Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পড়ুয়াদের জেদে ঘেরাও বহাল যাদবপুরে

নিজেদের গড়া রেকর্ড এখনও ভাঙেননি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সাম্প্রতিক অতীতে কখনও ৫০ ঘণ্টা, কখনও ৫২ ঘণ্টা ঘেরাওয়ের নজির তাঁরা গড়েছেন। চলতি পর্বে শুক্রবার বিকেলে ঘেরাও শুরু করে শনিবার রাতেও উপাচার্য এবং এগজিকিউটিভ কমিটি (ইসি)-র সদস্যরা ঘেরাওমুক্ত হননি।

হাতে সকালের চায়ের কাপ। নিজের অফিসে যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তাঁর ঘরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফাইকর্মীরা। অফিসের বাইরে চলছে ছাত্রদের ঘেরাও ও বিক্ষোভ। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

হাতে সকালের চায়ের কাপ। নিজের অফিসে যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তাঁর ঘরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফাইকর্মীরা। অফিসের বাইরে চলছে ছাত্রদের ঘেরাও ও বিক্ষোভ। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১১
Share: Save:

নিজেদের গড়া রেকর্ড এখনও ভাঙেননি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সাম্প্রতিক অতীতে কখনও ৫০ ঘণ্টা, কখনও ৫২ ঘণ্টা ঘেরাওয়ের নজির তাঁরা গড়েছেন। চলতি পর্বে শুক্রবার বিকেলে ঘেরাও শুরু করে শনিবার রাতেও উপাচার্য এবং এগজিকিউটিভ কমিটি (ইসি)-র সদস্যরা ঘেরাওমুক্ত হননি।

পড়ুয়াদের যে দলটি শুক্রবার বিকেল থেকে ঘেরাও-অবস্থান শুরু করেছেন, তাঁদের দাবি, নির্দিষ্ট সময়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, নিয়মমাফিক জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ওই ছাত্র নির্বাচন হওয়ার কথা। গত মঙ্গলবার বৈঠকে বসে ইসি সেই সিদ্ধান্তও নেয়। রাজ্য সরকারের কাছে এ বিষয়ে চিঠি লিখে মতামতও জানতে চান যাদবপুর-কর্তৃপক্ষ। সেই চিঠি পৌঁছনোর আগেই বুধবার শিক্ষা দফতর জানিয়ে দেয়, বিধানসভা ভোটের আগে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা যাবে না। এ কথা জানার পরে শুক্রবার বিকেল থেকে ঘেরাও-অবস্থানে বসেন এক দল পড়ুয়া।

শনিবার কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রদের মধ্যে দফায় দফায় কথা হলেও রাত পর্যন্ত বরফ গলেনি। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তাঁরা চান রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলুন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁদেরও সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হোক। বস্তুত, এই প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফেই পড়ুয়াদের কাছে গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সহ-উপাচার্য আশিস বর্মা এবং আচার্য মনোনীত ইসি সদস্য বিমল রায় নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনার জন্য রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছেন। পড়ুয়াদের দাবির কথাও জানানো হয়েছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী অবশ্য মনে করেন, পড়ুয়াদের দাবি ন্যায্য। তবে সরকার যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা নাকচ করে দেয়, তা হলে কতৃর্পক্ষের কিছু করণীয় থাকে না। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসুর মতে, এই ব্যাপারে সরকারের মত চেয়েই কর্তৃপক্ষ ভুল করেছেন। তবে দাবি আদায়ের জন্য এ ভাবে ঘেরাও করে রাখাটা সমর্থন করা যায় না।

এ দিন রাতে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্যপাল ইতিবাচক মনোভাব নিয়েছেন। উনি কলকাতায় নেই। ফিরলে এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন। আলোচনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাকে মান্যতা দিয়ে তিনি আন্দোলন তুলে নেওয়ার আর্জি জানান পড়ুয়াদের কাছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সবারই পরিবার রয়েছে। কিন্তু পড়ুয়ারা আমাদের সন্তানের মতো। ওদের ফেলে আমরা চলে যেতে পারি না।’’

পড়ুয়াদের বক্তব্য, শিক্ষা দফতর নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। তা হলে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দাবি না জানিয়ে পড়ুয়ারা উপাচার্য বা ইসি-র সদস্যদের ঘেরাও করে রেখেছেন কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন উপাচার্য। নীতি নির্ধারণের জন্য রয়েছে ইসি। তাই উপাচার্য ও ইসি-র কাছেই দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের খবর, এই আন্দোলন সাধারণ পড়ুয়াদের অনেকেই সমর্থন করছেন না। ‘হোক কলরব’ পরবর্তী পর্বে যাদবপুরের ভিতরে তেমন অশান্তি দানা বাঁধেনি। পড়ুয়া ও শিক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, এই আন্দোলন যাদবপুরের সেই স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে বিঘ্নিত করবে। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ছাত্রেরা যে পথে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন, তা সমর্থনযোগ্য নয়। সারা বিশ্বে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রয়েছে। কিন্তু ছাত্রদের একাংশের জন্য তা কালিমালিপ্ত হচ্ছে।’’

বামফ্রন্টের বৈঠকেও এ দিন যাদবপুর প্রসঙ্গ উঠেছিল। ওই অবস্থানে এসএফআই ঢুকে গিয়েছিল। তাই নিয়েই কথা হয়। বৈঠকের নির্যাস, ছাত্র নির্বাচন চাই। কিন্তু সেটা সরকার বন্ধ করেছে। উপাচার্য নন। তা হলে তাঁকে ঘেরাও করে কী হবে! বরং উপাচার্যের ডাকে বৈঠকে বসা উচিত।

প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্র নির্বাচন একটু দেরিতে হলে অসুবিধা কোথায়? আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের যুক্তি, ৩১ জানুয়ারি যাদবপুরের তিনটি ছাত্র সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার ফলে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সংসদগুলি অচল হয়ে প়ড়বে। তাতে পঠনপাঠনের ক্ষতি হবে। এক ছাত্রনেতার বক্তব্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন এবং পরীক্ষাসূচির ব্যাপারে ছাত্র সংসদের মতামত গ্রাহ্য করা হয়। আরও স্পষ্ট ভাবে বললে, ছাত্র সংসদই প্রতি সেমেস্টারের সময় এবং সূচি ঠিক করে। তাই সংসদ অচল হয়ে পড়লে পড়ুয়ারা মতামত জানাতে পারবেন না। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন
উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ভাবে পঠনপাঠন হবে বা পরীক্ষাসূচি কী হবে, পড়ুয়ারা তা ঠিক করবেন কেন? যাদবপুরের ছাত্রনেতাদের কাছে এর সদুত্তর দিতে পারেননি।

পড়ুয়াদের হাতে ঘেরাও হয়ে থাকার সময় পুলিশ ডেকেছিলেন যাদবপুরের প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। তা নিয়ে শুরু হয় ‘হোক কলরব’ আন্দোলন। সেই আন্দোলনের জেরেই সরতে হয়েছিল অভিজিৎবাবুকে। সুরঞ্জনবাবু অবশ্য জানান, ‘‘পড়ুয়াদের ঘেরাও-অবস্থান তুলতে পুলিশ ডাকবেন না তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যায় না। আমরা আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE