Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রেসিডেন্সির ছাত্র সংসদে উজ্জ্বল গ্রাম থেকে মফস্‌সলের মুখ

বৃহস্পতিবার ছাত্র ভোটে জয়ের পরে যাঁকে অনেকেই রসিকতা করে ‘প্রেসিডেন্সির প্রেসিডেন্ট’ বলছেন, সেই মিমোসা ঘোড়াই মেদিনীপুরের মেয়ে।

মিমোসা ঘোড়াই। —নিজস্ব চিত্র

মিমোসা ঘোড়াই। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৮
Share: Save:

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের জয়জয়কারে উজ্জ্বল মুখগুলির বেশিরভাগই জেলা ও মফস্‌সলের। শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, কার্যনির্বাহী পদাধিকারীর অধিকাংশই জেলা ও মফস্‌সলের কৃতী পড়ুয়া।

বৃহস্পতিবার ছাত্র ভোটে জয়ের পরে যাঁকে অনেকেই রসিকতা করে ‘প্রেসিডেন্সির প্রেসিডেন্ট’ বলছেন, সেই মিমোসা ঘোড়াই মেদিনীপুরের মেয়ে। ছাত্র সংসদের সভানেত্রী (প্রেসিডেন্ট) মিমোসার জন্ম দীর্ঘদিনের কংগ্রেসের ‘গড়’ পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের সুন্দরপুরে। আর বেড়ে ওঠা তৃণমূলের ‘অধিকারী গড়’ কাঁথি শহরে।

বামপন্থী রাজনীতির হাতেখড়িটা মিমোসার হয়েছিল ঘরেই। বাবা বসন্ত ঘোড়াই এসএফআইয়ের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট সম্পাদক ছিলেন। পরে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। মা শিক্ষিকা স্বপ্নারানি মণ্ডলও ২০১০ সালে কাঁথির পুরভোটে নির্দল হিসেবে লড়েছিলেন। মিমোসা মানছেন, ‘‘বাবা কীভাবে মানুষের জন্য কাজ করে সেটা ছোট থেকে দেখেছি। সেই ভালবাসা থেকেই সক্রিয় ছাত্র রাজনীতিতে আসা। বাবা-মাও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।’’ জীবনবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিমোসা। লাতিনে মিমোসা শব্দের অর্থ লজ্জাবতী লতা। এই কন্যা অবশ্য দাপুটে। পড়াশোনা, ছাত্র রাজনীতিতে উজ্জ্বল উপস্থিতির পাশাপাশি দাপিয়ে বেড়ান ক্রিকেট, ফুটবল মাঠে, নাচ-গান-নাটকের মঞ্চেও।

আরও পড়ুন: শ্লেষ-সঙ্ঘাত নিয়েই ফরাক্কায় ধনখড়

সোনারপুরের মেয়ে অঙ্কিতা মুখোপাধ্যায় ইতিহাসে স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্রী। অঙ্কিতা গড়িয়ার নিভা আনন্দ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি জানান, তাঁর বাড়িতে বাম ঘরানা না থাকলেও স্কুলে কয়েক জন শিক্ষকের কাছে বাম আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। অঙ্কিতা সহ-সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন। বাঁকুড়া জেলা স্কুলের প্রাক্তনী সৌরেন মল্লিক রসায়নের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সাধারণ সম্পাদক পদে জিতেছেন সৌরেন। তিনি অবশ্য জানালেন, বাড়িতে বাম ঘরানাই ছিল। বাবা গৃহশিক্ষক আর মা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। গ্রাম থেকে কলকাতায় এসে প্রেসিডেন্সির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানিয়ে নিতে তেমন অসুবিধা হয়নি সৌরেনের।

সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী অর্থনীতির স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দীপ্রজিৎ দেবনাথের বাড়ি কাঁকিনাড়ায়। ব্যারাকপুর রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের এই ছাত্র বন্ধুবান্ধব ও স্কুলের পরিবেশেই বাম আদর্শের সাহচর্যে এসেছেন। ইংরাজির স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শ্রুতি রায় মুহুরি গার্লস কমন রুম প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন। শ্রুতি এখন বেহালায় থাকলেও বাবার বদলির চাকরির জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি মালদহে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর বাম আদর্শের হাতেখড়ি বাড়িতেই।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে জেলা ও মফস্‌সলের পড়ুয়াদের এই প্রতিনিধিত্বের কারণ খুঁজতে গিয়ে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের তরফে ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বে থাকা সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘গত বিশ বছরে উচ্চশিক্ষার দরজা গ্রাম ও মফস্‌সলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুলে গিয়েছে। তাঁরা উচ্চশিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে দাপট দেখাচ্ছেন।

ছাত্র রাজনীতিতেও তাঁদের প্রাধান্য তাই স্বাভাবিক।’’ এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামপন্থাই যে আশ্রয়, মিমোসারা আবার তা প্রমাণ করে দিলেন। যথাযথ ভোট হলে রাজ্যের অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই এই ফল হবে।’’ এ দিন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ স্ট্রিটের রাস্তায় বিজয় মিছিল বেরোয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Presidency University Students Union Election SFI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE