Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কেন্দ্রের মাটি রাজ্যের চরে

হলদিয়া বন্দরের প্রস্তাবে সম্মতি দিল রাজ্যের ভূমি দফতর। এর ফলে কেন্দ্রের মাটি এ বার ফেলা হবে রাজ্যে চরে। গত সোমবার কলকাতা বন্দর কর্তাদের আশ্বাস দিয়ে নবান্ন জানিয়েছে, নয়াচরে বন্দরের পলি ফেলতে আরও কোনও আপত্তি করবে না রাজ্য।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:৩৪
Share: Save:

এগারো বছর পর অবশেষে সমাধান মিলল। হলদিয়া বন্দরের প্রস্তাবে সম্মতি দিল রাজ্যের ভূমি দফতর। এর ফলে কেন্দ্রের মাটি এ বার ফেলা হবে রাজ্যে চরে। গত সোমবার কলকাতা বন্দর কর্তাদের আশ্বাস দিয়ে নবান্ন জানিয়েছে, নয়াচরে বন্দরের পলি ফেলতে আরও কোনও আপত্তি করবে না রাজ্য। বরং, জাহাজ মন্ত্রক যাতে এই কাজ তাড়াতাড়ি শুরু করতে পারে, সে জন্য কাগজপত্র তৈরির কাজ দ্রুত সেরে ফেলবে ভূমি দফতর।

রাজনৈতিক মহল অবশ্য নয়াচরে বন্দরকে পলি ফেলতে দেওয়ার মতো আপাত নিরীহ ঘটনার মধ্যে অন্য অঙ্কও দেখছেন। কারণ, ২০০৫-০৬ সালে প্রথম হলদিয়া বন্দরের ড্রেজিংয়ের পলি নদীর পাড়ে ফেলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ১১ বছর ধরে সেই জমি মেলেনি। বছর দেড়েক আগে বন্দর ফের নয়াচরে পলি ফেলতে চেয়ে অনুরোধ করেছিল। তাতে হঠাৎই তৎপর নবান্ন। অনেকেই মনে করছেন, জাহাজ মন্ত্রী নীতিন গডকড়ীর সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালোই। এখন জাহাজ সচিবও বেঙ্গল ক্যাডারের আইএএস অফিসার গোপালকৃষ্ণ। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইদানীং মুখ্যমন্ত্রীও কিঞ্চিত নরম বলেই মনে করছেন দলের সতীর্থরা। নীতিগত ভাবে কেন্দ্রের নীতির সমালোচনা করলেও মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এখন মোদী-বিরোধী কথা শোনা যাচ্ছে না।

এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নবান্নের নয়াচরে ‘হ্যাঁ’ করার সম্পর্ক রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও বন্দর বা রাজ্যের আমলারা কেউই এর মধ্যে রাজনীতি আনতে চান না। বন্দরের কর্তারা জানান, এখন জাহাজ আসা-যাওয়ার পথে(চ্যানেল) পলি তুলে নদীতেই দূরে কোথাও ফেলে আসা হয়। ফলে সেই পলি আবার চ্যানেলে এসে জমা হয়। পলি যদি পাড়ে কোথাও ফেলা যেত তা হলে বন্দরের নাব্যতা অনেকটাই বাড়ানো সম্ভব হত। সেই কারণেই ১১ বছর আগে নন্দীগ্রামে ২৫০০ একর জমি চাওয়া হয়েছিল পলি ফেলার জন্য। রাজ্য তা দিতে পারেনি। সম্প্রতি নয়াচরের দক্ষিণে ১০ কিমি এলাকা জুড়ে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে পলি ফেলার প্রস্তাব দেয় বন্দর। ঘটনাচক্রে নয়াচরের মালিকানা এখন অনাবাসী শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের হাতে। ভূমি দফতরের কর্তারা বন্দরকে জানিয়েছেন, পলি ফেলতে দিতে প্রসূনবাবু সংস্থা বাধা হবে না। সেই দায়িত্ব সরকার নিচ্ছে। তা পেলেই পলি ফেলার অনুমতি দিয়ে দেওয়া হবে। এক ভূমি কর্তা জানাচ্ছেন, নয়াচর হাতে নিয়েও সংশ্লিষ্ট সংস্থা কোনও কাজ করেনি। তাই জমি ফিরিয়ে নিতে সরকারের বাধা নেই। তবে জমি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরুর আগে বন্দরকে পলি ফেলতে দিতে আপত্তির কিছু নেই বলে ওই সংস্থা সরকারকে জানিয়েছে।

বন্দরের পরিকল্পনা হল, হলদি ও হুগলি নদীর সংযোগস্থলে নদীর বুকে বিরাট গর্ত করা হবে। সেখানে যে পলি জমবে তা পাইপে নিয়ে গিয়ে ফেলা হবে ২ কিমি দূরের নয়াচর দ্বীপে। অকল্যান্ড বা জেলিংহাম চ্যানেল থেকেও নিয়ম করে পলি তুলে নয়াচরেই ফেলবে বন্দর। এক কর্তার কথায়, ‘‘এখন হলদিয়ার নাব্যতা ৭.৭ মিটারের আশপাশে থাকছে। নয়াচর পেলে নাব্যতা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE