Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Rape Charge

সৌম্যজিতের দাবি ‘ফাঁসানো হচ্ছে’, গোপন জবানবন্দি তরুণীর

বুধবার সকালে বারাসত মহিলা থানায় স্থানীয় নবপল্লির এক তরুণী সৌম্যজিতের নামে অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি জানান, বছর কয়েক ধরেই ওই টেবল টেনিস খেলোয়াড়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক।

ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করলেন টেবল টেনিস খেলোয়াড় সৌম্যজিৎ ঘোষ। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করলেন টেবল টেনিস খেলোয়াড় সৌম্যজিৎ ঘোষ। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ১৬:৪৫
Share: Save:

তাঁর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। উঠেছে গর্ভপাতের অভিযোগও। এ প্রসঙ্গে টেবল টেনিস খেলোয়াড় সৌম্যজিৎ ঘোষ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। একই দাবি করা হয়েছে তাঁর পরিবারের তরফেও।

বুধবার সকালে বারাসত মহিলা থানায় স্থানীয় নবপল্লির এক তরুণী সৌম্যজিতের নামে অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি জানান, বছর কয়েক ধরেই ওই টেবল টেনিস খেলোয়াড়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। দুই পরিবারের সকলে এই সম্পর্কের কথা জানেন। কিন্তু, প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করার পরেও সম্প্রতি নাকি সৌম্যজিৎ বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। সে কথা জানিয়েও দেন ওই তরুণীকে। বার বার সম্পর্কে ফেরার অনুরোধ করেও কোনও লাভ হয়নি। এর পরেই ওই তরুণী এবং তাঁর পরিবার পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেন।

এই ঘটনা যখন ঘটেছে, তখন ওই তরুণী নাবালিকা ছিলেন। তাই সৌম্যজিতের বিরুদ্ধে পকসো (প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জানা গিয়েছে, ফৌজদারি বিধির ১৬৪ ধারায় ওই তরুণীর গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে আদালতে। এই মুহূর্তে সৌম্যজিৎ জাতীয় টেবল টেনিসের সদস্য হিসাবে জার্মানি ওপেন খেলছেন। সেখান থেকে ফিরে তাঁর কমনওয়েলথে যাওয়ার কথা। কমনওয়েলথ গেমসের টিমেও তিনি রয়েছেন। প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সৌম্যজিৎকে ২০১৭তে অর্জুন পুরস্কার দেওয়া হয়। এ দিন জার্মানি থেকে সৌম্যজিৎ জানান, দেশে ফিরে যা বলার তিনি বলবেন। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাকে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে। ফাঁসানো হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: ধর্ষণে অভিযুক্ত টেবল টেনিস খেলোয়াড় সৌম্যজিৎ

ওই তরুণীর পরিবার জানিয়েছে, সৌম্যজিৎ মিথ্যা কথা বলছেন। তাঁর সঙ্গে ওই তরুণীর সম্পর্কের কথা দুই পরিবারই জানত। এমনকী, উত্তরবঙ্গের এক মন্দিরে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতেই সৌম্যজিতের সঙ্গে ওই তরুণীর ‘আশীর্বাদ’ হয়। কিন্তু, এ সবের পরেই নাকি বেঁকে বসেন সৌম্যজিৎ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে দুই পরিবারের সামনেই সৌম্যজিৎ বিয়ের ব্যাপারে নাকি ‘না’ করে দেন। এর পর শত অনুরোধেও কাজ হয়নি বলে ওই পরিবারের অভিযোগ।

অর্জুন পুরস্কার নিচ্ছেন সৌম্যজিৎ।

অভিযোগকারী তরুণী এ দিন জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে সৌম্যজিতের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ফেসবুকে। তখন তিনি নাবালিকা ছিলেন। তিনিও টেবল টেনিস খেলতেন বলে সৌম্যজিতের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ভাবেই এগোতে শুরু করে। এর পর সৌম্যজিতের দক্ষিণ কলকাতার ফ্ল্যাট, শিলিগুড়ি, দিঘা-সহ বিভিন্ন জায়গায় তিনি তাঁর সঙ্গে গিয়েছেন। রাত্রিবাসও করেছেন। সেই সময়ে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন ওই তরুণী। দুই পরিবারের সম্মতিতে গর্ভপাত করানো হয় বলেও দাবি তাঁর। এর বছর দুয়েক পর ওই তরুণী সাবালিকা হন। তার পরেই দুই পরিবার বসে বিয়ের আলোচনা শুরু করে। তরুণীর পরিবারের দাবি, বিয়ের কথা শুরু হতেই নানাবিধ যৌতুকও দেওয়া হয় সৌম্যজিৎকে। কিন্তু, সবটা যখন চূড়ান্ত হওয়ার পথে, ঠিক সেই সময়েই সৌম্যজিৎ বেঁকে বসেন। এর পর অভিযোগ জানানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না— এমনটাই জানিয়েছেন ওই তরুণী। তাঁর আরও দাবি, সৌম্যজিৎ ইদানীং অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। তাই ওই তরুণীকে আর তাঁর পছন্দ নয়। আর সে কারণেই বিয়েতে ‘না’ করছেন সৌম্যজিৎ।

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী সময় দিতে পারেন, আশায় হাসিন

কিন্তু, গোটাটাই মিথ্যে চক্রান্ত বলে দাবি করছে সৌম্যজিতের পরিবার। এ দিন শিলিগুড়িতে সৌম্যজিতের বাবা হরিশঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ওই মেয়েটিকে তিনি চিনতেন। টেবল টেনিস খেলত বলে ছেলে সৌম্যজিতের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। হরিশঙ্করের কথায়, ‘‘ওরা দু’জনেভাল বন্ধু ছিল। সৌম্যর কাছ থেকে মেয়েটি ও তার পরিবার দফায় দফায় প্রায় দু’লাখ টাকা নিয়েছে। আমি এক বার বাঘাযতীনের ফ্ল্যাটে ওই মেয়েটিকে দেখেছি। এক বার শিলিগুড়িতেও টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছিল। দেখা হয়েছিল। কিন্তু, সৌম্য এই সব টাকাপয়সা নেওয়ার ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি। তাই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’’ এর পর থেকেই মেয়েটির পরিবার সৌম্যজিৎকে ফাঁসানোর চেষ্টা শুরু করে বলে শঙ্করের দাবি। পাশাপাশি তিনি, বিয়ে এবং গর্ভপাতের বিষয়টি ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন। সৌম্যজিতের মা মীনা ঘোষ বলেন, ‘‘সৌম্যর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল। কিন্তু, ওই মেয়েটির সঙ্গে অন্য ছেলের সম্পর্ক রয়েছে। আমার ছেলের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়ার পর এখন ব্ল্যাকমেল করছে। এ সব মিথ্যা।’’

সৌম্যজিতের কাকা সঞ্জীব ঘোষ এ দিন জানিয়েছেন, বারাসত থানা বা আদালত থেকে তাঁরা এখনও পর্যন্ত কোনও কাগজপত্র পাননি। তাঁরাও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই তরুণী এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দাবি করেন সঞ্জীব। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে নির্দোষ একটি ছেলেকে ফাঁসানোর বিষয়টি আমরা কোনও ভাবেই মেনে নেব না। যা যা শুনছি, সবই ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।’’

ঘটনায় তেমন কোনও মিল না থাকলেও ক্রিকেটার মহম্মদ শামির পর ফের দেশের অন্যতম সেরা টেবল টেনিস খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে যৌন সংক্রান্ত এমন অভিযোগ ওঠায় স্তম্ভিত ক্রীড়ামহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE