Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রভাবশালী বলেই জামিন পেলেন না মাতঙ্গ

ইনিও সারদা মামলায় অভিযুক্ত। ‘প্রভাবশালী’ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে এঁর বিরুদ্ধেও। তাই সিবিআই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাতঙ্গ সিংহকে জেলেই থাকতে হবে বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

ইনিও সারদা মামলায় অভিযুক্ত। ‘প্রভাবশালী’ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে এঁর বিরুদ্ধেও। তাই সিবিআই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাতঙ্গ সিংহকে জেলেই থাকতে হবে বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী মদন মিত্র সম্প্রতি নিম্ন আদালতে জামিন পেয়েছেন। মদনবাবুর জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই জানিয়েছিল, তিনি প্রভাবশালী। তাই জামিন পেলে তদন্তে বাগড়া দিতে পারেন। পরে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মদনবাবুকে বাড়িতে পুলিশি নজরদারির মধ্যে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সারদা কেলেঙ্কারির আর এক অভিযুক্ত, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের জামিনের আর্জি আজ খারিজই করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

গত ৩১ জানুয়ারি উত্তর-পূর্বের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত মাতঙ্গকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। আজ সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন জানান তিনি। কিন্তু বিচারপতি টি এস ঠাকুর ও ভি গোপালা গৌড়ার বেঞ্চ সেই জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। মাতঙ্গের প্রভাবের কথা বিচার করেই যে তাঁকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না তা স্পষ্ট করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি ঠাকুর মন্তব্য করেন, ‘‘ওঁর তো উপরমহলে খুব ভাল যোগাযোগ রয়েছে।’’ মাতঙ্গের আইনজীবী হারীন রাওয়াল আদালতকে রাজি করাতে যুক্তি দেন, ‘‘না না, তেমন কোনও যোগাযোগ নেই।’’ সঙ্গে সঙ্গে সেই যুক্তি খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি ঠাকুর বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য চাকরি খুইয়েছেন। আর আপনি বলছেন, ওঁর যোগাযোগ নেই!’’ শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয়, সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে মাতঙ্গের সম্পর্কের বিষয়ে তদন্ত শেষ হলে তবেই তিনি জামিনের আবেদন করতে পারবেন। তার আগে নয়।

নরসিংহ রাওয়ের আমলে পাঁচ বছর কয়লা ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মাতঙ্গ। মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার পর উত্তর-পূর্ব ভারতে সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায় নামেন তিনি। সেই কাজে তাঁর প্রধান সঙ্গী ছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রী তথা সাংবাদিক মনোরঞ্জনা সিংহ। মনোরঞ্জনাকেও ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। গা-ঢাকা দেওয়ার আগে সিবিআইকে লেখা চিঠিতে সুদীপ্ত সেন জানান, অসমের একটি চ্যানেল কেনাবেচার জন্য মাতঙ্গ সিংহের সঙ্গে তাঁর ২৮ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি বাতিল হলেও টাকা ফেরত পাননি তিনি। মাতঙ্গের গ্রেফতারের পর অভিযোগ ওঠে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী মাতঙ্গের গ্রেফতারি আটকাতে চেয়েছিলেন। এর পর গোস্বামীকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।

আজ মাতঙ্গের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দেন, সারদা কাণ্ডে ১১ জন গ্রেফতার হয়েছে। তার মধ্যে আট অভিযুক্ত জামিন পেয়েছেন। তা ছাড়া সারদার অর্থলগ্নি ব্যবসার সঙ্গে তাঁর মক্কেলের সম্পর্ক নেই। ‘প্রাইজ চিটস অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন স্কিমস (ব্যানিং)’ আইনে মাতঙ্গের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়নি। এফআইআর, প্রথম চার্জশিট, তার পরে যে সংক্ষিপ্ত চার্জশিট পেশ করা হয়েছে, সেখানেও মাতঙ্গের নাম ছিল না। এর পর দ্বিতীয় সংক্ষিপ্ত চার্জশিটে মাতঙ্গের নাম এসেছে।

তাঁর বিরুদ্ধে একমাত্র অভিযোগ, তিনি নিজের একটি সংস্থার শেয়ার সারদা গোষ্ঠীকে বিক্রি করেছিলেন। সিবিআইয়ের অভিযোগ, এর বিনিময়ে তিনি যে টাকা পান তা সারদার বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা বাজার থেকে সংগ্রহ করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য জানিয়ে দেয়, এখনও তদন্ত বাকি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর বয়ান নিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই মাতঙ্গকে জামিন দেওয়া যাবে না।

আজ অসমের এক সংবাদপত্র সম্পাদক অনিল মজুমদারের হত্যার মামলায় মাতঙ্গ সিংহকে জেরা করতে চেয়ে আলিপুর আদালতে আর্জি জানিয়েছে সিবিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE