Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওরা আড্ডা দেয় বনাম ওঁরা গল্প করেন

নয়া নিয়মেও পুরনো রোগ যাচ্ছে না পড়ুয়াদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয় তাঁরা কলেজে আসেন না, নয়তো ক্যাম্পাসে আড্ডা দেন বলে শিক্ষক মহলের অভিযোগ। কারণ, ‘দাদা-ঘনিষ্ঠ’ পড়ুয়ারা কলেজে না থাকলেও তাঁদের হাজিরা খাতায় উঠে যায়।

 —ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৩০
Share: Save:

নয়া নিয়মেও পুরনো রোগ যাচ্ছে না পড়ুয়াদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয় তাঁরা কলেজে আসেন না, নয়তো ক্যাম্পাসে আড্ডা দেন বলে শিক্ষক মহলের অভিযোগ। কারণ, ‘দাদা-ঘনিষ্ঠ’ পড়ুয়ারা কলেজে না থাকলেও তাঁদের হাজিরা খাতায় উঠে যায়। পড়ুয়াদের একাংশের আবার বক্তব্য, ‘‘কোন ক্লাস কখন হবে, বুঝতেই পারি না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা টিচার্স রুমে গল্প করেন।’’

আশুতোষ কলেজের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক পড়ুয়ার অভিযোগ, ‘‘অনেক শিক্ষিকাই ক্লাস নেন না। ফোন করেও জানা যায় না, তাঁরা ক্লাস নেবেন কি, নেবেন না! বেশি ফোন করলে বিরক্ত হন।’’ অধ্যক্ষকে জানিয়েছেন? তাঁর দাবি, ‘‘জানিয়েও লাভ হয় না।’’ আশুতোষ কলেজের সহ-অধ্যক্ষ অপূর্ব রায় অবশ্য বলছেন, ‘‘পড়ুয়ারা যেমন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, শিক্ষকেরাও করেন। পাত্তা দিতে চাই না।’’

চয়েজ বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) চালু হওয়ার পর কলেজগুলি ৬০ শতাংশ হাজিরা না থাকা পড়ুয়াদের নামের তালিকা প্রকাশ করছে। এখানেই প্রশ্ন, পড়ুয়াদের পর্যাপ্ত হাজিরা থাকে না কেন? গৃহশিক্ষকতার প্রভাব যে বাড়ছে, হাজিরা-অশান্তি থেকে তা আবার স্পষ্ট বলে দাবি শিক্ষা মহলের। বহু অধ্যক্ষেরই অভিযোগ, ক্লাসে না গিয়েও প্রাইভেট টিচারের কাছে সেই বিষয়ে পাঠ পেয়ে যাচ্ছেন পড়ুয়ারা।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের দাবি, শিক্ষকের ক্লাস না নেওয়া পড়ুয়াদের স্রেফ অজুহাত। কারণ, একটি সেমেস্টারে যতগুলি ক্লাস হয়, তার ভিত্তিতে হাজিরার শতাংশ ঠিক হয়। ফলে যে সব ক্লাস হচ্ছে, সেগুলিতে হাজির থাকলেই সমস্যা হয় না। ওয়েবকুটার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজের সাফ কথা, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হওয়ার অর্থ বোঝে ‘সিট বুক’ করা। টাকা দিয়ে একবার সিট বুক হলেই তারা ভাবে, পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার পেয়ে গিয়েছে। এই ধারণার বদল দরকার।’’ কী ভাবে? মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্তের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়কেও উদ্যোগী হতে হবে। আমরা যেমন কলেজের ক্লাসে ক্লাসে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি, প্রচারও চালিয়েছি।’’

যদিও পড়ুয়াদের পাল্টা দাবি, কোন ক্লাস হয়, কোনগুলি হয় না, সেটাই বোঝা যায় না। ওয়েবকুপার সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসুর বক্তব্য, ‘‘শিক্ষকদের হাজিরা কম থাকে বলে মনে করি না। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য তা হলেও হতে পারে। কলেজে সুপারভাইজার থাকা উচিত। যে সমস্ত ক্লাসে শিক্ষক আসেননি কিন্তু পড়ুয়া রয়েছে, সেখানে পড়ুয়াদের হাজিরা নথিভুক্ত করবেন তাঁরা। আর কোর্স শেষ করার দায়িত্ব থাকবে শিক্ষকের উপরে।’’

মহেশতলা কলেজের অধ্যক্ষা রুম্পা দাস অবশ্য পর্যাপ্ত ক্লাস না-হওয়ার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা না থাকাকে দায়ী করছেন। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষকই নেই। এক-একটি বিভাগ চলে পার্ট-টাইম শিক্ষকদের দিয়ে।’’ তবে একাধিক কলেজের অধ্যক্ষ জানান, ইউজিসি বছরে ন্যূনতম ১৮০ দিন, সপ্তাহে ন্যূনতম ৪০ ঘণ্টা, দিনে ন্যূনতম পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস করার কথা বলেছে। অনেক শিক্ষক তা মানেন না। যদিও তার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর অবশ্য বলেন, ‘‘শিক্ষকেরা ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হবেন বলেই আশা করা হয়। শাস্তির প্রসঙ্গ আসবে কেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE