Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

টাকা উঠবে তো! বুঝে তবেই প্রকল্প পর্যটনে

পর্যটন প্রকল্পে যথেচ্ছ টাকা ঢালার পথে হাঁটতে রাজি নয় রাজ্য। টাকা ঢেলে কোষাগারে কিছু ফেরত আসবে কি না, সেই হিসেব কষেই এগোতে চায় তারা। তাই নিছক ‘সুপারিশ’-এর জোরে কোনও পর্যটন প্রকল্পই যে পাশ করিয়ে নেওয়া যাবে না, সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৩
Share: Save:

সমুদ্র-পাহাড়-অরণ্য নিয়ে বাংলার প্রায় প্রতিটি প্রান্তই পর্যটকদের জন্য সমাদরের আসন বিছিয়ে রেখেছে। জেলায় জেলায় নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়তে উৎসাহ দিচ্ছে সরকারও।

কিন্তু পর্যটন প্রকল্পে যথেচ্ছ টাকা ঢালার পথে হাঁটতে রাজি নয় রাজ্য। টাকা ঢেলে কোষাগারে কিছু ফেরত আসবে কি না, সেই হিসেব কষেই এগোতে চায় তারা। তাই নিছক ‘সুপারিশ’-এর জোরে কোনও পর্যটন প্রকল্পই যে পাশ করিয়ে নেওয়া যাবে না, সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প লাভজনক হবে কি না, তা ভাল ভাবে যাচাই করে তবেই প্রকল্প-প্রস্তাব পাঠাতে হবে। অবাস্তব প্রস্তাবের স্রোত ঠেকাতে জেলাশাসকদের চিঠি লিখেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব তথা পর্যটনসচিব অত্রি ভট্টাচার্য। কোন কোন মাপকাঠিতে প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে, জেলাশাসকদের তা জানানো হয়েছে।

পর্যটনে বরাদ্দ বাজেটের পূর্ণ ব্যবহারের উপরে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই নাগাড়ে আসছে হরেক রকম প্রকল্প-প্রস্তাব। দফতরের আধিকারিকদের একাংশের ব্যাখ্যা, এমনিতে হয়তো প্রকল্পগুলির গুরুত্ব থাকতে পারে। কিন্তু পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের দিক থেকে অনেক প্রস্তাবের প্রয়োজন কার্যত নেই বললেই চলে। তাই সেই সব প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ করার অর্থ, টাকা কার্যত জলে দেওয়া!

জেলাশাসকের নেতৃত্বে সব জেলায় পর্যটন উন্নয়ন কমিটি (ডিটিডিসি) গড়া হয়েছে। ওই সব কমিটিই প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠায়। কিছু জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংগঠন বা বিভিন্ন কমিটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠায় ডিটিডিসি-তে। প্রকল্পের যৌক্তিকতা যাচাই করে তবে তা পর্যটন দফতরে পাঠানোর কথা ডিটিডিসি-র।

সব ডিটিডিসি-কে জানানো হয়েছিল, একমাত্র সময়োপযোগী এবং লাভজনক প্রকল্পেই টাকা দেবে রাজ্য। তাই প্রকল্পের বাস্তব দিক বিচার করে তবেই তা পাঠাতে হবে। কিন্তু তার পরেও প্রকল্প-প্রস্তাবের জোয়ার বন্ধ হয়নি। তাই জেলাশাসকদের করণীয় স্থির করে দেওয়া হল বলে মনে করছেন দফতরের অনেক আধিকারিক। ‘‘এক-একটা প্রকল্পের জন্য সাত-দশ কোটি টাকা খরচ হবে। পর্যটকদের আনাগোনা থেকে কত টাকা ফেরত আসবে, সেটা আগাম বুঝে নিতে হবে। পর্যটনে সরকারের উৎসাহ দেওয়ার অর্থ যে শুধু খরচ করা নয়, তা বুঝতে হবে সকলকে,’’ বলছেন এক পর্যটন-কর্তা।

এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পের প্রস্তাব যাচাইয়ের মাপকাঠি স্থির করে দিয়েছে নবান্ন। ভবিষ্যতে সেই মাপকাঠিতে প্রস্তাব যাচাই করে তবে তা পর্যটন দফতরে পাঠাতে হবে জেলাশাসদের।

কেমন সেই মাপকাঠি? পর্যটন-কর্তাদের ব্যাখ্যা: • দেখতে হবে, প্রকল্পটি কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে পর্যটকদের কাছে। বছরে কত পর্যটকের সমাগম হতে পারে।• রূপায়ণের পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্পটি লাভজনক হবে কি না।• প্রকল্পটিকে ঘিরে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা কতটা।• কোন জমিতে প্রকল্প গড়ে উঠবে। জমির চরিত্র কী। মালিকানা কার। এলাকার মান কেমন ইত্যাদি।

স্থানীয়, অন্যান্য জেলা, ভিন্‌রাজ্য নাকি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য প্রকল্পটি গড়তে চাওয়া হচ্ছে, তা নিশ্চিত করে জানাতে হবে। তাই প্রকল্পের সবিস্তার রূপরেখা পাঠানো বাধ্যতামূলক। কারা প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণ করবেন, পর্যটকদের সামগ্রিক নিরাপত্তার কী বন্দোবস্ত হবে, প্রকল্পস্থলে পৌঁছতে যানবাহনের ব্যবস্থা-সহ সব তথ্যই বিস্তারিত ভাবে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবের সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna Tourism Tourists Investment Return
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE