নানা ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের বঞ্চনার নালিশ দীর্ঘদিনের। বিগত বাম জমানা থেকে বর্তমানের তৃণমূল আমলেও সেই অভিযোগ-স্রোতের অন্ত নেই। তবে এত দিন তা মূলত সীমাবদ্ধ ছিল প্রাপ্তিযোগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কিন্তু রাজ্যের সেই অভিযোগ এ বার প্রসারিত হচ্ছে জাতীয় স্তরের নানান প্রতিযোগিতাতেও।
কেন্দ্র অবজ্ঞা-অবহেলা করছে বলে অভিযোগ তুলে জাতীয় স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যোগই দিতে চাইছে না রাজ্য সরকার। পাল্টা হিসেবে বাংলাও বুঝিয়ে দিতে চাইছে, ওই সব প্রতিযোগিতার তোয়াক্কা করে না তারাও! সরকারি মহলের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রের বিচার-বিবেচনার উপরে আস্থা নেই বলেই জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতাগুলিকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাইছে না রাজ্য।
বসবাসের গুণগত মান নির্ধারণ নিয়ে সাম্প্রতিক এক কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সফল শহরের তালিকার শীর্ষে রয়েছে পুণে। মহারাষ্ট্রের নবী মুম্বই এবং গ্রেটার মুম্বই রয়েছে পুণের ঠিক পরে। গোটা দেশের ১১১টি শহরের উপরে ওই সমীক্ষা চালানো হলেও প্রতিযোগিতার কোথাও নেই পশ্চিমবঙ্গে নাম! বিদ্যুৎ, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা, আইনশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, দূষণ-সহ ১৫টি ক্ষেত্রে এই সমীক্ষা চালিয়েছিল কেন্দ্র। রাজ্যের পুর দফতর সূত্রের খবর, ওই প্রতিযোগিতায় নামই দেয়নি বাংলা।
পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়, ‘‘কোন দফতর কী করবে, তা জানা নেই। কিন্তু আমার দফতর এই ধরনের প্রতিযোগিতায় নাম দিতে আগ্রহী নয়। রাজ্য সরকার যে-কাজ করছে, সাধারণ মানুষ তাতে আশ্বস্ত হচ্ছেন। সেটাই আমাদের কাছে পরীক্ষায় পাশ করা। কেন্দ্র কী ভাবল, তাতে কিছু যায়-আসে না।’’ সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এই ভাবনা থেকেই নীতি আয়োগের কোনও সমীক্ষায় যোগ দেয়নি রাজ্য। অন্তর্ভুক্ত হয়নি স্মার্ট সিটি প্রকল্পেরও। কেন্দ্র তাদের মানদণ্ডে রাজারহাটকে ‘স্মার্ট সিটি’ হিসেবে স্বীকার না-করলেও রাজ্য ওই এলাকার সৌন্দর্যায়ন ও পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিচ্ছে।
অথচ প্রশাসনের অন্দরের অনেকেরই বক্তব্য, বাসযোগ্যতার নিরিখে কলকাতা এখনও যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য। ফলে কেন্দ্রীয় তালিকার উপরের দিকেই জায়গা করে নিতে পারত এই শহর। তা সত্ত্বেও দেশের বড় শহরগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে রাজ্য সরকারের অনীহা কেন, সেই প্রশ্ন জোরদার হয়ে উঠছে। কারণ, শহরের ভাবমূর্তির জন্য এই ধরনের তকমা কাজে আসে বলেই বিপণন বিশেষজ্ঞদের দাবি।
অতীতে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি, পঞ্চায়েত এবং ই-গভর্ন্যান্সে কেন্দ্রীয় পুরস্কার পেয়েছে। তার পরেও কেন্দ্রীয় প্রতিযোগিতায় নাম দেওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রসঙ্গে পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘নিজের থেকেই কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজ্যকে পুরস্কার দিতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এ রাজ্যের নাম দেখলেই কেন্দ্র নাক কোঁচকায় যে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy