পঞ্চায়েতের ৫৮ হাজার আসনের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি ঠিকই। কিন্তু অভিযোগ জমা পড়েছে মাত্র ১,৭৭০টি। সুপ্রিম কোর্টে এই যুক্তি দিতে গিয়ে পাল্টা প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চের প্রশ্ন, এমন নয় তো ভয়ের চোটে কেউ অভিযোগ জানাতেই যাননি?
শাসক দলের বাধায় তাঁদের প্রার্থীরা মনোনয়নই জমা দিতে পারেননি, এই অভিযোগ তুলেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি, সিপিএম। সওয়াল-জবাব শেষ না হওয়ায় সোমবার পঞ্চায়েত মামলার রায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার শুনানির শেষে রায়ের সম্ভাবনা। তবে আজ প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করানোটা নির্বাচন কমিশনেরই সাংবিধানিক দায়িত্ব।
নির্বাচন কমিশনের যুক্তি ছিল, অন্য অনেক রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটেও বহু আসনে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘প্রশ্নটা মনোনয়ন গ্রহণ বা খারিজের নয়। বহু আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়ার।’’
নির্বাচন কমিশনের যুক্তি ছিল, কমিশন রাজনৈতিক দলকে প্রার্থী দিতে জোর করতে পারে না। কিন্তু যেখানেই অভিযোগ মিলেছে, সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যা শুনে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের প্রশ্ন, ‘‘যে সব কেন্দ্র থেকে অভিযোগ আসেনি, সেখানে পরিস্থিতি যাচাই করতে গিয়েছিলেন? হতেই পারে, হিংসার ভয়ে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।’’
কমিশনের সুরেই আজ তৃণমূলের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, বিরোধীরা প্রার্থী দিতে না পারলে শাসক দল কী করবে? কল্যাণ বলেন, ‘‘এর থেকে তো ভাল হত, আমরাই দলের কাউকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিতাম। তা হলে আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের অভিযোগ উঠত না।’’ যা শুনে বিচারপতি এ এম খানউইলকর হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘আপনার বোধ হয় আইনি যুক্তি সব শেষ হয়ে গিয়েছে!’’
আজ সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচন কমিশন যুক্তি দেয়, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতের ৩৪ শতাংশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। হরিয়ানার ৫১%, উত্তরপ্রদেশের ৫৭%, অন্ধ্রের ২৭% আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। বিজেপির আইনজীবী পি এস পাটওয়ালিয়ার পাল্টা যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা ভিন্ন। কারণ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনগুলি সবই শাসক দলের দখলে। অন্য রাজ্যে সমস্যা হলে তারও সমাধান হোক।
নির্বাচন কমিশনের এখনও গলার কাঁটা, ৯ এপ্রিল রাতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা একদিন বাড়িয়েও ১০ তারিখ সকালে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া। আদালতে বিজেপির অভিযোগ, মনোনয়নের সময়সীমা বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তিতেই কমিশন স্বীকার করে নিয়েছিল, বহু জায়গায় হিংসা, মনোনয়নে বাধার অভিযোগ এসেছে। ওই বিজ্ঞপ্তির পরেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের উপরে চাপ তৈরি করা হয়। চাপের মুখে তিনি বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
জবাবে রাজ্যের আইনজীবী বিকাশ সিংহের অভিযোগ, বিজেপি রাজনীতি করছে। নির্দিষ্ট সময়ে পঞ্চায়েত গঠন না হলে অর্থ কমিশনের শর্ত মেনে উন্নয়নের অর্থ আটকে যাবে। অধিকাংশ জেলাতেই পঞ্চায়েত সমিতি বা বোর্ড গঠন সম্ভব হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy