Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মমতাকে সনিয়ার শুভেচ্ছায় জল্পনা, অন্য সুর রাজ্যে

jayanta ghosal sandipan chakraborty বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল-বিরোধী ফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে রাজ্য স্তরে কংগ্রেস ও বাম নেতারা যখন নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা চালাচ্ছেন, তখন আজ বিকেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেক্সট করে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানালেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেস সভানেত্রীর ব্যক্তিগত নম্বর থেকে সেই বার্তা পেয়ে তৎক্ষণাৎ প্রতি-শুভেচ্ছা জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

জয়ন্ত ঘোষাল ও সন্দীপন চক্রবর্তী
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল-বিরোধী ফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে রাজ্য স্তরে কংগ্রেস ও বাম নেতারা যখন নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা চালাচ্ছেন, তখন আজ বিকেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেক্সট করে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানালেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেস সভানেত্রীর ব্যক্তিগত নম্বর থেকে সেই বার্তা পেয়ে তৎক্ষণাৎ প্রতি-শুভেচ্ছা জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

রাজনীতিতে এ রকম সৌজন্য আদানপ্রদান হয়েই থাকে। আবার রাজনীতি তো রাজনীতিই। তার ব্যাপ্তি ও পরিধি অনেক দূর। সৌজন্যের বার্তার পরতেও সেখানে লুকিয়ে থাকে সমীকরণের অঙ্ক। তাই নিতান্ত সৌজন্যমূলক এই শুভেচ্ছা বার্তাকেও সরলরেখায় দেখছে না রাজনৈতিক শিবির। তাঁদের মতে, বিহার ভোটে মোদী-অমিত শাহ জুটি পর্যুদস্ত হওয়ার পর সনিয়ার এই সৌজন্য অর্থবহ। কারণ, তিনি ভাল করেই জানেন জাতীয় স্তরে মোদী-বাহিনীকে রুখতে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির মধ্যে সুষ্ঠু বোঝাপড়া রাখা দরকার।

রাজ্য স্তরে যদিও ছবিটা অন্য রকম। সেখানে কংগ্রেসের গরিষ্ঠ সংখ্যক নেতাই বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে রুখতে বামেদের সঙ্গে সমঝোতা চাইছেন। সম্প্রতি সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে রাজ্য বা জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও আসন সমঝোতা বা নির্বাচনী জোট গড়ার প্রস্তাব খারিজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের মতে, এর পরেও পরোক্ষ সমঝোতা হতে পারে। সিপিএম রাজ্য নেতারাও স্বীকার করছেন এ ব্যাপারে তাঁদের দলের নিচুতলাতেও আগ্রহ রয়েছে। ১৪ নভেম্বর জওহরলাল নেহরুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে শনিবারের ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আলিমুদ্দিন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক উপলক্ষে আজ, বৃহস্পতিবারই দিল্লি রওনা দিচ্ছেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা। কিন্তু সিপিএমের রাজ্য কমিটির তরফে ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা সেরে ফেলা হয়েছে। দলের বর্তমান ও প্রাক্তন সাংসদদের একটি দল জি ডি বিড়লা সভাঘরে উপস্থিত থাকবে বলেই সিপিএম সূত্রের খবর। উল্লেখ্য, ওই অনুষ্ঠানে বিজেপি-র পাশাপাশি তৃণমূলও কিন্তু আমন্ত্রিত নয়। উদ্যোক্তাদের তরফে কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র বলছেন, ‘‘ধর্মীয় উন্মাদনার নামে যারা বিভাজন তৈরি করতে চায় ও নেহরুর নাম মুছে ফেলতে চায়, সেই বিজেপি-কে আমন্ত্রণ করার প্রশ্নই ওঠে না। আর এ রাজ্যে তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে অসহিষ্ণু হয়ে যে সব কাজকর্ম করে চলেছে, তার কোনওটাই নেহরুর পরম্পরার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’’

রাজ্য কংগ্রেস তৃণমূলকে দূরে রাখলেও কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে কিন্তু তৃণমূলের গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, তাঁদের চোখে জাতীয় স্তরে বামেরা ক্ষয়িষ্ণু শক্তি। সম্প্রতি পলিটব্যুরোর বৈঠকে সিপিএম নেতারাও আলোচনা করেছেন, এখনই ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি বা ক্ষমতা তাঁদের নেই। তুলনায় সংসদে তৃণমূলের শক্তি এখন উল্লেখযোগ্য। লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের ৩৪ জন সাংসদ রয়েছেন। রাজ্যসভায় তাঁদের সাংসদ সংখ্যা ১২। দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের মতে, সংসদের আসন্ন অধিবেশনে কেন্দ্রকে চাপে ফেলতে তৃণমূলের সঙ্গে সুষ্ঠু কক্ষ সমন্বয় উপযোগী হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে লোকসভায় কংগ্রেস সংখ্যার দিক থেকে দুর্বল। তাঁদের সদস্যসংখ্যা মাত্র ৪৪। গত অধিবেশনে সুষমা স্বরাজ বা বসুন্ধরা রাজের ইস্তফা চেয়ে কংগ্রেস যখনশোরগোল তুলেছিল, তখন কৌশলে নীরব ছিল তৃণমূল। কিন্তু এ বার যে বিষয়গুলি টেবিলে রয়েছে— অসহিষ্ণুতা, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, নেপালে কূটনৈতিক ব্যর্থতা— সেখানে তৃণমূলেরও হাত গুটিয়ে থাকা মুশকিল।
বিপদের আঁচ পাচ্ছে বিজেপিও। ফলে বিরোধী জোট ভাঙতে বিজেপির দিক থেকেও চেষ্টা হবে। তাই কংগ্রেস আগেভাগে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সঙ্গে বোঝাপড়া গড়ে তুলতে চাইছে।

তৃণমূল নেত্রীকে পাঠানো সনিয়া গাঁধীর সৌজন্য বার্তা এই প্রেক্ষাপটে তাই আলাদা করে গুরুত্ব পাচ্ছে। জাতীয় স্তরে বোঝাপড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না তৃণমূলও। মৌলানা আবুল কালাম আজাদের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বুধবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের জোটের প্রয়োজন নেই। তবে পরের লোকসভা ভোটের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা হচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন বলে ফিরহাদ জানান। বিহারের সদ্য জয়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার-সহ বেশ কয়েক জনের সঙ্গে মমতার কথাও হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE