Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

টাকা দিলেই পিজি-র রক্ত যাচ্ছে ‘বাইরে’!

এসএসকেএম হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করলেন রোগীর পরিজনেদের একাংশ।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

কেউ মেডিসিন, কেউ বা স্ত্রীরোগ বিভাগে ভর্তি। কারও প্রয়োজন এ পজিটিভ রক্তের। কারও আবার বি নেগেটিভ। কিন্তু প্রয়োজনীয় রক্ত না-থাকায় শহরের সব চেয়ে বড় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করিয়েই পরিজনেরা ছুটছেন সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক বা অন্য বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে। অথচ, ওই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে ইউনিট-পিছু দু’হাজার টাকা দিয়ে রক্ত কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা নার্সিংহোমে ভর্তি থাকা রোগীর পরিজনেরা! রক্ত হাতে পেয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে গুঁজে দিয়ে যাচ্ছেন অতিরিক্ত কয়েকশো টাকা।

এসএসকেএম হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করলেন রোগীর পরিজনেদের একাংশ। পাশাপাশি, হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ব্লাড ব্যাঙ্কের লাইসেন্স নবীকরণের জন্য পরিদর্শনে এসেছিলেন কেন্দ্রের ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের কর্তারা। তখন পরিদর্শক দলের সামনেও একাধিক অনিয়ম প্রকাশ্যে আসে। যার জেরে প্রশ্নের মুখে ব্লাড ব্যাঙ্কের রোগী পরিষেবা।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক প্রথমে ওই হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের রক্ত দেবে। সেই চাহিদা মিটলে তবেই বাইরের বা বেসরকারি হাসপাতালের রোগীদের রক্ত দেওয়া যাবে। বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা নার্সিংহোমে ভর্তি থাকা রোগীরা সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেও রক্ত কিনতে পারেন। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই রক্ত ‘বিক্রি’র অভিযোগ উঠেছে এসএসকেএমের ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই ব্লাড ব্যাঙ্কে যাঁরা কাজ করেন, সেই কর্মীদের একাংশ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁরাই নিয়ম ভেঙে রক্ত বিক্রি করছেন। বাইরের রোগীদের রক্ত ‘পাইয়ে’ দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ সময়ে তথ্য গোপনের জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কের কম্পিউটারে তথ্য তোলাও হয় না। হাসপাতালের খাতায় রিকুইজিশন নম্বর লিখে রাখা হয়। প্রয়োজনে সেই তালিকা পাল্টে ফেলা হয়।

এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে এই একই অভিযোগ উঠেছিল হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। তৎকালীন অধিকর্তা অভিযুক্ত দু’জনকে বদলির নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু ফের সেই দুর্নীতি-রোগ দেখা দেওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগীরাই। পরিজনেদের একাংশের অভিযোগ, সময়মতো রক্ত না পাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। যার জেরে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। পাশাপাশি, বাইরে থেকে চড়া দামে রক্ত কিনে আনতে হচ্ছে।

নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে রক্ত দেওয়ার পাশাপাশি একই কর্মীর একাধিক জায়গায় কাজ করার অভিযোগও উঠেছে। এসএসকেএম সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ড্রাগ কন্ট্রোলের পরিদর্শক দল হাসপাতালের কর্মীদের তালিকা যাচাই করার সময়ে জানা যায়, একই কর্মী এসএসকেএমের টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বাগবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কেও টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। পরিদর্শক দলের এক কর্তার কথায়, ‘‘অনিয়মের তালিকা দীর্ঘ। শারীরিক পরীক্ষা করে রক্তদানের নিয়মও অধিকাংশ সময়ে মেনে চলা হচ্ছে না। সম্পূর্ণ রিপোর্ট স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হবে।’’

এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য করতে নারাজ। হাসপাতালের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগ সম্পর্কে লিখিত তথ্য নেই। নথিপত্র পেলে নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

স্বাস্থ্য ভবনে ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘রিপোর্ট হাতে পাইনি। তাই কিছু বলতে পারছি না। রোগীদের এমন অভিযোগ থাকলে সরাসরি লিখিত ভাবে জানান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Blood Blood Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE