Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গৌতমের আশীর্বাদ নিলেন সৌরভ

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে এ দিন বাগডোগরা বিমান বন্দরে অনেক ক্ষণ কথা বললেন এনবিএসটিসি-র নতুন চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। এনবিএসটিসি পরিচালনার ক্ষেত্রে কী ভাবে কাজ করা দরকার, সে ব্যাপারে দুই জনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে এনবিএসটিসি চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর।

প্রাক্তনের সঙ্গে বর্তমান। এলবিএসটিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ সৌরভ চক্রবর্তীর। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

প্রাক্তনের সঙ্গে বর্তমান। এলবিএসটিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ সৌরভ চক্রবর্তীর। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৫ ০১:৪৭
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে এ দিন বাগডোগরা বিমান বন্দরে অনেক ক্ষণ কথা বললেন এনবিএসটিসি-র নতুন চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। এনবিএসটিসি পরিচালনার ক্ষেত্রে কী ভাবে কাজ করা দরকার, সে ব্যাপারে দুই জনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে এনবিএসটিসি চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর। এ দিন কলকাতা রওনা হওয়ার আগে সেই মতো উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌরভবাবুকে জরুরি কিছু পরামর্শ দেন। আর্থিক আয়, ব্যয়ের কোথায় কী ঘাটতি রয়েছে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য দেন। ঠিক হয়েছে মন্ত্রী কলকাতা থেকে ফেরার পর সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে। ওই বৈঠকে গৌতমবাবুও থাকবেন। তা ছাড়া, নতুন বাস পরিষেবা যেগুলি চালু হয়েছে বা হবে সেগুলির উপর যে গুরুত্ব দেওয়া দরকার, সে ব্যাপারেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, ‘‘সৌরভের সঙ্গে এনবিএসটিসি’র বিষয় নিয়েই কিছু কথা হয়েছে। সংস্থাকে আরও ভাল জায়গায় নিতে কী করণীয় সেটাই মূল উদ্দেশ্য। আমি ফিরে এলে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে নিয়ে নতুন চেয়ারম্যান বৈঠক করবেন। সেখানে আমাকেও থাকতে বলেছেন। আমি সব রকম ভাবেই সাহায্য করব।’’

আজ, বৃহস্পতিবার সৌরভবাবু সংস্থার দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। সৌরভবাবু বলেন, ‘‘সংস্থার কী হাল তা গৌতমবাবুর কাছ থেকে জেনে নিয়ে কাজ শুরু করব। গৌতমবাবুর আশীর্বাদ নিয়েই কাল দায়িত্ব নেব। ওঁর তো বটেই, সকলের পরামর্শ নিয়েই চলব।’’

নতুন চেয়ারম্যানের নিয়োগের পরেও সংস্থার কর্মীদের একাংশের মধ্যে অবশ্য সংস্থার হাল ফেরানো নিয়ে সংশয় কাটছে না। তাঁদের দাবি, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁকে এক বছরের মাথায় সরিয়ে দিয়ে রাজ্য সরকার দায়িত্ব তুলে দেয় মন্ত্রী গৌতম দেবের হাতে। তাঁরা দায়িত্ব নেওয়ার পর একইরকম ভাবে আশার কথাও শুনিয়েছিলেন। সরকারি বরাদ্দ নির্ভরতা কমিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া, কর্মী অফিসারদের নিয়মিত পুরো বেতন দেওয়া, বদলি নীতি থেকে শুরু করে খরচ কমানোর মতো কড়া সিদ্ধান্ত সৌরভবাবু কতটা নিতে পারবেন, তা সময় বলবে। সেই সঙ্গে সংস্থার হাতে থাকা প্রচুর সম্পত্তি, জমির সঠিক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলেও আখেরে তা কবে বাস্তবায়িত হবে, তা-ও ঠিক করতে হবে নতুন চেয়ারম্যানকেই। সাবধানী সৌরভবাবুর দাবি, “রাতারাতি সব কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। আগের দুইজন চেষ্টা করেছেন। কাজ হয়েছে। এখন সরকারের চার বছর কেটে গিয়েছে। এই সময় কাজের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধে হবে। ফলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।”

লোকসানে ধুঁকতে থাকা সংস্থার হাল ফেরাতে অবশ্য আশাবাদী সৌরভবাবু। সমবায় ব্যাঙ্কের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখেই সৌরভবাবুর নিগমের হাল ফেরাতে চান বলেও জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “সমবায় ব্যাঙ্কের যখন দায়িত্ব নিই, সেই সময় সংস্থা ৩৯ কোটি টাকার লোকসানে চলছিল। আজ আর সংস্থা লোকসানে নেই। লাভের মুখ দেখছে। ওই সংস্থার হাল ফেরাতে যখন পেরেছি, এনবিএসটিসি-র নিশ্চয়ই পারব।”

উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থার আদতে কী হাল?

বাম আমলের মতোই রাজ্য সরকারের ভর্তুকি দিয়েই চলছে নিগম। নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, বর্তমানে সংস্থার নিজস্ব আয় গড়ে মাসে ১১ কোটি টাকা। স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে নিগমের কর্মী সংখ্যা চার হাজারের বেশি। জ্বালানি খরচ হচ্ছে মাসে প্রায় ৮ কোটি টাকা। কর্মীদের বেতন বাবদ প্রায় ৭ কোটি টাকা এবং যন্ত্রাংশ কেনা, টেলিফোন বিল, বিদ্যুৎ বিল সহ আনুষাঙ্গিক খরচ হয় আরও প্রায় ৫ কোটি টাকা। প্রতি মাসে রাজ্য সরকার সাড়ে ৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। তাও মাসে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা লোকসানের মধ্যে থাকছে সংস্থা। তাও কর্মীরা পুরো বেতন দীর্ঘদিন ধরেই পান না। এর বাইরে বেতন ও পেনশনবাবদ অন্তত ৪০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে।

নিগম সূত্রের খবর, সংস্থার অবস্থা ফেরাতে গত চার বছরে একাধিক পরিকল্পনা নিয়েও পিছিয়ে আসতে হয় সংস্থার চেয়ারম্যানদের। রবীন্দ্রনাথবাবু চেয়ারম্যানের দায়িত্ব হাতে পেয়ে বদলি নীতি চালু করেন। বিভিন্ন ডিপোতে বাস অনুযায়ী কর্মী সংখ্যার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা কাটাতে তিনি উদ্যোগী হন। তা নিয়ে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। শেষপর্যন্ত পদ হারান রবীন্দ্রনাথবাবু। বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। গৌতমবাবু দায়িত্ব নেওয়ার পর খরচ কমাতে বেশ কয়েকটি ডিপো তুলে দেন। তা নিয়ে দলের একাংশের আন্দোলনের চাপে ওই ডিপোগুলি ফের চালু হয়। তেল সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনায় নজরদারি, লাভজনক একাধিক বন্ধ রুটে বাস চালানো, কর্মী ইউনিয়নগুলির কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েও আগের চেয়ারম্যানদের বেগ পেতে হয়েছে। সৌরভবাবুর পক্ষেও এ সব মোটেই সহজ হবে না বলে মনে করছেন প্রাক্তন নিগম কর্তাদের একাংশ।

সংস্থার কয়েকজন বোর্ড সদস্য জানান, বিভিন্ন সামগ্রী কেনাকাটা তদারকি নিয়ে সংস্থার অন্দরে একটি চক্র রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংস্থার কর্মী সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। ৬০০ বাসের জন্য মোট কর্মী রয়েছেন চার হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে অনেককেই সঠিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ধীরে ধীরে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হলেও এখনই স্থায়ী কর্মীর চাপ কমাতে না পারলে, আয় বাড়ানোর রাস্তা নেই। সদ্য প্রাক্তন চেয়ারম্যান গৌতমবাবু মন্ত্রী, এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান হওয়ায় নিজের দফতর ও সংস্থা থেকে নিগমকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছেন। তেমনিই, তিনি সময় ঠিকঠাক দিতে পারেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সৌরভবাবু দাবি করেন, সংস্থার পরিচালন বোর্ডের সদস্য হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সংস্থার কোথায় কী খামতি রয়েছে তা জানি। বেসরকারি বাস পরিষেবা যদি লাভের মুখ দেখতে পারে আমরা পারব না কেন? সে জন্য দরকার পেশাদারি মনোভাব। তার জন্য যেখানে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাই নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE