Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গলমহলের মন পেতে ডাল চাষ, বেশি বাস

কৃষির মধ্যেও বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে ডাল চাষের উপরে। গত বছর বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়ার মতো খরাপ্রবণ জেলার কয়েকটি ব্লকে পরীক্ষামূলক ভাবে ডাল চাষ করে সাফল্য পেয়েছে কৃষি দফতর।

ডাল চাষের পাঠ চলছে। নিজস্ব চিত্র

ডাল চাষের পাঠ চলছে। নিজস্ব চিত্র

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় ও সোমনাথ চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮ ০৪:২৩
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলে ঘাসফুল এ বার সে-ভাবে কেন ফুটল না, তা নিয়ে শাসক শিবিরে কাটাছেঁড়া শেষ হয়নি। তারই মধ্যে জঙ্গলমহলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন উদ্যমে ঝাঁপ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। তার অঙ্গ হিসেবে সেখানে কৃষি আর পরিবহণ ব্যবস্থায় আরও জোর দিচ্ছে তারা।

কৃষির মধ্যেও বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে ডাল চাষের উপরে। গত বছর বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়ার মতো খরাপ্রবণ জেলার কয়েকটি ব্লকে পরীক্ষামূলক ভাবে ডাল চাষ করে সাফল্য পেয়েছে কৃষি দফতর। যে-সব অঞ্চলে বছরে এক বার ধানের পরে অন্য কোনও ফসলের কথা ভাবা যেত না, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সাহায্যে এখন সেই জমিতেই মুগ, মুসুরির মতো ডাল ফলানো হচ্ছে। ওই সব এলাকায় ডাল চাষ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার।

ডাল চাষই বা কেন? বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্যবিজ্ঞানী রাজীব নাথ জানান, ডাল চাষে জল লাগে খুবই কম। তাই বর্ষায় ধান চাষের পরে মাটিতে যতটুকু জল থাকছে, তাতেই ডাল চাষ করা যাচ্ছে। তাতে ভাল ফলন হচ্ছে, পুষ্টিও মিলছে। কৃষি দফতরের সাহায্যে গ্রামের আদিবাসী মহিলাদের এই চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার ঠিক করেছে মুগ, মুসুরের পাশাপাশি জঙ্গলমহলে কলাই, খেসারির মতো ডাল চাষেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলে দলের ফলাফলে খুশি নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কারণেই মন্ত্রিত্ব থেকে কয়েক জনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের পর্যবেক্ষণ। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা জঙ্গলমহলের সর্বত্র বণ্টনের ক্ষেত্রে ফাঁক থেকে গিয়েছিল। নির্বাচনে সেটারই সুযোগ নিয়েছেন বিরোধীরা। পরের বছর লোকসভা নির্বাচন। তার অনেক আগে থেকেই চাষ আর পরিবহণে জোর দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা শুরু হয়েছে।

গত কয়েক বছরে জঙ্গলমহলে অনেক রাস্তা নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে। আগের তুলনায় যোগাযোগ ব্যবস্থারও প্রভূত উন্নতি হয়েছে বলে নবান্নের দাবি। প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে সেখানকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রে বিকল্প চাষ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নতি প্রয়োজন। জঙ্গলমহলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমকে সেখানকার বিভিন্ন রুটে আরও বেশি বাস চালানোর নির্দেশ দিয়েছে পরিবহণ দফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় এখন প্রতিদিন প্রায় ২০০ সরকারি বাস চলে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিকে যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আনতে আরও ৩০টি বাস চালানো হবে।

দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম বা এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষ জানান, আপাতত জঙ্গলমহলের সঙ্গে শিলিগুড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার করে নতুন তিনটি রুটে বাস চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যেরা প্রস্তাব দিলে নতুন রুটের সমীক্ষা শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE