প্রতীকী ছবি।
সারদা-রোজ ভ্যালির পরও সমানে চলিতেছে।
ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, রিকশওয়ালা থেকে টোটো-অটোচালক, দিনমজুর থেকে চাষি— বিভিন্ন স্তরের মানুষ এখনও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দৈনিক হিসেবে ‘অনামী’ সংস্থার কাছে টাকা রাখছেন।
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রাখা বন্ধ করতে সচেতনতা শিবিরও করছে রাজ্যের অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা। সঙ্গে থাকছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি, ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। এমন শিবিরে যাঁরা আসছেন, তাঁরা মূলত চাকুরিজীবী, নয় অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। এমনকি, বড় ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। সম্প্রতি কল্যাণীতেই এমন এক সচেতনতা শিবিরে শহরের যে বাসিন্দাদের নিয়ে আসা হয়েছিল, তাঁদের কেউই দৈনিক হিসেবে টাকা জমানোর শ্রেণিতে পড়েন না।
আর কল্যাণী ঘুরেই মিলেছে এমন মানুষ, যাঁরা নিয়মিত দৈনিক হিসেবে বেসরকারি সংস্থায় টাকা রাখছেন। রাজ্যের বেশ কিছু শহরতলিতেও সমবায় করে সমান্তরাল ব্যাঙ্কের ব্যবসা চালাচ্ছেন বেশ কিছু লোক।
এই ব্যবসায় যুক্ত এক জনের দাবি, তাঁরা মাসিক ৩ শতাংশ সুদে টাকা ধার দিচ্ছেন। মূলত সেখান থেকেই রোজগার। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা দৈনিক হিসেবে টাকা জমা রাখেন, তাঁদের অনেকেই প্রয়োজনে টাকা ঋণ নেন। কেউ যদি ৫০ হাজার টাকা জমিয়ে থাকেন, তার ৭৫ শতাংশ আমরা ঋণ হিসেবে দিই। তা ছাড়াও, কারও বেশি পরিমাণ টাকার প্রয়োজন থাকলে তা-ও দেওয়া হয়।’’ তাঁদের প্রতিনিধি পৌঁছে যাচ্ছেন গ্রাহকের কাছেই। দোকানে বা বাড়িতে গিয়ে প্রতি দিন টাকা তুলে নিয়ে আসছেন। এক চা-দোকানের মালিকের কথায়, ‘‘আমি দিনে ১০ টাকা করে দিই। আমার গায়ে লাগে না। এ ভাবে মাসে ৩০০ টাকা জমে। বছরের শেষে আমাকে প্রায় ৩৯০০ টাকা ফেরত দেয়। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীরা এ ভাবে জোর করে না জমালে কখনই জমানো হয় না।’’
কিন্তু সারদা, রোজ ভ্যালির নাম শোনেননি? জানেন না, কী ভাবে টাকা জমিয়ে সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন? এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘সেখানে কম টাকা দিয়ে বেশি মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখানো হয়েছিল। এখানে আমাদের বছরে ৯ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হয়। আমি প্রতি দিন ২০০ টাকা করে দিই। বছরের শেষে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পাই।’’
সারদা কাণ্ডে যেমন রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ উঠেছিল, তেমন ইঙ্গিত এখনও এ সব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না। যাঁরা টাকা জমাচ্ছেন, তাঁদের দাবি, দোকান বা বাড়ি এসে যাঁরা টাকা নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা ‘চেনা লোক’। যাঁরা সংস্থা চালাচ্ছেন, তাঁরাও ‘চেনা মানুষ’! তা ছাড়া, এক বছরের মধ্যে টাকা ফেরত পাচ্ছেন তাঁরা। কেউই আর দীর্ঘমেয়াদি আমানতে টাকা রাখছেন না।
এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি একটি ১০ টাকা ‘জমানোর খাতা’ চালু করেন। ফেব্রুয়ারি মাসে আবার নতুন একটি ১০ টাকার খাতা শুরু করেন। জানুয়ারির খাতাও চলতে থাকে। এ ভাবে প্রতি মাসে একটি করে নতুন খাতা শুরু করেন। ফলে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তাঁর ১২টি ‘জমানোর বই’ চালু হয় এবং দিনে ১২০ টাকা দিতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘গত জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে একটি করে জমা বইয়ের মেয়াদ ফুরোতে শুরু করেছে। আর এখন প্রতি মাসের শেষে আমি ৩৯০০ টাকা করে পাচ্ছি।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy