Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রেলকে বাড়তি ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

অভিযোগ, ‘‘মোটা টাকা খরচ করে এসি টু টিয়ারে যাত্রা করেও ট্রেনে বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা নেই। সে দিন আমাদের কামরায় কোনও নিরাপত্তারক্ষীও ছিলেন না।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৮
Share: Save:

করমণ্ডল এক্সপ্রেসে যাত্রা করার সময়ে দামি জিনিসপত্র চুরি হয়েছিল জাতীয় গ্রন্থাগারের এক আধিকারিকের। ক্ষতিপূরণের আবেদন জানিয়ে কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছিলেন তিনি। বছর দুয়েক আগে আদালত রেলকে চরম ভর্ৎসনা করে মামলাকারীকে প্রায় এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছিল। জেলা ক্রেতা আদালতের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা আদালতে গিয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেল। জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়কেই বহাল রেখে দক্ষিণ-পূর্ব রেলকে অতিরিক্ত পঁচিশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

চেন্নাই যেতে ২০১৪ সালের ৫ জুন করমণ্ডল এক্সপ্রেসে হাওড়া থেকে স্ত্রী, কন্যাকে নিয়ে এসি টু টিয়ারে চেপেছিলেন জাতীয় গ্রন্থাগারের ওএসডি (অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি) কে কে কচুকশি। অভিযোগ, ট্রেনটি ৬ জুন সকাল সাড়ে ছ’টায় রাজামুন্দ্রি স্টেশনে ঢোকামাত্রই কচুকশি ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা দেখেন, একটি ব্যাগ উধাও। ওই ব্যাগে দামি মোবাইল, ফেরার বিমানের টিকিট-সহ একাধিক সামগ্রী ছিল। কে কে কচুকশির অভিযোগ, ‘‘সে দিন ওই কামরায় মোট আট যাত্রীর জিনিসপত্র চুরি হয়েছিল। টিটিই-কে বলেও কাজ হয়নি। চেন্নাই স্টেশনে নেমে জিআরপি-তে অভিযোগ করেছিলাম। ফিরে এসে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারকে চিঠি লিখে সবিস্তারে জানিয়েছিলাম। কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পরেও ক্ষতিপূরণ না পেয়ে বাধ্য হয়ে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করি।’’

তাঁর অভিযোগ, ‘‘মোটা টাকা খরচ করে এসি টু টিয়ারে যাত্রা করেও ট্রেনে বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা নেই। সে দিন আমাদের কামরায় কোনও নিরাপত্তারক্ষীও ছিলেন না।’’

বছর দুয়েক আগে কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দুই বিচারক শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং শেখ আবুল আনসার তাঁদের রায়ে বলেন, ‘‘ট্রেনের এসি টু টিয়ারে যাত্রীকে সুষ্ঠু নিরাপত্তা দেওয়া রেলের কর্তব্য। কিন্তু যাবতীয় তথ্যপ্রমাণে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার সময়ে এসি টু টিয়ারে কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন না। এটা রেলের একটা বড় গাফিলতি।’’ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত মামলাকারীকে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় এক লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দিতে দক্ষিণ-পূর্ব রেলকে নির্দেশ দিয়েছিল।

ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে গিয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেল। গত ১৪ নভেম্বর রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দুই বিচারক শ্যামল গুপ্ত এবং উৎপলকুমার ভট্টাচার্য জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়কে বহাল রেখে রেলকে চরম ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার দিন ট্রেনটি রাজামুন্দ্রি স্টেশনে নির্ধারিত পাঁচ মিনিটের পরিবর্তে কুড়ি মিনিট দাঁড়িয়েছিল। একাধিক যাত্রীর থেকে লুটের ঘটনা ঘটেছিল। এ ক্ষেত্রে কোনও রেলকর্মীর স্বতন্ত্র পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এত বড় লুট হওয়া অসম্ভব। দুর্ঘটনাবশত ওই ঘটনায় রেল কোনও বিভাগীয় তদন্তও করেনি।’’ দুই বিচারক তাঁদের রায়ে আরও বলেন, ‘‘ট্রেনের যাত্রাপথে এ-হেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রেল কর্তৃপক্ষ সমস্ত দায় ঝেড়ে হাত ধুয়ে ফেলতে পারে না। সংরক্ষিত কামরায় লোকজনের বেআইনি প্রবেশ ঠেকানো টিটিই, আরপিএফদের অবশ্যই কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁরা তাঁদের কর্তব্য পালন করেননি। এই ঘটনা ভারতীয় রেলের মুখোশ খুলে দিয়েছে।’’

একই সঙ্গে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত দক্ষিণ-পূর্ব রেলকে ক্ষতিপূরণ বাবদ অতিরিক্ত পঁচিশ হাজার টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘আদালতের রায় হাতে আসেনি। আমাদের আইনি বিভাগ রায় দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

State Consumer Court Indian Railway Compensation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE