Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছোটদের ছবিতে রক্তাক্ত হাতি

‘বসে আঁকো প্রতিযোগিতা’র বিষয় ছিল ‘তোমার চোখে হাতি’। ভাবা গিয়েছিল, জঙ্গলে বা পাহাড়ের সানুতলে বিচরণরত যূথবদ্ধ হাতির ছবিই আঁকবে ছোটরা।

পড়ুয়ার ছবিতে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত হাতি। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

পড়ুয়ার ছবিতে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত হাতি। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাটাগুড়ি ও গজলডোবা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৮ ০২:২৭
Share: Save:

‘বসে আঁকো প্রতিযোগিতা’র বিষয় ছিল ‘তোমার চোখে হাতি’। ভাবা গিয়েছিল, জঙ্গলে বা পাহাড়ের সানুতলে বিচরণরত যূথবদ্ধ হাতির ছবিই আঁকবে ছোটরা। পাশে ফুটে উঠবে ডুয়ার্সের মনোরম পরিবেশ। কিন্তু তা ঘটল না। ছবিতে ফুটে উঠল ট্রেনের ধাক্কায় মৃত হাতির রক্তাক্ত মৃতদেহ! ফুটে উঠল তড়িদাহত হাতির মৃত্যুযন্ত্রণা! চমকে উঠলেন বিচারক-আয়োজকেরা। ‘তারে জমিন পর’ ছবিতে যেমন ঈশান অবস্তির আঁকা দেখে চমকে উঠেছিলেন শিক্ষক রাম শঙ্কর এবং প্রতিযোগিতার বিচারক ললিতা লাজমি।

জাতীয় হস্তী দিবস উপলক্ষে ডুয়ার্সের হাতি-করিডর এলাকার চার স্কুলে অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই ঘটল এই আপাত-উলটপুরাণ। লাটাগুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সোমনাথ লালা, দিব্যা সরকারেরা একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। তাদের আঁকায় উঠে এসেছে ডুয়ার্সে ট্রেনের ধাক্কায় হাতিমৃত্যুর বিষয়। ছবির রেললাইনে পড়ে রয়েছে হাতির রক্তাক্ত দেহ। লাটাগুড়ি থেকে ২৫ কিমি দূরের গজলডোবা ১০ নম্বর প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির দেবরাজ রায়ের আঁকা ছবিতে হাতির দিকে হিংস্র ভঙ্গিতে ছুটে আসছে এক দল মানুষ। ধান বাঁচাতে লোহার তারে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা রাখেন অনেকেই। সেই তার ছুঁলে মৃত্যু হয় হাতির। উঠে এসেছে সে ঘটনাও।

লাটাগুড়ির ছাত্রী দিব্যার কথায়, ‘‘মালবাজার থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার পথে ট্রেনলাইনের পাশে ট্রেনের ধাক্কায় মরে পড়ে থাকা হাতি দেখেছিলাম। সেই প্রথম মরা হাতি দেখি। আঁকতে গিয়ে সেটাই মনে পড়ল।’’ গজলডোবার দেবরাজের কথায়, ‘‘ধান পাকার সময় মা-বাবা রাত জেগে বসে থাকে। হাতি এলেই আমরা দল বেঁধে হাতি তাড়াতে যাই। সেটাই এঁকেছি।’’

লাটাগুড়ির অঙ্কন শিক্ষক রতন অধিকারী ও পরিবেশপ্রেমী অনুপম মিস্ত্রি সব আঁকা খুঁটিয়ে দেখেছেন। তাঁদের বক্তব্য, যা দেখছে, তাই এঁকেছে পড়ুয়ারা। ডুয়ার্সে হাতির দুরবস্থা এবং বন্যপ্রাণ নিয়ে উদ্বেগই ধরা পড়েছে ছোটদের আঁকায়। আয়োজক সংস্থার সচিব শ্যামাপ্রসাদ পাণ্ডে বলেন, “ছোটরা যে মানুষ-হাতির সংঘাতের জায়গাটা ধরতে পেরেছে, এটা প্রণিধানযোগ্য। ওদের নিয়েই গ্রামে গ্রামে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারব বলেই মনে করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE