ফাইল চিত্র।
রাজ্যে ডিমের জোগান ও চাহিদার ফারাক কমাতে এ বার রাজ্য সরকারই শুরু করছে বাণিজ্যিক উৎপাদন। কল্যাণী ও বাঁকুড়ার বড়জোড়াতে মুরগির খামার তৈরি করতে ষাট কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে প্রাণিসম্পদ বিকাশ উন্নয়ন নিগম। ওই দু’টি খামার থেকে প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ লক্ষ করে ডিম পাওয়া যাবে। এর জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বিশেষ প্রজাতির ৬ লক্ষ মুরগির বাচ্চা আনা হবে।
এ রাজ্যে প্রতিদিন ডিমের প্রয়োজন হয় আড়াই কোটির মতো। সংগঠিত ও অসংগঠিত পোলট্রি মিলিয়ে দেড় কোটির মতো ডিম পশ্চিমবঙ্গ থেকেই পাওয়া যায়। বাকি এক কোটির ঘাটতি মেটাতে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ডিম আমদানি করা হয়। জোগানে ঘাটতি হলেই ডিমের দাম আগুন হয়। সম্প্রতি এই চড়া দামের কারণে মিড-ডে মিলেও ডিম দিতে পারছে না রাজ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, মুরগির মাংসের চাহিদার জোগান পূরণ করে দিতে পারলেও ডিম উৎপাদনে রাজ্য বরাবর পিছিয়ে রয়েছে। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির অঙ্ক। পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতির যুক্তি, ডিম পাড়ার মুরগি যে খাবার খায়, তা এ রাজ্যে পাওয়া যায় না। সিংহভাগই ভিন্ রাজ্য থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে মুরগি পালনের খরচ বেড়ে যায়। উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে টান পড়ে লভ্যাংশে। এই কারণেই খামার মালিকেরা ডিমের থেকে মাংস উৎপাদনেরই বেশি আগ্রহী বলে তাঁর দাবি।
একই বক্তব্য আরামবাগ হ্যাচারিজ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রসূন রায়ের। তিনি বলেন, ‘‘খাবারের দাম বেশি বলেই এ রাজ্যের ডিমের উৎপাদন খরচে অন্ধ্রপ্রদেশের সঙ্গে ৪০-৫০ পয়সা ফারাক হয়ে যায়।’’
খামারের মুরগির সুষম খাবারে অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে থাকতেই হবে ভুট্টা ও সয়াবিনের দানা। এই দু’টি উপাদান মুরগির শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখে এবং ডিম পাড়তেও সাহায্য করে। অথচ ওই দু’টি কৃষিপণ্যের এ রাজ্যে উৎপাদন নেই বললেই চলে। ফলে খাবারের জন্য সেই দক্ষিণ ভারতের উপরেই পশ্চিমবঙ্গকে নির্ভর করতে হয়। তা হলে সরকার কেন মুরগির খাবার সস্তায় পাওয়ার ব্যবস্থা করছে না? আর কেনই বা রাজ্যে ভুট্টা-সয়াবিনের চাষে তেমন কেউ উদ্যোগী হচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
রোগের দাওয়াই খুঁজছে সরকারও।
প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর সূত্রের খবর, নতুন ভর্তুকি নীতিতে শর্তসাপেক্ষে মুলধনী অনুদান ৮ লক্ষ টাকা ছাড়াও মেয়াদি ঋণের উপরে সুদে ভর্তুকি, বিদ্যুৎ মাসুলে আংশিক মকুব এমনকী স্ট্যাম্প ডিউটিতেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তাতে উৎপাদন খরচ অনেকটাই বাঁচবে। পাশাপাশি রাজ্যেও মুরগি খাবার প্রস্তুতকারক সংস্থা আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে ওই কর্তা জানান। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘এক কোটি ডিমের যে ঘাটতি রাজ্যে রয়েছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৯ সালের আমরা মিটিয়ে ফেলতে পারব।’’
সরকার জেলায় জেলায় মুরগির বাচ্চা বিতরণ শুরু করেছে। চলতি অর্থবর্ষে (২০১৭-’১৮) ৬০ লক্ষ মুরগির বাচ্চা দেওয়া হবে। প্রায় সাত হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীকেও প্রায় ১২ লক্ষ মুরগি ও হাঁসের বাচ্চা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার সঙ্গে রাজ্য সরকার আর্থিক ভর্তুকি দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় ইতিমধ্যেই নতুন ৪৩টি পোলট্রি গড়ার প্রস্তাব জমা পড়েছে। প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হলে তাতেও কমপক্ষে ৩৫ লক্ষ মুরগি থাকবে। সব মিলিয়ে এর ফলে ঘাটতি পুষিয়ে যাবে বলে আশা করছে রাজ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy