিধিভঙ্গ নয়? উদ্যোক্তাদের তরফে নাট্যকার চন্দন সেন অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘বিধিভঙ্গ হতে যাবে কেন? নির্বাচনী সভা হিসেবে আমরা কোনও প্রচার করিনি। সভাতেও কোনও দলকে ভোট দিতে বলা হয়নি। রাজ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার বিপন্ন হওয়ার প্রতিবাদ করা হয়েছে শুধু।’’
যে কমিশনের কাছে তৃণমূল জবাব চেয়েছে, তার শীর্ষ কর্তাকেও এ দিন অবশ্য কটাক্ষ করেছেন সোমনাথবাবু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সরকারি অফিসারেরা এখন দলদাসে পরিণত। রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিনতাম। তিনি ভাল মানুষ। কিন্তু সঙ্গদোষে কী হয়, দেখলাম! লাটসাহেবের কাছে গিয়ে তাঁকে বলতে হচ্ছে, তাঁর কথা কেউ শুনছে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy