Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রায় অবাধেই মিলছে অ্যাসিড

দেশ জুড়ে অবাধে অ্যাসিড বিক্রি বন্ধের ডাক দিয়ে এ রাজ্যে পা রেখেছেন লক্ষ্মী অগ্রবাল। যিনি ১৫ বছর বয়সে দিল্লিতে নিজেই অ্যাসিড আক্রান্ত হন। কিন্তু তাঁর ডাক অ্যাসিড বিক্রেতাদের কাছে কতটা পৌঁছবে, সংশয়ে বহু মানুষ। কারণ, দুই জেলাতেই নজরদারি কার্যত শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ। সরেজমিন দেখল আনন্দবাজার। দেশ জুড়ে অবাধে অ্যাসিড বিক্রি বন্ধের ডাক দিয়ে এ রাজ্যে পা রেখেছেন লক্ষ্মী অগ্রবাল। যিনি ১৫ বছর বয়সে দিল্লিতে নিজেই অ্যাসিড আক্রান্ত হন। কিন্তু তাঁর ডাক অ্যাসিড বিক্রেতাদের কাছে কতটা পৌঁছবে, সংশয়ে বহু মানুষ। কারণ, দুই জেলাতেই নজরদারি কার্যত শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ। সরেজমিন দেখল আনন্দবাজার।

বেআইনি: খোলা বাজারে বিকোচ্ছে অ্যাসিড। ফাইল ছবি

বেআইনি: খোলা বাজারে বিকোচ্ছে অ্যাসিড। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০২:০২
Share: Save:

দেখার নেই কেউ! দুই জেলাতেই কার্যত অবাধে অ্যাসিড বিক্রি হয়েই চলেছে।

গোটা দেশেই অ্যাসিড-হানার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিশিষ্ট মুখ লক্ষ্মী। অ্যাসিড-হানার ঘটনা রয়েছে হাওড়া-হুগলি— এই দুই জেলাতেও। কিন্তু তার পরেও পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ল কই!

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অ্যাসিড বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হয় দোকানিকে। বছরখানেক আগে উলুবেড়িয়ার তৎকালীন মহকুমাশাসক অংশুল গুপ্তের নেতৃত্বে উলুবেড়িয়া এবং বাগনানের বেশ কয়েকটি হার্ডওয়্যারের দোকানে অভিযান চালানো হয়। বেআইনি ভাবে মজুত বহু অ্যাসিডের বোতল বাজেয়াপ্ত করা হয়। হিসেবের খাতা তৈরি করে তা প্রতি মাসে জেলা প্রশাসনের কাছে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিডিও-দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা যেন পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত অভিযান চালান।

কিন্তু তার পরেও মাসদুয়েক আগে উলুবেড়িয়ার মালপাড়ায় শ্যালিকার মুখে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ ওঠে এক যুবকের বিরুদ্ধে। ফের অ্যাসিডের সহজলভ্যতার কথা সামনে আসে। কিন্তু কেন মানা যাচ্ছে না নিয়ম?

অভিযান যে নিয়মিত চালানো হয় না, তা কার্যত মেনে নিয়েছেন হাওড়া গ্রামীণ এলাকার বেশ কিছু থানার ওসি-রা। তাঁদের দাবি, নিছক সন্দেহের ভিত্তিতে কোনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দেওয়া যায় না। অভিযোগ থাকলে তদন্তের স্বার্থে নির্দিষ্ট কোনও দোকানে যাওয়া যায়। তাঁরা সেটাই করেন।

অ্যাসিড-টেস্ট

• জেলাশাসকের থেকে অ্যাসিড বিক্রির লাইসেন্স নিতে হবে।

• বিক্রেতাকে স্টক রেজিস্টার রাখতে হবে।

• ক্রেতার নাম-ঠিকানা এবং উদ্দেশ্য লিখে তাঁকে দিয়ে সই করাতে হবে।

• ক্রেতাকে রসিদ দিতে হবে।

• শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত অ্যাসিডের বিষয়ে ল্যাবরেটরির দায়িত্বপ্রাপ্তরাই দায়ী থাকবেন।

• বেআইনি ভাবে অ্যাসিড বিক্রি করে ধরা পড়লে জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।

অংশুল গুপ্তের নেতৃত্বে ওই অভিযানের পরে দোকানিদের কী করণীয়, সে ব্যাপারে নিয়মিত প্রচার করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কোনও অভিযানই আর হয়নি। সবই দোকানদারদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রতি মাসে পুলিশ এবং জেল‌া প্রশাসনের কাছে হিসাব দাখিল করে লাইসেন্স নবীকরণ করান বটে কিন্তু খাতার হিসাবের কতটা সত্য, তা আর খতিয়ে দেখা হয় না বলে মানছে পুলিশের একাংশই। অভিযোগ, সেই ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে অবাধে চলছে অ্যাসিড বিক্রি।

বাগনান, উলুবেড়িয়া, আমতা প্রভৃতি এলাকায় বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের দোকানে গিয়ে জানা গিয়েছে, ক্রেতাদের পরিচয় বা উদ্দেশ্য না জেনেই বিক্রি করা হচ্ছে অ্যাসিড। কেন বন্ধ হয়ে গেল অভিযান?

উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক তুষার সিংলা বলেন, ‘‘আমি নতুন এসেছি। আগের বারের অভিযান নিয়ে তেমন কিছু বলতে পারব না। তবে বেআইনি অ্যাসিড বিক্রি বরদাস্ত করা হবে না। নতুন করে অভিযানের পরিকল্পনা করা হবে। বাড়ানো হবে নজরদারিও।’’ গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মার অবশ্য দাবি, বেআইনি অ্যাসিড বিক্রি যাতে না হয় তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি চলে।

প্রায় একই দাবি করেছেন চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমারও। তিনিও বলেন, ‘‘আমরা আইন প্রয়োগের উপর জোর দিচ্ছি। যাতে বাজে কাজে কেউ অ্যাসিড ব্যবহার করতে না পারে।’’

পুলিশ কমিশনার ওই দাবি করলেও দেখা যাচ্ছে, হুগলিতেও অ্যাসিড পাওয়া খুব শক্ত নয়। নিয়ম-বিধির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন পাড়ার হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে সোনার কারিগর বা কলের মিস্ত্রিরা অবাধেই অ্যাসিড কিনছেন। জেলার এক হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী তো বলেই দিলেন, ‘‘আমাদের পরিচিত কেউ পেশার কাজে চাইলে আমরা অ্যাসিড বিক্রি করি।’’

‘বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতি’র সদস্য গোপাল ধর বলেন, ‘‘আমাদের সরকারি স্তরে অ্যাসিড রাখার পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা সেই নিয়ম অগ্রাহ্য করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে। আমাদের সমিতির সদস্যদেরও সেই ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’’ ‘ফার্মাসিউটিক্যাল ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল’-এর রাজ্য কমিটির সদস্য প্রণব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বর্ষাকালে অনেক ওষুধের দোকানে সাপের উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য কার্বলিক অ্যাসিড রাখা হয়। কিন্তু ওই অ্যাসিড রাখার ক্ষেত্রে বিধি মানার প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা সে ভাবে সচেতন নন। প্রশাসনের তরফেও সে ভাবে কোনও নজরদারি নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Acid Selling Acid Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE