Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অশান্তি বন্ধের দাওয়াই, ছাত্রভোট তুলে দেওয়ার ভাবনা সরকারের

কলেজে কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব প্রায় বিপন্ন। তবু ছাত্র সংসদের ভোট ঘিরে থামছে না সংঘর্ষ। শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দুই গোষ্ঠীই বহু কলেজে ধুন্ধুমার বাধিয়ে দিচ্ছে! যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে ইসলামপুর কলেজে। এই পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পেতে এ বার বিকল্প ভাবনা শুরু হয়েছে রাজ্য সরকারের শীর্ষ স্তরে।

সন্দীপন চক্রবর্তী ও দেবারতি সিংহ চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৮
Share: Save:

কলেজে কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব প্রায় বিপন্ন। তবু ছাত্র সংসদের ভোট ঘিরে থামছে না সংঘর্ষ। শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দুই গোষ্ঠীই বহু কলেজে ধুন্ধুমার বাধিয়ে দিচ্ছে! যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে ইসলামপুর কলেজে। এই পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পেতে এ বার বিকল্প ভাবনা শুরু হয়েছে রাজ্য সরকারের শীর্ষ স্তরে।

অশান্তি বাধলে সংশ্লিষ্ট কলেজের ছাত্র সংগঠনের ইউনিটকে শাস্তি দেওয়া বা ঘটনায় জড়িত স্থানীয় দলীয় নেতৃত্বকে ভর্ৎসনা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তৃণমূলের রাজ্য নেতারা। কিন্তু তার কোনওটাই পাকাপাকি সমাধান নয়। তাই এ বার সরকারের শীর্ষ মহলের ভাবনা, ছাত্র সংসদের নির্বাচনই বন্ধ রাখা হোক। তার বদলে অধ্যক্ষের সঙ্গে কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্যেরা মিলে ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারেন। অর্থাৎ নির্বাচিতের বদলে ছাত্র সংসদ হবে মনোনীত। তা হলে আর মনোনয়ন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে ভোটাভুটি ঘিরে হাঙ্গামার আশঙ্কা থাকবে না। এই মতের পন্থীরা বলছেন, কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ছাত্র সংসদ মনোনীত করেই দিব্যি শান্তিতে চলছে। শিবপুরের বেসু-তে এক সময় ছাত্র নির্বাচন ঘিরে গোলমাল হতো। শ্রেণি প্রতিনিধি নির্বাচন পদ্ধতি তুলে দিয়ে সেখানেও শান্তি ফিরেছে।

আরও পড়ুন।: মেদিনীপুরের জেলের মাঠে আজ ভ্যালেন্টাইনস কাপ

সেই সঙ্গেই সরকারি স্তরে আরও প্রস্তাব, ছাত্র সংসদে অনলাইন ভোটের ব্যবস্থা করা হোক। সেখানে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের অনুমোদিত ছাত্র সংগঠন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না-ও করতে পারে। যে কোনও পড়ুয়া ‘স্বাধীন ভাবে’ প্রার্থী হবেন। তাতে সংসদের প্যানেল নিয়ে অশান্তি থামবে। সরকারি একটি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘নির্বাচন নিয়েই তো গণ্ডগোল। প্রতি বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলেই ভাল। ছাত্র সংসদ গঠনের প্রক্রিয়াটারই সংস্কার দরকার। কলেজ তো শুধু রাজনীতির জায়গা নয়। শিক্ষার মানোন্নয়নই শিক্ষা দফতরের মূল লক্ষ্য।’’ এর আগে লিংডো কমিটির সুপারিশেও বলা হয়েছিল, ছাত্র নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে না। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি বেছে নেওয়া হবে কলেজের সঙ্গে যুক্ত পড়ুয়াদের মধ্যে থেকেই।

ভাবনা আরও পাকা চেহারা নেওয়ার আগে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে শিক্ষা দফতরের একটি সূত্রের খবর, কলেজে কলেজে গোলমালে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্র সংসদ গঠনের সংস্কার করা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এক প্রস্ত কথা বলেছেন। প্রসঙ্গত, গোলমাল এড়ানোর জন্য গত দু’বছর সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধই রেখেছিল রাজ্য সরকার। এ বার ভোট ফিরতেই বিরোধীদের প্রথমে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তার পরে আবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দুই গোষ্ঠীর বিবাদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রণক্ষেত্র হয়েছে! স্থানীয় বিধায়ক বা শাসক দলের নেতারা কলেজের ছাত্র সংসদে নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়ে আরও অশান্তি বাড়িয়েছেন।

ছাত্র ভোটের চালু ব্যবস্থা আমূল বদলে ফেলার লক্ষ্যেই সরকারি স্তরে আরও পরিকল্পনা, ছাত্র সংসদে যাঁরা মনোনীত হবেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই ক্লাসে হাজিরা ৭৫% বাধ্যতামূলক হতে পারে। এরই পাশাপাশি তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘ছাত্র সংসদের জন্য বরাদ্দ টাকা নিয়েই তো যত গোলমাল! সেটা বন্ধ করা গেলে সমস্যা অনেকটা কমবে। কলেজের অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য কোথায় কত টাকা খরচ হবে, তা কলেজ কর্তৃপক্ষই ঠিক করুক।’’ ছাত্র সংসদের তহবিল খরচে সই করার অধিকার এখন সাধারণ সম্পাদকের।

বিরোধীরা অবশ্য মনে করছে, ছাত্র ভোট বন্ধ করে দিলে ছাত্র সংসদ মনোনীত করা নিয়েই অসন্তোষ ঘনীভূত হবে। তার চেয়ে বরং অনলাইনে ভোটের ব্যবস্থা স্বাস্থ্যকর প্রস্তাব। এক কালের দাপুটে ছাত্র নেতা অসীম (কাকা) চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ছাত্র রাজনীতি থেকে আদর্শটাই হারিয়ে গিয়েছে। এখানে চলছে শুধু ক্ষমতা দখলের লড়াই। আর রাজ্য যেটা করতে চাইছে, সেটা বাথটবের নোংরা জলের সঙ্গে বাচ্চাটাকেও ফেলার সামিল!’’ প্রাক্তন ছাত্র নেতা এবং সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এই সরকারের কাছে এমন ভাবনাই প্রত্যাশিত! বিধানসভায় বিরোধীরা যেখানে হেনস্থার শিকার হন, সেখানে ছাত্রদের কথা শাসক শুনতে চাইবে কেন? গোলমাল হবে বলে এর পরে পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা, সব ভোট তুলে দিয়ে মনোনীত সংস্থা গড়ে নিলেই হয়!’’ সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র সহ-সভাপতি সুবীর হালদার বলেন, ‘‘সংবিধান, আইন বা লিংডো কমিটির সুপারিশ— কোনও কিছু পড়া থাকলে কেউ এমন ভাববে না!’’

সরকারের ভাবনার কথা শুনে টিএমসিপি-র সভানেত্রী জয়া দত্ত অবশ্য বলেছেন, ‘‘দলের ঊর্ধ্বে তো কেউ নই। দল যা বলবে, আমাদের সকলকেই তা মানতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

State Government Turmoil Vote Colleges
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE