সমালোচনার ছুরিতে তখন রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ঘাটতি-খামতির কাটাছেঁড়া চলছে বিধানসভায়। গুরুগম্ভীর সভা হঠাৎ ফেটে পড়ল উতরোল হাসিতে। তার মূলে আছে পিজি-র কুকুর-কাণ্ড।
মঙ্গলবার বিধানসভায় অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে স্বাস্থ্য দফতরের ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা ছিল। কংগ্রেসের চিকিৎসক-বিধায়ক মানস ভুঁইয়া তখনই বলেন, ‘‘মানুষের হাসপাতালে কুকুরের চিকিৎসা করার কথা বলা হচ্ছে। আমার প্রস্তাব, এ বার তা হলে স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগকে সংযুক্ত করে দেওয়া হোক। তা হলে একই হাসপাতালে কুকুর ও মানুষের চিকিৎসা চালাতে আর কোনও বাধা থাকবে না।’’ তাঁর এই মন্তব্যেই শাসক-বিরোধী নির্বিশেষে হাসির রোল পড়ে যায় সভাকক্ষে।
শুধু স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগকে জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাবই নয়। কুকুর-কাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, উঠল সেই প্রশ্নও। যিনি এসএসকেএম হাসপাতালে একটি কুকুরের ডায়ালিসিস করার সুপারিশ করেছিলেন, সেই তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি এ দিন এই অলোচনার সময় সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদের সমালোচনার মধ্যেই নির্মলবাবু এক বার উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁর কোনও কথাই শোনা যায়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সভায় ছিলেন না। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের জবাব দিলেও কুকুর-কাণ্ড নিয়ে নীরবই ছিলেন।
সম্প্রতি এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ার কুকুরের ডায়ালিসিস করার জন্য নির্মলবাবু এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছিলেন। হাসপাতালের অধ্যক্ষ এবং নেফ্রোলজির বিভাগীয় প্রধান সেই সুপারিশের ভিত্তিতে কুকুরের ডায়ালিসিস করার অনুমোদনও দিয়ে দেন। কিন্তু নেফ্রোলজির যে-চিকিৎসক সেই সময় ডিউটিতে ছিলেন, তিনি আপত্তি করায় সেই ডায়ালিসিস আর করা হয়নি। এসএসকেএমের অধ্যক্ষ এবং নেফ্রোলজির বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে নির্মলবাবুকে ডেকে পাঠিয়ে ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু তাতেই এই গুরুতর বিষয়টি শেষ হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। ‘‘যাঁরা এর সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী,’’ এ দিন বিধানসভায় প্রশ্ন তোলেন এসইউসি-র বিধায়ক তরুণকান্তি নস্কর। তাঁর আরও প্রশ্ন, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের ডিগ্রি বাতিল করা হবে না কেন? তাঁর বক্তব্য, মানুষ আর কুকুরকে একই জায়গায় রেখেছে এই সরকার। স্বাস্থ্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর যাবতীয় দাবি ধুলোয় মিশে গিয়েছে এই একটি ঘটনাতেই। একই সুর ছিল সিপিএমের অপর্ণা সাহার বক্তব্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy