Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘গায়ে আগুন নিয়েই ঝাঁপ দিলাম পুকুরে’

কমলাহাটের বাসিন্দা বছর সতেরোর রঞ্জু স্কুলে পড়লেও পুজোর আগে দু’পয়সা রোজগারের জন্য ঝুঁকি নিয়েই তাকে সোনারপুরের বাজি কারখানায় কাজ করতে পাঠিয়েছিল তার পরিবার।

—জ্বলছে কারখানা। নিজস্ব চিত্র

—জ্বলছে কারখানা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৫২
Share: Save:

আগুন লেগে গিয়েছিল গায়ে। ‘‘কোনও রকমে বেরিয়ে এসে কারখানার পাশের পুকুরে ঝাঁপ মারলাম,’’ রবিবার সন্ধ্যায় চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বলল মাধ্যমিক পড়ুয়া রঞ্জু হালদার।

কমলাহাটের বাসিন্দা বছর সতেরোর রঞ্জু স্কুলে পড়লেও পুজোর আগে দু’পয়সা রোজগারের জন্য ঝুঁকি নিয়েই তাকে সোনারপুরের বাজি কারখানায় কাজ করতে পাঠিয়েছিল তার পরিবার। হাসপাতাল জানায়, বিস্ফোরণের আগুনে ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে সে। চিকিৎসা চলছে নিউ ক্যাজুয়্যালটি ওয়ার্ডে। তার শয্যার পাশে বসে ছিলেন মা সুনয়নীদেবী। তিনি বলেন, ‘‘আগে এক বার ওই কারখানায় আগুন লেগেছিল বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আবার যে এমনটা হবে, ভাবতে পারিনি। তা হলে কি আর ছেলেকে পাঠাতাম!’’ ছেলে বেঁচে ফিরেছে, এই ভেবেই তিনি একটু আশ্বস্ত। যদিও রঞ্জুর চোখেমুখে চেপে বসেছে বিস্ফোরণের আতঙ্ক।

শুধু রঞ্জু নয়, তার মতো অনেকেই পড়তে পড়তে বা লেখাপড়া ছেড়ে বাজি কারখানায় কাজ করতে এসেছিল অভাবের সংসারে সাশ্রয়ের আশায়। এ দিন সেই কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দেবাশিস সর্দার।

আরও পড়ুন: সোনারপুরে বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত ১

বছর উনিশের দেবাশিস বাড়ির মেজো ছেলে। মোট চার ভাই, চার বোন। বাবা চাষ-আবাদ করেন। তাতে সংসার চলে না। তাই বাজি কারখানায় কাজ নেন দেবাশিস। এ দিন সকালে অন্যান্য দিনের মতোই গিয়েছিলেন কারখানায়। সঙ্গে ছিল ভাই শুভাশিসও। তবে দুর্ঘটনার সময় কারখানার বাইরে থাকায় সে বেঁচে গিয়েছে। অগ্নিদগ্ধ দেবাশিসকে প্রথমে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে ‘রেফার’ করা হয় চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। বিকেল গিয়ে দেখা যায়, দেবাশিসের বাঁ পা এবং বাঁ হাতে প্লাস্টার। ডান পায়ে ব্যান্ডেজ। বাঁ হাতে, পিঠেও ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, আগুনে ঝলসে গিয়েছে তাঁর পিঠ। ইঞ্জেকশন, ওষুধ দিয়েও যন্ত্রণা কমাতে পারেননি চিকিৎসকেরা। যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে কখনও উঠে বসতে চাইছেন। মুখে একটাই কথা: ‘‘আমাকে জল দে একটু।’’ যন্ত্রণায় এতটাই ছটফট করছিলেন যে, রীতিমতো হাত-পা চেপে রাখতে হয়। শুভাশিস বলল, ‘‘খোলে মশলা পোরার কাজ চলছিল। কাজ করতে করতে আমি একটু বাইরে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি আগুন। মুহূর্তের মধ্যে কারখানা দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করল। দাদাকে কোনও রকমে বার করে আনি।’’ দুই হাসপাতাল ঘুরেও বাঁচানো যায়নি দেবাশিসকে। সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়।

অগ্নিদগ্ধ হয়ে ওই হাসপাতালেরই নিউ ক্যাজুয়্যালটি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন বিক্রম মণ্ডল (১৮)। তাঁর সারা শরীরই পুড়ে গিয়েছে। মুখও ঝলসে কালো। ঝলসানো শরীরটা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের সুপার সন্দীপ ঘোষ বলেন, ‘‘সোনারপুরের বাজি কারখানার বিস্ফোরণে দগ্ধ পাঁচ জনকে পাঠানো হয়েছিল। দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভর্তি হয় তিন জন। সন্ধ্যায় এক জন মারা গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Explosion Frie Cracker Fire Pond
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE