Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শাসকদলের ছাত্র নেতার হাতে হেনস্থা সিভিক ভলেন্টিয়ার

এ বার পানিহাটিতে শাসকদলের এক ছাত্র নেতার হাতে মারধর ও হেনস্থার শিকার হলেন দুই সিভিক ভলেন্টিয়ার। পুলিশ নিজেই ওই নেতা এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও মারধরের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৫ ২১:০৬
Share: Save:

এ বার পানিহাটিতে শাসকদলের এক ছাত্র নেতার হাতে মারধর ও হেনস্থার শিকার হলেন দুই সিভিক ভলেন্টিয়ার। পুলিশ নিজেই ওই নেতা এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও মারধরের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এক জন অভিযুক্তও গ্রেফতার হয়নি।

শাসকদলের নেতা-মন্ত্রী থেকে তাঁদের আত্মীয়পরিজনদের হাতে একের পর এক পুলিশকে হেনস্থা-মারধরের পরম্পরা চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। কয়েক মাস আগেই ট্রাফিক নিয়ম মেনে গাড়ি না চালানোর জন্য সাংসদ দোলা সেনকে আটকে ছিলেন বাগুইআটির এক সিভিক ভলেন্টিয়ার। এই অপরাধে ওই সিভিক ভলেন্টিয়ারকে রাস্তার মাঝে কান ধরে ওঠ-বোস করানোর নিদান দিয়েছিলেন দোলা। আবার দোলা-কাণ্ডের কয়েক মাস আগে ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রতিবাদ করায় এক কনস্টেবলকে ধাক্কা মারার অভিযোগ ওঠে সাংসদ প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। নেতা-নেত্রীদের পাশাপাশি রাসবিহারী মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করার প্রতিবাদ করায় এক কনস্টেবলকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল কলকাতার মেয়রের ভাইঝি দেবপ্রিয়া চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। এরও কয়েক মাস আগে ডানকুনিতে টোল ট্যাক্স চাওয়ার অপরাধে টোলপ্লাজার এক কর্মীকে জুতো দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছিল সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান আবু আয়েশ মণ্ডলের বিরুদ্ধে।

এ বার তীর সোদপুর-পানিহাটির তৃণমূল ছাত্র নেতা অশোক কর ওরফে বুবাইয়ের দিকে। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘোলা থানার কাঠগোলা পূর্বায়ন এলাকায় নৈশ পাহারাদারদের সঙ্গে বচসা-হাতাহাতি বাধে অশোক ও তাঁর সঙ্গীদের। সেই সময় বাপি নামের এক নৈশ পাহারাদার এলাকার নাগরিক কমিটির সম্পাদক তথা তৃণমূলের পূর্ব পানিহাটির সভাপতি সম্রাট চক্রবর্তীর বাড়িতে চলে যান। কিন্তু অশোকরা তাঁকে তাড়া করে। সেই সময় ঘটনাস্থলে চলে আসে ঘোলা থানার রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। গাড়ি থেকে নেমে দু’জন সিভিক ভলেন্টিয়ার—অভি মহালনবীশ ও বুদ্ধদেব বারিক বচসা থামাতে গেলে তাঁদের উপর চড়াও হন ওই ছাত্র নেতা ও তার সঙ্গীরা। অভিযোগ, পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়ে দুই সিভিক ভলেন্টিয়ারকে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। এমনকী তাঁদের চাকরি নিয়েও চ্যালেঞ্জও করেন অশোক। সেই সময় ঘটনাস্থলে সম্রাটও উপস্থিত ছিলেন।

ওই দিন রাতেই ঘোলা থানায় পুলিশ যে মামলা দায়ের করেছে তাতে অশোক ও তার সঙ্গীদের পাশাপাশি সম্রাটের নামও রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে সম্রাটের দাবি, ‘‘আমি দুই দলের গণ্ডগোল থামাতে বাইরে এসেছিলাম। আমি কেন সিভিক ভলেন্টিয়ারদের মারবো? পরিকল্পিতভাবে আমার নামে কুৎসা ছড়ানো হচ্ছে।’’ পুলিশও ঘটনায় সম্রাটের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে। তবে প্রসূণ, দোলা কিংবা দেবপ্রিয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ কর্তারা কার্যত মুখে কুলুপ আঁটলেও পানিহাটির ঘটনায় কিন্তু পুলিশ যথেষ্ঠ সক্রিয়। পুলিশ কমিশনারের মন্তব্য: ‘‘রাত ১২টার পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মারামারি-বচসা করবে আর পুলিশ কর্মীরা তাতে বাধা দিলে তাঁদের হেনস্থা করা হবে, এটা মানা যাবে না।’’

তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগণার জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘অশোক আমাদের দলের কেউ নয়। তবে সম্রাটের নাম কেন জড়়ানো হল বুঝতে পারছি না। প্রকৃত সত্যটা জানতে হবে। কেউ অহেতুক তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপাবেন তা হবে না।’’ জেলার আরেক নেতা তথা পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘অশোক আমাদের ছাত্র নেতা। ওঁ এমন কাজ করতে পারে না।’’

পাশাপাশি নির্মলবাবু দুই সিভিক ভলেন্টিয়ারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘দুই পাড়ার দুই নৈশ পাহারাদারদের মধ্যে ছোটখাটো বিষয়ে বচসা চলছিল। ওঁরা নিজেরাই তা মিটিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু ওখানে আচমকা সিভিক ভলেন্টিয়াররা এসে লাঠি চার্জ করলেন কেন তা বুঝতে পারছি না। সিভিক ভলেন্টিয়াররা কি লাঠি চার্জ করতে পারেন?’’ পুলিশ অবশ্য লাঠি চার্জের কথা স্বীকার করেনি। পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহের স্পষ্ট দাবি, ‘‘এত রাতে পুলিশ যদি কাউকে গণ্ডগোল থেকে বিরত হয়ে সরে যেতে বলেন তবে সেটাকে নির্দেশ বলেই মানতে হবে। আর সেটা অমান্য করে উল্টে চ্যালেঞ্জ জানালে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগই দায়ের হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panihati TMCP TMC Sodepur Dola
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE