জয়েন্ট এন্ট্রান্সে মেডিক্যালের মেধাতালিকায় পেছনের দিকে নাম থাকায় ছয় পড়ুয়া কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পাননি। দুর্গাপুরের এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন তাঁরা। দিন সাতেকের মধ্যে স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের ভর্তি বাতিল করে দেন। শেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ওই ছয় পড়ুয়াকে ফের ভর্তি নিতে বাধ্য হল রাজ্যসরকার। তবে এ বার বেসরকারি কলেজ নয়, সরকারি মেডিক্যাল কলেজে।
ছয় পড়ুয়াকে এখন এখন ভর্তি করা হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল, কল্যাণী, উত্তরবঙ্গ, মালদহ, বাঁকুড়া এবং জোকার ইএসআই মেডিক্যাল কলেজে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের মেডিক্যাল কাউন্সেলিং-এর শেষ দিন। সেই দিনই রাজ্যের পক্ষ থেকে সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক পড়ুয়াদের নামের তালিকা চূড়ান্ত হয়। কিন্তু ৩০ তারিখের পরও দুর্গাপুরের ওই কলেজটিতে ফাঁকা ছিল আটটি আসন। কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই আটটি আসনে একটি প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে জয়েন্টের মেধাতালিকায় নিচের দিকে থাকা আট পড়ুয়াকে ভর্তি করে নেন।
এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু এ বছর অল ইন্ডিয়া প্রি মেডিক্যাল টেস্ট (এআইপিএমটি)- এর পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট একটি নির্দেশ জারি করে রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের ১৫% সংরক্ষিত আসনে কাউন্সেলিং এর মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়িয়ে ৭ অক্টোবর করে দেয়।
কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে এ রাজ্যে রাজ্য এবং কেন্দ্রের কোটার সব আসনেই অনলাইন কাউন্সেলিং হয়। এই কাউন্সেলিংয়ে মনোনীত হওয়া নতুন ছয় পড়ুয়ার নামের তালিকা পাঠানো হয় দুর্গাপুরের ওই কলেজে। কলেজ কর্তৃপক্ষও তড়িঘড়ি আগের ছয় পড়ুয়ার ভর্তি বাতিল করে দেন।
এর পরই সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন পড়ুয়ারা। ওই ছ’জনকে অন্য কোথাও ভর্তি করার ব্যাপারে স্বাস্থ্যভবনকে নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। আর তাতেই সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ জোটে তাঁদের।
এই ঘটনায় স্বাস্থ্যভবন এবং ওই বেসরকারি কলেজ দায় চাপিয়েছে একে অন্যের উপর। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ৩০ সেপ্টেম্বরের পর দুর্গাপুর যে ফাঁকা আসনগুলিতে ছাত্র ভর্তি নিয়েছে তা স্বাস্থ্যভবনকে জানায়নি।
কলেজের অধ্যক্ষ মধুসূদন চৌধুরীর পাল্টা দাবি, ভর্তি না নিলে কলেজের আসন ফাঁকা থেকে যেত। তাছাড়া কাউন্সেলিং পর্ব শেষ হওয়ার পরই তাঁরা ভর্তি করেছিলেন ওই ছয় পড়ুয়াকে। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের ১৫% সংরক্ষণের মধ্যে তো আমাদের কলেজের আসনগুলি পড়ে না। কিন্তু রাজ্য সরকার যদি নতুন করে পড়ুয়াদের তালিকা পাঠায় সে ক্ষেত্রে আমরা ভর্তি নিতে বাধ্য।’’
তাই যদি হয় কেন দুর্গাপুরের ওই কলেজকে নতুন ছাত্র নিতে বাধ্য করল স্বাস্থ্যভবন? উত্তরে সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুধুমাত্র কেন্দ্রের জন্য সংরক্ষিত আসনেই কাউন্সেলিং করতে হবে আমরা সেটা বুঝতে পারিনি। নির্দেশটি যথেষ্ট পরিষ্কার ছিল না। তাই এই ভুল।’’
কিন্তু এতে সমস্য দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। মেধাতালিকায় ওই ছয় পড়ুয়ার চেয়ে উপরে নাম রয়েছে অথচ সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ঠাঁই হয়নি এমন অনেক পড়ুয়াই রয়েছেন। তাঁরা তো আপত্তি তুলতে পারেন। তাঁরা আইনি পদক্ষেপ করলে স্বাস্থ্যভবন কী করবে?
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, কেউ আইনি পদক্ষেপ করলে সমস্যা বাড়বে। এর সমাধান হওয়া মুশকিল। তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যভবনের গাফিলতিতেই যোগ্যতর পড়ুয়া থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন সরকারি কলেজে সুযোগ পেয়ে গেল। এমনটা কখনই কাম্য নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy