Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

অবৈধ টোটো, ভ্যানো বাতিল করলে লাইসেন্স ই-রিকশার

টোটো (টুকটুক) এবং ভ্যানোর (মোটরচালিত ভ্যান রিকশা) মতো গাড়িগুলি পুরোপুরি বাতিল করে ই-রিকশা (ইঞ্জিন রিকশা) চালু হচ্ছে গোটা রাজ্যে। ইতিমধ্যে পরিবহণ দফতরের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বেশ কিছু ই-রিকশা পথে নেমেছে। মিলছে চালকের লাইসেন্সও।

ছবি: সুদীপ ঘোষ

ছবি: সুদীপ ঘোষ

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৫
Share: Save:

টোটো (টুকটুক) এবং ভ্যানোর (মোটরচালিত ভ্যান রিকশা) মতো গাড়িগুলি পুরোপুরি বাতিল করে ই-রিকশা (ইঞ্জিন রিকশা) চালু হচ্ছে গোটা রাজ্যে। ইতিমধ্যে পরিবহণ দফতরের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বেশ কিছু ই-রিকশা পথে নেমেছে। মিলছে চালকের লাইসেন্সও। নতুন ই-রিকশা কিনে পরিবহণ দফতরের অনুমতি তো মিলছেই, পাশাপাশি যাদের টোটো বা ভ্যানো রয়েছে, তাঁরা সেটি ভেঙে ই-রিকশা কিনলে তবেই মিলছে পরিবহণ দফতরের অনুমতি। এর ফলে এক দিকে যেমন আদালতের নির্দেশ মেনে টোটো, ভ্যানো বন্ধ হচ্ছে, তেমনই চালকেরাও কর্মহীন হয়ে পড়ছেন না।

এ রাজ্যে ১ লক্ষেরও বেশি টোটো রয়েছে। রাজ্য পরিবহণ দফতরের বিশেষ সচিব ভীষ্মদেব দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘টোটো, ভ্যানো ছিল বেআইনি। ই-রিকশার ক্ষেত্রে সমস্ত নথিপত্র বৈধ তো হবেই, পাশাপাশি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বিমার সুবিধাও মিলবে। টোটো ছেড়ে খুব কম টাকা জমা দিয়ে ব্যাঙ্ক ঋণের সুবিধা নিয়ে ই-রিকশা কেনা যাবে।’

অনেকটা অটো রিকশার ধাঁচে নতুন ই-রিকশায় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কম বলে জানিয়েছেন পরিবহণ সচিব। ই-রিকশা যাঁরা তৈরি করেন, তেমনই একটি সংস্থার তরফে সুবীর দাস বলেন, ‘‘শক্তপোক্ত ই-রিকশার ওজন প্রায় সাড়ে ৩০০ কেজি। সাধারণ টোটোর চেয়ে অনেক বেশি। ইঞ্জিন ও ব্রেকও শক্তিশালী। চালক ও যাত্রীর জন্য মোটর ভেহিক্‌লস আইনে অন্য সুযোগ-সুবিধাও মিলবে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরের পাশাপাশি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন চালক।’’

টোটো-ভ্যানোর মতো গাড়িগুলি এ রাজ্যে চালানো যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কারণ, গাড়ি তৈরির পরে তা পথে চালাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আইক্যাট’ (ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর অটোমোটিভ টেকনোলজি)র অনুমোদন থাকতে হয়। থাকতে হয়, টিসিআর (ট্রেড সার্টিফিকেট অফ রেজিস্ট্রেশন) নম্বরও। টোটোর ক্ষেত্রে সেই সব অনুমতি দূর অস্ত্‌, থাকত না চালকের লাইসেন্সও।

তা সত্ত্বেও গোটা রাজ্যে বেআইনি ভাবে চলছিল টোটো, ভ্যানো। পলকা গাড়ি উল্টে প্রায়শই দুর্ঘটনাও ঘটছিল। স্থানীয় লেদ কারখানাতেও তৈরি হচ্ছিল গাড়ি। লক্ষ টাকা ব্যয়ে টোটো কিনে রোজগারে নেমেছিলেন হাজার হাজার বেকার ছেলে। টোটো বাতিল হলে তাঁদের রুজির কী হবে, প্রশ্ন ওঠে তা নিয়েও। সেই কথা মাথায় রেখে পরিবহণ দফতরের সিদ্ধান্ত, টোটো বা ভ্যানো বাতিল করে ই-রিকশা নেওয়ার আবেদন করতে হবে স্থানীয় পুরসভা, পঞ্চায়েতে। যতদিন পর্যন্ত ই-রিকশা না মিলছে, ততদিন পর্যন্ত সেই অনুমতি নিয়েই আপাতত টোটো বা ভ্যানো চালানো যাবে।

কী ভাবে মিলবে ই-রিকশা?

পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর— সরকার নির্দিষ্ট, অনুমতিপ্রাপ্ত সংস্থা থেকেই ই-রিকশা কিনতে হবে। দাম পড়বে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার মতো। পুরনো টোটো, ভ্যানো দুমড়ে-মুচড়ে নষ্ট করে দেওয়ার পরে মিলবে শংসাপত্র। উত্তর ২৪ পরগনার পরিবহণ দফতরের সদস্য গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘টোটো বা ভ্যানোর পুরনো ব্যাটারি, চার্জার ই-রিকশায় ব্যবহার করা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ই-রিকশার দাম ৩০-৪০ হাজার টাকা কমে যাচ্ছে।’’ গোপালবাবু আরও জানান, ই-রিকশা কিনতে ঋণের আবেদনও করা যাবে। সে ক্ষেত্রে কিছু টাকা জমা দিয়ে ব্যাঙ্কে সহজ মাসিক কিস্তিতে বাকি টাকা শোধ করা যাবে।

এর পরে স্থানীয় পরিবহণ অফিসে চালকের লাইসেন্স এবং পুরনো টোটো-ভ্যানো নষ্টের শংসাপত্র দাখিল করে রেজিস্ট্রেশন নম্বরের আবেদন করতে হবে। সব পাওয়া গেলে তবেই পথে নামানো যাবে ই-রিকশা। চালকের লাইসেন্সেই উল্লেখ থাকবে, কোন রুটে তা চলবে। তবে জাতীয় সড়ক বা রাজ্য সড়কে ই-রিকশা চালানো যাবে না বলেও নির্দেশ জারি হয়েছে।

কলকাতার শহরতলি ছাড়াও দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদে ইতিমধ্যেই টোটো বাতিল করে ই-রিকশা বিলির কাজ শুরু করছে পরিবহণ দফতর। উত্তর ২৪ পরগনাতেই যেমন ১৫ হাজারেরও বেশি টোটো রয়েছে। ই-রিকশার জন্য ১০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সিদ্ধার্থ রায়। ইতিমধ্যে ১০০টির মতো ই-রিকশা রাস্তায় নেমে পড়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE